নীলক্ষেতে অগ্নিকাণ্ড

‘কোনোরকমে পেটে-ভাতে বেঁচে আছি’

বইপ্রেমী ও শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত ও জনপ্রিয় জায়গা নীলক্ষেত বই মার্কেট। সারা দিন বইপ্রেমীদের আনাগোনা আর বইয়ের দরকষাকষিতে সরগরম থাকে নিউমার্কেট থানার এই এলাকা। কিন্তু গত ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় হঠাৎ থমকে গিয়েছিল বই মার্কেট। কাকতালীয়ভাবে লাগা অগ্নিকাণ্ডে ছাইভস্ম হয়ে যায় বইপুস্তক। তাতে কপাল পোড়ে বইকে উপজীব্য করে বাঁচা মানুষগুলোর, অন্তর পোড়ে বইপ্রেমীদের।

দেশের সবচেয়ে বড় বইয়ের মার্কেটে এমন অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন বই বিক্রেতারা। তাদের চোখেমুখে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। তবে তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তকে চাপা দিয়ে আবার শুরু করেছেন নতুন যাত্রা।

সেদিনের সেই দুঃসহ ঘটনা এখনও গভীর দাগ কেটে আছে ব্যবসায়ীদের মনে। বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে চাইলে অনেক বই ব্যবসায়ী অস্বীকৃতি জানান। কারণ, সেই ভয়ানক ক্ষণকে তারা মনে করতে চান না।

তবু কয়েকজন বই ব্যবসায়ীর মনের কথা জানতে কথা হয়। তারা জানান, অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্ব হারানোর ক্ষতি শিগগিরই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। আগের অবস্থায় ফিরতে বা লাভের মুখ দেখতে কারও পাঁচ বছর, কারও হয়তো ১০ থেকে ১২ বছর লাগবে।

Book Market

খাজা বুকস অ্যান্ড স্টেশনারির স্বত্বাধিকারী ইমরান নাজির বলেন, ‘কতটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি, এটা বললে ভুল হবে। যা ক্ষতি হয়েছে, তা আরও ১০ বছরেও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না। বিশেষ করে আমার ক্ষতি হয়েছে ২২ লাখ টাকার মতো। এ টাকা আবার লাভ করা চাট্টিখানি কথা না। এখন আবার আমরা ধারদেনা করে, ঋণ নিয়ে দোকান খুলেছি। দোকান এভাবে রাখলে তো দোকান মালিক দু-এক মাসের বেশি চালাবেন না। বই বেচে এখন যে লাভ পাই, তা ঋণ শোধ করতেই চলে যায়। এখন আমরা কোনোরকম পেটে-ভাতে বেঁচে আছি।’

অর্কিড পাবলিকেশন্সের মালিক রাসেল রহমান বলেন, আগুনে যে ক্ষতি হয়েছে, এখন পর্যন্ত তার ২০ শতাংশ হয়তো কাটিয়ে উঠেছি। তবে সম্পূর্ণ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আরও ১০ থেকে ১২ বছর সময় লাগবে।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দেওয়ান বুক স্টোরের মালিক এখনও বিমর্ষ। ঘটে যাওয়া নারকীয় সেই শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি এখনও। ক্ষতি কতটুকু কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‌‘এগুলো আদৌ কখনও পূরণ হওয়ার নয়। কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা বলে আর লাভ কী! সেগুলো চিন্তা করলে দুঃখ আরও বেড়ে যায়।’

কবির বুক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী মুনির হোসেন বলেন, ‘তার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ লাখ টাকা। তিনি বলেন, যে ক্ষতি হয়েছে তা আরও ১০ বছরেও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। এখনও তেমন কোনও কিছুই কুলিয়ে উঠতে পারিনি।’