ঈদের আগে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন ধরনের মসলার দাম বাড়ছিল রাজধানীতে। ঈদের ঠিক আগে আগে সেই দাম বাড়ার পালে আরও জোর হাওয়া লেগেছে। পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে সব মসলার দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন দোকানদাররা। জিরা, এলাচ, দারুচিনি, গোল মরিচ, সাদা মরিচ, লবঙ্গ থেকে শুরু করে সব ধরনের মসলা কেজিতে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, মসলা কিনতে মুদি ও মসলার দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় জমেছে। মসলার দাম বেশি কেন এ নিয়ে বাগবিতণ্ডাও করছেন অনেক ক্রেতা।
ক্রেতাদের অভিযোগ, দুই দিনের ব্যবধানে মসলার দাম এক দেড়'শ টাকা বাড়িয়েছে বিক্রেতারা। আবার কেউ কেউ বলছেন, মূল্য তালিকা থেকেও অনেক বেশি দামে মসলা বিক্রি করা হচ্ছে। মূল্য তালিকায় জিরার দাম দেওয়া ৯৪০ টাকা, সেখানে বিক্রি করছে ৯৯০ টাকা দরে। এছাড়া অন্যান্য মসলার দামের সঙ্গে মূল্য তালিকায় দেওয়া দামের সঙ্গে কোনও মিল নেই।
মঙ্গলবার (২৭ জুন) বিকালে পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার, চকবাজারসহ আরও কয়েকটি বাজার ঘুরে মসলার দরদাম দেখা হয়। সেখানে জিরা এক কেজি ৯৮০ থেকে ১০২০ টাকা, এলাচ এক কেজি ১৬০০-২৫০০ টাকা, দারুচিনি (চায়না) এক কেজি ৪২০-৪৫০ টাকা, দারুচিনি (ভিয়েতনাম) ৪৮০-৫০০ টাকা, কিশমিশ এক কেজি ৪০০-৪৫০ টাকা, লবঙ্গ ১৬০০ টাকা, কালো গোল মরিচ ৮০০, সাদা মরিচ ১২০০ টাকা, আলু বোখারা ৫২০ টাকা, কাঠবাদাম ৮০০ টাকা, কাজু বাদাম ১২৫০ টাকা এবং পেস্তাবাদাম ৩০০০-৩২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কিছু কিছু দোকানে এর থেকেও বেশি দামে মসলা বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে মসলা কিনতে এসেছিলেন আফরোজা বেগম। পেশায় শিক্ষক এই নারী বলেন, মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে কেজিতে জিরা প্রায় ১০০ টাকা বেড়েছে। কিছু দিন আগেও আধা কেজি জিরা নিয়েছি ৪৪০ টাকা দিয়ে। ভাবলাম গরুর মাংসসহ অন্যান্য অনেক কাজেই তো জিরা একটু বেশি লাগবে। তাই আরও কিছু কিনে রাখি। এখন জিরা আধা কেজির দাম বলছে ৪৯০ টাকা। দারুচিনি-এলাচের দামও ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। মানে যে যেভাবে পারছে দাম বাড়াচ্ছে। কেউ কিছু বলছে না। কারও কোনও মাথাব্যথা নেই। দোকানদারদের কিছু বললে বলে কেনা বেশি পড়ে। তাই আমরাও একটু বেশি দামে বিক্রি করি।
তিনি আরও বলেন, বাজার মনিটরিংয়ের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট একটা সেল থাকা দরকার। যারা বাজারে প্রতিনিয়ত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম মনিটরিং করবে। যারা অনর্থক বেশি দামে পণ্য বিক্রি করবে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। এভাবে কোনও প্রতিকার তৈরি না করে বরাবরের মতো সু্যোগ দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের মাথায় তুলে রাখছে। আজ আমরা সাধারণ জনগণ তাদের হাতে জিম্মি। তারা যেভাবে পারছে আমাদের থেকে ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছে।
অরিত্র নামের আরেকজন ক্রেতা বলেন, জিরা এখন একটু বেশি বেচাকেনা হয়। এই সুযোগে দোকানদাররা যে যেভাবে পারছে সেভাবে দাম নিচ্ছে। দোকানে কোনও মূল্য তালিকা নেই। থাকলেও আমাদের দেখাতে রাজি না। বাজারে এসেছি জিরা, এলাচ আর লবঙ্গ কিনতে। ঈদের আগে আসছি এ জন্য মনে হয় দাম একটু বেশি। ভাবলাম এক দুই দোকান একটু ঘুরে দেখি। ওমা! দেখি একেক দোকানে জিরার একেক দাম। কেউ কারও কথা শুনছে না। দোকানিরা বলছে আমারটা খাঁটি ইন্ডিয়ান, এজন্য দাম বেশি। ওই দোকানেরটা সুবিধা না। শেষ মুহূর্তে নিরুপায় হয়ে ক্রেতারাও কিনতে বাধ্য হচ্ছে। না কিনে যাবে কোথায়!
এই ক্রেতা আরও বলেন, দাম যাই হোক, সব দোকানে এক দাম হওয়া উচিত। আর মূল্য তালিকা দেখানো উচিত। যেসব পণ্যের দাম ঈদকে কেন্দ্র করে বাড়ানো হয়েছে ভোক্তা অধিকারের উচিত অভিযান চালিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, জরিমানা করা। তাহলে তাদের শিক্ষা হবে।
মৌলভীবাজারের মসলা বিক্রেতা মো. ওয়াসিম বলেন, গত তিন দিনের ব্যবধানে শুধু জিরায় কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। অন্য মসলার আমরা খুচরা বিক্রেতা। আমাদের পাইকারি কেনা বেশি পড়ে, তাই আমরাও খুচরা একটু বেশি দামে বিক্রি করছি। এখন ক্রেতারা আমাদের ওপর চড়াও হয়ে কোনও লাভ নেই। আমরা যে দামে কিনি তার থেকে সীমিত লাভে বিক্রি করি। কারণ, যত বেশি বিক্রি তত বেশি লাভ। ক্রেতাদের সঙ্গে ঝামেলা করে তো আমাদের লাভ নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৌলভীবাজারের এক দোকানদার বলেন, দাম হঠাৎ বেড়েছে। এতে আমাদের হাত নেই। দাম নিয়ে কোনও কাস্টমারের সঙ্গে তর্কবিতর্ক করছি না। কারণ, কাস্টমার হচ্ছে লক্ষ্মী। অনেকে বলছে দাম বেড়েছে, কিন্তু না বাড়েনি। আমরা আগের দামেই সবকিছু বিক্রি করছি। তবে হ্যাঁ, কিছু কিছু দোকানে অতিরিক্ত দাম নিচ্ছে এটা সত্যি।
মূল্য তালিকা দেখানো হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে এ দোকানের বিক্রেতা বলেন, হ্যাঁ তালিকা আছে, এই যে দেখেন ( নিচ থেকে উঠিয়ে এনে দেখান)। আমরা তালিকা ওপরেই রেখেছি। কাজ করতে গিয়ে হয়তো দোকানের স্টাফ নিচে রেখেছে।
ছবি: প্রতিবেদক।
আরও পড়ুন-