গত সপ্তাহের তুলনায় রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রায় প্রতিটি সবজিরই দাম বেড়েছে। দাম বেশি বাড়ার তালিকায় আছে বরবটি, বেগুন, কাঁকরোল, করলা। এদিকে চালের দামও ঊর্ধ্বমুখী—কেজিপ্রতি ২ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে ডিম ও মুরগির দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
শুক্রবার (২৭ জুন) পুরান ঢাকার শ্যামবাজার, রায় সাহেব বাজার, নয়াবাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, বাজারে প্রতিকেজি পটোল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়, গোল বেগুন প্রতিকেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, লম্বা বেগুন প্রতিকেজি ৬০ টাকা, লাউয়ের পিস ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পেঁপে প্রতিকেজি ৪০ টাকা, কুমড়া পিসপ্রতি ৫০ টাকা, বরবটি প্রতিকেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও বরবটি প্রতিকেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কচুর লতি প্রতিকেজি ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, ঝিঙা প্রতিকেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোল প্রতিকেজি ৮০ টাকা, করলা প্রতিকেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায়, টমেটো প্রতিকেজি ৮০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতিকেজি ৫০ টাকা, কাঁচা কলা প্রতি হালি ৪০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ প্রতিকেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পুরান ঢাকার নয়াবাজারে কাঁচা সবজি কিনতে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী সিদ্দিক উল্লাহ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত সপ্তাহের বাজারের তুলনায় সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহের যে সবজি ৬০ টাকা ছিল, সেই সবজি আজ ৭০ টাকা। আবার কিছু কিছু সবজি ১০০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে।
এদিকে ঈদের পর থেকেই চালের বাজারও চড়া। বর্তমানে খুচরা মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) মানভেদে কেজি প্রতি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে সরু চালের মধ্যে জিরাশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭৪ থেকে ৭৮ টাকা, মিনিকেট ৮২ থেকে ৮৫ টাকা এবং কাটারিভোগ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অলিগলির ছোট ছোট মুদি দোকানগুলোতে চালের দাম এর থেকেও কিছুটা বেশি দেখা গেছে।
চালের ঊর্ধ্বমুখী দাম ক্রেতাদের মাঝে অস্বস্তি সৃষ্টি করলেও মুরগি, ডিমের দাম ক্রেতাদের স্বস্তি দিয়েছে। মুদিপণ্যগুলোর দামেও তেমন বৃদ্ধি পায়নি। পেঁয়াজ, আলু ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীও আগের দামে বিক্রি হচ্ছে।
রায় সাহেব বাজারে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতিকেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। যেখানে ঈদের আগেও তা ছিল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। ডিমের ডজন ১২০ থেকে ১২৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। একইসঙ্গে সোনালি মুরগির দামও কিছুটা কমেছে। বর্তমানে প্রতিকেজি সোনালি মুরগি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মাছের বাজারে উল্লেখযোগ্য কোনও পরিবর্তন দেখা যায়নি। বড় ইলিশসহ অন্যান্য মাছের দাম তুলনামূলক বেশি।
রায় সাহেব বাজারে গৃহিণী তাহমিনা আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চালের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে। কিছু দিন আগেই তো কৃষক ধান বিক্রি করেছে। তাহলে এখন কেন চালের দাম বাড়তি, সেদিকে সরকারের নজর দেওয়া দরকার। সবজির দামও কিছুটা বেড়েছে।
এই ক্রেতা আরও বলেন, ঈদের পর থেকে একটা বিষয়ে স্বস্তি লাগছে, সেটা হচ্ছে—সবসময়ই ব্রয়লার মুরগির দাম ২০০ টাকার কাছাকাছি থাকে। কিন্তু এখন দেড়শ’ টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। যদি সবসময় এমন দাম থাকতো, তাহলে আমাদের মতো মধ্যবিত্তের জন্য কিছুটা স্বস্তি কাজ করতো।
পুরান ঢাকার নয়াবাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা হারুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে মিল মালিকরা বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা পর্যন্ত চালের দাম বাড়িয়েছে। আমাদের বাড়তি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। তাই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকার যদি মিল মালিকদের জবাবদিহির আওতায় আনতে পারে, তাহলে দাম বৃদ্ধির রহস্য উন্মোচন করা যাবে।