বেসরকারি পাটকলও বন্ধের শঙ্কায়

 

পাটকলপাট উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়া ও কাঁচা পাট রফতানি হয়ে যাওয়ার কারণে এবার সরকারি পাটকল করপোরেশনের পর বেসরকারি পাটকলগুলোতেও বন্ধের ঘণ্টা বাজছে। উৎপাদক এবং রফতানিকারকরা বলছেন, পাঁচ কারণে এবার পাট উৎপাদন আগের মতো হয়নি। উৎপাদন কম হওয়ার পরও যদি সেই কাঁচা পাট রফতানির মুখে পড়ে তাহলে ১২ মাস মিল চালানো অসম্ভব হয়ে যাবে। তাদের দাবি, পৃথিবীর আর কোনও দেশ কাঁচা পাট বিক্রি করে না—এ কারণেও কাঁচা পাট বিক্রিতে নিরুৎসাহিত করা উচিত। কাঁচা পাট না পাওয়ায় বিদেশ থেকে আমদানি করেও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা পাটকল চালু রাখতে পারবেন না।

বাংলাদেশ জুটমিলস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পাট বিষয়ক কমিটির প্রাক্কলন অনুযায়ী, এ বছর কাঁচা পাটের উৎপাদন ন্যূনতম ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ কম হবে। তাদের হিসাবে, বিজেএমসি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও এ বছর পাটের দাম বেশি। কাঁচা পাটের সরবরাহ ও চাহিদার ব্যাপক তারতম্যের কারণে পাটের দাম এত বেশি এবং তা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

যে পাঁচ কারণে পাটের উৎপাদন ভালো হয়নি

করোনাকালে লকডাউনের কারণে শ্রমিকের অভাবে পাটক্ষেতে দুবার নিড়ানি দিতে না পারা, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে ২০/২৫ দিন বৈরী আবহাওয়া থাকায় পাট লম্বা ও মোটা হতে পারেনি। উপরন্তু আগাম বন্যায় উত্তরবঙ্গে ক্ষেতের কাঁচা পাট ডুবে গেছে। বন্যার কারণে আগাম পাট কেটে ফেলতে হওয়ায় পাট গাছের বৃদ্ধি প্রায় ২.৫ ফুট কম হয়েছে।

বেসরকারি পাটকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুটমিলস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল ও পাট রফতানিকারক এ বারিক খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পাঁচ কারণে পাটের উৎপাদন কম। বছরের শুরুতে শিলাবৃষ্টির ফলে ফরিদপুর এলাকার পাট নষ্ট হয়েছে। এরপর আছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। সেটির কারণে পাট শুয়ে পড়েছিল। এরপর বন্যায় পাট ডুবে গেছে। ফলে যতটা লম্বা হওয়ার কথা তা হতে পারেনি। আর সর্বশেষ করোনার ছোবলের কারণে ঠিক সময়ে শ্রমিক পাওয়া যায়নি। ভারত থেকে উন্নত বীজ না আনতে পারাকেও এর অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিজেদের বীজ দিয়ে উৎপাদন করায় উন্নত জাতের পাট এ বছর পাইনি।

রফতানিকারকদের জন্য আছে প্যাকেজ

পাটকল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা বলছেন, যারা এই পরিস্থিতিতেও কাঁচা পাট বিক্রি করবেন তারা নিজেরাও কীভাবে সেটি না করেও লাভবান হতে পারেন সেদিকটিও আমরা ভেবে দেখছি। তিনি বলেন, এক কেজি কাঁচা পাট বিক্রি করে যে টাকা তারা পান, উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে পণ্যভেদে ৫শ’ থেকে ৫০০০ ডলার বেশি পাবেন। এই প্রক্রিয়ায় আমরা রফতানিকারকদের নিরুৎসাহিত করতে চাই।

ব্যবস্থা না নিলে ফেব্রুয়ারিতে মিল বন্ধ

পাটকল মালিকদের সংগঠনের পাট কমিটির অগ্রিম হিসাব অনুযায়ী ২০২০-২১ সালে ৫০ থেকে ৫৫ লাখ বেল পাট উৎপাদন হয়েছে। যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় ২০ লাখ বেল কম। মাত্র ৫০ লাখ বেল কাঁচা পাট দিয়ে আমাদের পাটকলগুলোর সারা বছরের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। তার ওপর কাঁচা পাট রফতানি যদি নিরুৎসাহিত রাখা না হয় তবে কাঁচা পাটের অভাবে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির পরেই আমাদের পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।

অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বারিক খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কোভিড-১৯-এর কারণে বিশ্ব অর্থনীতি চরম হুমকির মধ্যেও রফতানি খাতগুলোর মধ্যে পাট দ্বিতীয় স্থানে। এমন পরিস্থিতিতে কাঁচা পাট রফতানি নিরুৎসাহিত না করলে অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব হবে না।