সরকার নির্ধারিত দামের ডিম আকারে ছোট

ডিমের বাজারে কারসাজি ও সিন্ডিকেট বন্ধে ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এর ফলে খুচরো বাজারে ব্যবসায়ীরা ডজনপ্রতি ডিমের দাম ১৪৪ টাকার বেশি বিক্রি করতে পারবেন না। তবে ব্যবসায়ীরা এই নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না। বরং ডিমের আকারের ফন্দি এঁটে ডজনপ্রতি ১৫৫ টাকায় বিক্রি করছেন। 

শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মিরপুরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়— ব্যবসায়ীরা ডিমের আকারভেদে ছোট, মাঝারি ও বড় এই তিন ভাগে বিক্রি করছেন। সরকার নির্ধারিত ডিম কিনতে হলে আকারে ছোট ডিম কিনতে হবে। যা ডজনপ্রতি পড়বে ১৪৮ টাকা অর্থাৎ প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা। মাঝারি আকারের ডিম ডজনপ্রতি ১৫০ টাকা, যা  প্রতি পিস ১২ টাকা ৫০ পয়সা পড়ে। অন্যদিকে আকারে বড় ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকা ডজনে। এতে প্রতি পিস ডিমের দাম পড়ে প্রায় ১৩ টাকা করে। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই ১০ টাকার ব্যবধানে ক্রেতারা ১৫৫ টাকা ডজনে কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন। এছাড়া এলাকার দোকানগুলোতে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হয় ১৪ টাকা করে, আর ডজন ১৬০ টাকা।

আকার অনুযায়ী ডিম বিক্রির কারণ জানতে চাইলে মিরপুর বাউনিয়াবাঁধ বাজারের ডিম বিক্রেতা সোহেল বলেন, প্রতি পিস ডিম পাইকারদের থেকে যাতায়াত খরচসহ কিনি ১১ টাকা ৪০ পয়সা করে। দোকান পর্যন্ত দিয়ে যায় তারা। এর মাঝে কিছু ডিম ভাঙ্গা পড়ে। আবার ক্রেতারাও কিনতে এসে কিছু ডিম ভেঙ্গে রেখে যায়। তখন এসব ডিম ৫ থেকে ১০ টাকা বিক্রি করতে হয়। এতে আমার যে লস হয় তা সরকারি দাম ১২ টাকায় বিক্রি করে কীভাবে লাভ উঠাবো বলেন?

তিনি বলেন, শুধু ভাঙ্গা ডিম না, অধিকাংশ ডিমই এখন আকারে ছোট। কিন্তু যারা কিনতে আসেন তারা বেছে বড় ডিমগুলো নিয়ে যায়। তখন ছোট ডিমগুলো রয়ে গেলে তা কেউ নিতে চায় না। অন্য দোকানে চলে যায়। তাই ছোট-বড় বেছে রাখছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিরপুর ১১-এর আরেক ডিম বিক্রেতা বলেন, পাইকারি পর্যায়ে যদি ১১ টাকা পিস হিসেবে ডিম বিক্রি হয় গাড়ি ভাড়াসহ ন্যায্য দামে ডিম বিক্রি করে লাভ করা যায়। আবার যদি প্যাকেটে করে ডিম দিয়ে যায় তাহলে কাস্টমারদের আর বাছাবাছির সুযোগ নাই। কিছুদিন এক কোম্পানির থেকে প্যাকেটের ডিম রাখতাম কেউ কিনতে চাইতো না। কাস্টমারের কথা টাকা দিয়ে কিনুম নিজে বাইচ্ছা নিমু। তখন বাছতে গিয়া ডিম ফাটায়া ফেলে৷ সেই ডিম আবার নিতে চায় না কত যে কাহিনী। তাই এত ঝামেলার দরকার নাই। নিজেরাই বেছে রাখি।

এদিকে ১০ টাকার ব্যবধানে ক্রেতারা ছোট ডিম না কিনে বড় ডিমের প্রতি আগ্রহ দেখান।

মিরপুর ১১ নম্বর বাজারে ডিম কিনতে আসা ক্রেতা আবদুল বশির বলেন, এমনিতেই তো ডিমের দাম বেশি। সেইখানে ১০ টাকার জন্য ছোট ডিম নিয়া লাভ কী।

এদিকে ডিমের দাম নাগালের বাইরে হওয়ায় ভাঙ্গা ডিম কিনতে আসা বয়স্ক ক্রেতা আকলিমা আক্তার বলেন, 'আগে কিছু না থাকলে ডিমের তরকারি করাতাম। এখন তরকারি বাদ ডাক্তার প্রত্যেকদিন একটা কইরা সিদ্ধ ডিম খাইতে কইছে সেইটাই পারি না। ভাঙ্গা ডিম এটা পরে খামু।