করোনাকালেও চাঙা বিদেশনির্ভর অর্থনীতি

বৈদেশিক-মুদ্রাকরোনাকালে বৈদেশিক বাণিজ্য তথা বিদেশনির্ভর অর্থনীতি চাঙা হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে অর্থনৈতিক যে স্থবিরতা ছিল তাও কেটে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য এমনই সুখবর দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, বিদেশ-নির্ভরতার সবগুলো সূচক এখন ঊর্ধ্বমুখী। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এই করোনা মহামারির পরিস্থিতিতে আমদানি, রফতানি, রেমিট্যান্স তথা বৈদেশিক বাণিজ্য এখন তুঙ্গে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে রফতানি আয় ও আমদানি ব্যয় প্রায় সমান হয়েছে। এর ফলে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতিও প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) হালানাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে আমদানি বাণিজ্যে খরচ হয়েছে ৩৯১ কোটি ২০ লাখ (৩.৯১ বিলিয়ন) ডলার। একই সময়ে পণ্য রফতানি করে আয় হয়েছে ৩৮২ কোটি ৬০ লাখ (৩.৮৩ বিলিয়ন) ডলার।

যদিও গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য রফতানি থেকে ৩৭৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। আর আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছিল ৪৮৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

এদিকে করোনা মহামারির মধ্যেই গত মাসে ১৯৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছর আগস্টে রেমিট্যান্সের পরিমাণ  ছিল ১৪৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা।

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যেও চলতি বছরের জুলাই ও আগস্টে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।’ একইভাবে জুলাই-আগস্টে রফতানি বাণিজ্যে দেশে ঐতিহাসিক রেকর্ড সৃষ্টি হবে বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডএস) গবেষক জায়েদ বখত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রবাসী আয় যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে রফতানি আয়। তবে রফতানির সঙ্গে আমদানি বাণিজ্যেরও যোগসূত্র রয়েছে।  করোনার মহামারির প্রকোপের কারণেই শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি), শিল্পের কাঁচামালসহ অন্যসব পণ্য আমদানি কমেছে।’

এদিকে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছর শুরু হয়েছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকে উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১০৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাইয়ে সেই ঘাটতি হয়েছে মাত্র ৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

এর আগে গত এপ্রিল মাসে রফতানি আয়ের চেয়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেশি এসেছিল। ওই মাসে পণ্য রফতানি করে মাত্র ৫২ কোটি ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। ওই মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল দ্বিগুণেরও বেশি ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলার।

করোনা মহামারির মাঝেও ব্যালেন্স অব পেমেন্টে বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে অর্থবছর শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর। তিনি বলেন, ‘প্রবাসী আয়, রফতানি আয় ও বিদেশি ঋণ সহায়তা বাড়ার কারণে এই কঠিন সময়েও লেনদেনের ভারসাম্যে স্বস্তি নিয়ে বছর শুরু করেছে বাংলাদেশ। তবে এই উদ্বৃত্ত কতদিন থাকবে সেটা নিয়ে রয়েছে বড় প্রশ্ন।’

তিনি বলেন, ‘অনেক প্রবাসী কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। অনেকে তার শেষ সঞ্চয়টুকু দেশে পাঠাচ্ছেন। ফলে আগামী দিনগুলোতে রেমিট্যান্সে খুব ভালো খবর আসবে বলে মনে হয় না। একইভাবে রফতানির ক্ষেত্রেও  শঙ্কা রয়েছে। ’ তিনি আরও  বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় গত কয়েক মাসে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে  বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা।’

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও কমেছে। গত বছরের জুলাই মাসে এ খাতের ঘাটতি ছিল ৫১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এই জুলাইয়ে তা কমে ৩৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার হয়েছে।