আবার লকডাউন, এবার অর্থনীতির কী হবে?

করোনা পরিস্থিতি ক্রমে খারাপের দিকে যাওয়ায় সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। শনিবার (৩ এপ্রিল) এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউনের ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এবারের লকডাউন শতভাগ কার্যকর হওয়া জরুরি বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তবে অর্থনীতিতে আবার একটা ধাক্কা লাগার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা।

গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)-এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘লকডাউন হলে অর্থনীতির ক্ষতি হবে, তবুও কঠোর লকডাউন দরকার। জীবন আগে, তারপর জীবিকা। করোনা প্রতিরোধে এই মুহূর্তে লকডাউনই একমাত্র ওষুধ।’

তিনি আরও বলেন, ‘এর ফলে অনেকে কর্মহীন হবে। ব্যবসারও ক্ষতি হবে। তবে আগের মতো যেন দলবেঁধে ঢাকা না ছাড়ে সে জন্য শ্রমিক ও সীমিত আয়ের মানুষদের জন্য কার্যকর কিছু করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘লকডাউন দিলেও খাদ্যপণ্যের সরবরাহ চালু রাখতে হবে। ঢাকায় যাতে চাল ও সবজি আসতে পারে, সেই ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। ব্যাংকে গিয়ে সরাসরি লেনদেন বন্ধ হলেও মানুষের হাতে টাকা পৌঁছানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে।’

‘করোনাভাইরাসের প্রথম ধাক্কা এখনও কাটেনি। ফলে সব খাতেই লকডাউনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিছুদিন পরই বোরো ধান কাটা শুরু হওয়ার কথা। কৃষক যাতে উৎপাদন করতে পারে সেদিকে সরকারকে সজাগ থাকতে হবে।’ যোগ করেন ড. মনসুর।

এদিকে অর্থনীতির গতি ঠিক রাখতে গার্মেন্ট ও কারখানাগুলো চালু রাখা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন গার্মেন্ট মালিকরা। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘গতবছর গার্মেন্টসহ সামগ্রিক রফতানি খাত লকডাউনের আওতামুক্ত ছিল। আশা করছি, এবারও সরকার একই সিদ্ধান্ত নেবে।’


রফতানি খাত কেন আওতামুক্ত থাকবে? এর ব্যাখ্যায় সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘তিন-চার মাস আগে যেসব অর্ডার এসেছে সেই পণ্যগুলো তৈরি করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানা ও সর্বোচ্চ সতর্ক থাকায় গতবার গার্মেন্ট খাতে দুর্যোগ দেখা দেয়নি। এ বছরও হবে না।’

অবশ্য গার্মেন্ট সেক্টর চালু রাখা নিয়ে আজ শনিবার (৩ এপ্রিল) বিকালে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন বিজিএমইএ’র সভাপতি ড. রুবানা হক।

লকডাউনে ব্যাংক কীভাবে চলবে তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে কিছু বলতে পারছেন না ব্যাংকের ব্যবস্থাপকরা।

তবে লকডাউন ঘোষণার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বৈঠকে বসেছেন। এখনও তারা কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি বলে জানান ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম।

ব্যাংকগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে বলবে, ব্যাংকগুলো সেভাবেই চলবে। এ প্রসঙ্গে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা আশা করছি, সোমবার থেকে যেহেতু লকডাউন, তাই আগামীকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেবে।’

এ প্রসঙ্গে পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘লকডাউন থাকলে ব্যাংকে গ্রাহক আসবে কীভাবে? ফলে সাত দিন ব্যাংক বন্ধ রাখা যেতে পারে। সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে সীমিত আকারে কিছু কিছু শাখা চালু রাখা যেতে পারে।’

জানা গেছে, দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো না খুলতে এবং কোনও পাবলিক পরীক্ষা না নিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। মার্চের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সম্পূর্ণ লকডাউন দেওয়ার প্রস্তাবও রাখেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।