গরুর মাংস এখন গরিবের নাগালের বাইরে

রমজান মাসে রাজধানীতে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে নির্ধারিত ৭০০ টাকা কেজি দরে। সোমবার (২ মে) ঈদের আগের দিনও ঢাকায় এ দামেই গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে, যা এখন রীতিমতো গরিব মানুষের নাগালের বাইরে।

জানা গেছে, চড়া দামের কারণে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো গরুর মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য হারিয়েছেন। ফলে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তরাই এখন গরুর মাংসের মূল ক্রেতা। এক কেজি মাংস ৭০০ টাকা দিয়ে কেনার সামর্থ্য রাখেন, এমন মানুষের সংখ্যাও কমছে। কারণ, চার থেকে পাঁচ সদস্যের পরিবারের জন্য এক কেজি মাংস কেনা বৃথা। বিক্রেতারাও এখন আর এক কেজি মাংস বিক্রি করতে চান না। এ ক্ষেত্রে কম করে দুই কেজি মাংস নিলে খরচ পড়ে ১৪শ’ টাকা। কজনই বা এই টাকা ব্যয় করে মাংস কিনতে পারেন। মাঝারি আয়ের চাকরিজীবীদের রান্নাঘরেও এখন গরুর মাংসের প্রবেশ ঘটে কোনও উপলক্ষকে কেন্দ্র করে। আর দরিদ্র পরিবারে পবিত্র ঈদুল আজহা ছাড়া গরুর মাংস মুখে তোলা এখন দুঃসাধ্য।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ রয়েছে। খামারিরা এখন গরু বিক্রি করতে চান না। কারণ, তিন মাস পরেই কোরবানি। তারা খামারে লালন-পালন করা গরু বিক্রির জন্য কোরবানির বাজার ধরতে চান। এ কারণে বাজারে গরুর সরবরাহ কমে গেছে। অপরদিকে দেশের অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে গো-খাদ্যের দামও বেড়েছে। শুষ্ক ঋতু হওয়ায় এখন লতাপাতা, ঘাস বা খড় নেই। খামারে লালন করা গরুর জন্য দোকান থেকে কেনা খাদ্যই ভরসা। ফলে গরুর দামও বেড়েছে। আর গরুর দাম বাড়লে মাংসের দাম বাড়াটা খুবই স্বাভাবিক।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, দেশে এখন গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৮৫ লাখের মতো। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ২০১৮ সালে হিসাব দিয়েছিল, তখন গরুর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৩৯ লাখ।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর হিসাবে, ঢাকায় ২০১৪ সালে এক কেজি গরুর মাংসের গড় দাম ছিল ৩০০ টাকা। ২০১৮ সালের সর্বশেষ হিসাবে গরুর মাংসের গড় দাম ছিল প্রতি কেজি ৫২৭ টাকা। ক্যাবের তথ্যমতে, গত অক্টোবরে গরুর মাংসের গড় দাম ছিল প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা।

ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হওয়ার পর গত চার বছরে বাংলাদেশে অনেক গরুর খামার হয়েছে। তরুণদের অনেকে বড় খামার করে উদ্যোক্তা হয়েছেন। সরকার দাবি করছে, নিজেদের গরুতেই ঈদুল আজহার বিপুল চাহিদা মিটছে। তবে তা দিয়ে বছরের অন্য সময়ের চাহিদার কতটুকু মিটছে, তা স্পষ্ট নয়।