দাম কমেছে সবজির, তবে পেঁয়াজের ‘লং জাম্প’

গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনায় গেলে বাজারে প্রায় সব সবজির দামই কমে এসেছে। কিন্তু একই সময়ের তুলনায় পেঁয়াজের দামে যেন লং জাম্প! এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে পেঁয়াজের দাম এক লাফে ৩০ টাকা বেড়ে গেছে। গত শুক্রবার যে মানের পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, তা আজ ১২০ টাকা। যে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিলো ১০০ টাকায়, সেটা আজ ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রমজানের আগে পেঁয়াজের দাম কমার কোনও সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। বরং তারা বলছেন, দাম আরও বেড়ে যেতেও পারে।

শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচা বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় বর্তমান বাজারের পরিস্থিতি। সবজি নিয়ে স্বস্তির কথা জানালেও পেঁয়াজের দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।

 কমেছে আদা ও রসুনের দাম

আজ লাল ও সাদা আলু ৩৫ টাকা, দেশি রসুন ২৬০-২৮০ টাকা, চায়না রসুন ২০০ টাকা, ভারতীয় আদা ২২০, চায়না আদা ২০০-২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় আজ আলুর দাম কমেছে ৫ টাকা এবং চায়না রসুনের দাম কমেছে ২০ টাকা।

আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. সেলিম বলেন, পেঁয়াজের দাম আজ ভালোই বাড়তির দিকে আছে। গত শুক্রবার যেটা ৯০ টাকা বিক্রি করেছি, সেটা আজ সেটা ১২০ টাকা। আমাদের হাতে কিছু নাই। আমরা খুচরা বিক্রি করি। আমরা যে দামে আনি সেখান থেকে লাভ রেখে বিক্রি করি।

পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে বলে জানান বিক্রেতারা

রোজার আগে দাম কমবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোজার আগে দাম কমার কোনও সম্ভাবনা দেখি না। উল্টো বাড়তে পারে।

আরেক বিক্রেতা মজনু বলেন, যখন নতুন পেঁয়াজ উঠে তখন সেগুলো কাঁচা থাকে। তাই দাম কম থাকে। এখন পেঁয়াজ শুকনো হয়েছে তাই দাম বাড়ছে। আরও দাম বাড়বে।

বাজারে আলু-পেঁয়াজ কিনতে এসে কাওসার হোসেন নামের বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, আমি আসলে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনও কারণই খুঁজে পাই না। পেঁয়াজের সিজন চলে গেলো, কিন্তু দাম কমলো না। অদ্ভুত একটা অবস্থা পার করছি!

জাকিয়া ইয়াসমিন নামের এক ক্রেতা পেঁয়াজ কিনতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার কিছু হলেই আমদানি করে...হেন করে-তেন করে! কিন্তু কম দামে তো কিনতে পারি না। তাহলে এসব আমদানির মানে কী? 

প্রায় সব ধরনের সবজির দামই কমেছে

আজকের বাজারে শিম ৬০-৭০ টাকা, শালগম ৫০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৫০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, পেঁয়াজ কলি ৪০ টাকা, মটরশুঁটি ১০০ টাকা, সাদা মূলা ৪০ টাকা, দেশি গাজর ৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৮০ টাকা, শসা ৮০-১২০ টাকা, খিরাই ৮০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, কচুরমুখী ১২০, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, ধনেপাতা ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিটি লাউ ১০০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা, ব্রোকলি ৫০ করে বিক্রি হচ্ছে। দেখা যায় প্রায় সব সবজির দামই কমেছে কেজিপ্রতি ১০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত।

সবজি বিক্রেতা মো. কালাম বলেন, গত সপ্তাহের থেকে আজ সব সবজির দামই কমে গিয়েছে। দাম কমলে আসলে ক্রেতাদের যেমন সুবিধা হয় তেমনি আমাদেরও সুবিধা হয়। কোনও সবজি যদি আমরা ৫০ টাকায় কিনি সেটা আমরা অনায়াসেই ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি করতে পারি। কিন্তু কোনও সবজি যদি ৮০ টাকায় কিনি সেটা ১০০ টাকায় বিক্রি করা কঠিন হয়ে যায়।

আরেক বিক্রেতা খোকন বলেন, দাম কম থাকলে আমরা বেশি বিক্রি করতে পারি, লাভও হয় বেশি। কিন্তু দাম বেশি থাকলে মানুষ কেনেই কম। তখন লাভ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুল ওয়াহাব এসেছিলেন বাজার করতে। তিনি বলেন, সবজির দাম অনেকটাই কমে এসেছে। এটা একটা ভালো ব্যাপার। কিন্তু আমাদের বাজারের ওপর তো ভরসা করা যায় না। আজ দাম কম আছে। কালই এসে দেখবেন দাম বেড়ে গিয়েছে। কোনও কিছুরই ঠিক ঠিকানা নাই।

মাছের বাজারে দাম আগের মতোই

এছাড়া আজকের বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৯০০-২২০০ টাকা, রুই মাছ ৩৮০-৫৫০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৮০০ টাকা, কালবাউশ ৫০০- ১২০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ -১২০০ টাকা, কাঁচকি ৪৫০ টাকা, কৈ ২৫০-১২০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, শিং ৪০০-১৪০০ টাকা, বেলে মাছ ৬০০-১২০০ টাকা, টেংরা ৬০০-৮০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, কাজলি মাছ ১১০০-১২০০ টাকা, বোয়াল ৬০০- ১৩০০ টাকা, রূপচাঁদা ১০০০-১২০০ টাকা, শোল ৭০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। 

মুরগির দাম একই আছে

ব্রয়লার মুরগি ১৯৫-২১০ টাকা, কক মুরগি ২৭৫-২৮০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৮৫ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মুরগির লাল ডিম ১৩৫ টাকা এবং সাদা ডিম ১৩০ টাকা প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে।

মুদি দোকানের সব পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত

আজ মুদি দোকানের সব পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, মুগ ডাল ১৭৫ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১০০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৩ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৪০, টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ছবি: প্রতিবেদক