বেশ কিছু ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। গ্রাহকদের রাখা টাকা সময়মতো ফেরত দিতে পারছে না তারা। আবার পর্যাপ্ত টাকা থাকার পরও দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো না থাকায় কিছু ব্যাংক ঋণ বিতরণ করতে পারছে না। ফলে ১১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমেছে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি।
দুই বছর ধরে চলা ডলারের অস্থির বাজার স্বাভাবিক মনে হলেও এলসি খোলার হারও ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। আবার বাজারে জিনিসপত্রের দামও কমছে না। ডিমসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে মূল্যস্ফীতি এখন নিম্নমুখী।
ভুক্তভোগী অনেকেই বলছেন আগে বীমা খাতের কোম্পানিগুলো যেভাবে হয়রানি করতো এখন একইভাবে ব্যাংকগুলো সেই হয়রানি শুরু করেছে। এক লাখ বা দুই লাখ টাকা তুলতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনেক গ্রাহক। এমনকি ১০ হাজার টাকার চেকও ফেরত দেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে কোনও কোনও ব্যাংকে।
একই দশা ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও। শুধু তাই নয়! এক দশক আগে, অর্থাৎ ২০১৪ সালে দেশের অন্যতম স্থিতিশীল ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ইসলামী ব্যাংকেরও এখন করুণ দশা। ব্যাংকটির মধ্যম সারির এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, নগদ টাকার সংকটের কারণে তাদের দীর্ঘদিনের রেপুটেশন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) আমানত না বেড়ে বরং উল্টো কমেছে। এই সময়ে ব্যাংক খাতে আমানত কমেছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। এভাবে ব্যাংক খাতে আমানত কমে যাওয়ার ঘটনা নিকট অতীতে দেখা যায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের স্থিতি ছিল ১৭ লাখ ৪২ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। আগস্ট শেষে আমানতের স্থিতি ১৭ লাখ ৩১ হাজার ৮৯০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ১০ হাজার ৯০৭ কোটি টাকার আমানত কমে গেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, আগের অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছিল ২৩ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতে আমানত প্রবাহ ঋণাত্মক ধারায় চলে যাওয়ায় আরও তীব্র হয়েছে তারল্যের সংকট। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো এখন ১৪-১৫ শতাংশের সুদ প্রস্তাব দিয়েও আমানত সংগ্রহ করতে পারছে না। প্রতিদিনই এসব ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় আমানত তুলে নেওয়ার জন্য ভিড় করছেন আতঙ্কিত গ্রাহকরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
এদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি বিভিন্ন কারণে রাজস্ব আয় না বাড়ায় সরকারকে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে চলতে হচ্ছে। এতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ সংকুচিত হচ্ছে, তাতে কর্মসংস্থানও বাড়ছে না।
চাপ থাকবে এক বছর
বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও এক বছর চাপে থাকবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং শিল্প এলাকায় শ্রম অসন্তোষ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার পথে মূল তিনটি বাধা। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই মুহূর্তে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বাইরের অন্যান্য খাতের চাপ, আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। এসব কারণে প্রবৃদ্ধি খুব বেশি বাড়বে না।
সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কেননা এখনও ৮৪ দশমিক ৯ শতাংশ কর্মসংস্থান অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। এটি অত্যন্ত উচ্চ সংখ্যা। ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে কর্মসংস্থান কমেছে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ হারে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেছেন, টাকার মূল্যমান হ্রাস, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্বল্পতা, ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চহার এবং ঋণপত্র খোলার প্রতিবন্ধকতাসহ নানাবিধ সমস্যা আমাদের বেসরকারি খাত মোকাবিলা করছে। তিনি বলেন, বন্দরের আমদানি পণ্যের শুল্কায়নে পদ্ধতিগত জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা, নানা ধরনের জরিমানা আরোপের ফলে আমাদের ব্যবসায়িক খরচ প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিনিয়োগ কম, বন্ধ হচ্ছে প্রতিষ্ঠান
বিনিয়োগের আস্থার অভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের ঋণদান কার্যক্রম চাপের মুখে পড়েছে। ডলার সংকটের কারণে গত দুই বছর ধরে বলতে গেলে স্থবির ছিল বিনিয়োগ। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এ পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
এছাড়া ব্যাংকের ঋণপত্র (লেটার অব ক্রেডিট; এলসি) খোলার হারও ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের জুলাই–আগস্টে এলসি খোলার পরিমাণ প্রায় ১৩ শতাংশ কমেছে এবং মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি ৪৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অর্থনীতির ভাষায় এটি ব্যবসার সম্প্রসারণে স্থবিরতার ইঙ্গিত দেয়।
যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতরের (আরজেএসসি) তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ মাসে (মে থেকে সেপ্টেম্বর) ১২৮টি কোম্পানি বন্ধ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু আগস্ট মাসেই ৪৬টি কোম্পানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। পরের মাস সেপ্টেম্বরে বন্ধ হয়েছে ২৬টি কোম্পানি। জুলাই-সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে ৮৩টি কোম্পানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
অনেক ব্যবসায়িক পৃষ্ঠপোষক ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন, যার ফলে ব্যবসা বাণিজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি স্থবির অবস্থায় রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সাল থেকে ডলার সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগের প্রবাহ মন্থর রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও কমিয়ে দিচ্ছে।
ব্যাংকগুলো বর্তমানে স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নতুন কোনও বিনিয়োগ প্রস্তাব পাচ্ছে না। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তাদের চাহিদাও ক্রমশ কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ব্যাংক ও বিনিয়োগকারীরা ‘অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণ’ নীতি অনুসরণ করছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২০২২ সালে ডলার সংকট শুরুর পর থেকেই বিনিয়োগ পরিস্থিতি ধীরগতিতে চলছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে এটি আরও খারাপ হয়েছে। আমরা দেখছি এলসি খোলার হার ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে যা বিনিয়োগের স্থবিরতাকে ঈঙ্গিত করে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগছে এবং বর্তমান অনিশ্চয়তার মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো ঝুঁকি এড়াতে বেসরকারি খাতে ঋণ দেওয়ার পরিবর্তে সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে বেশি আগ্রহী। যার ফলে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি জুলাই মাসের ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ থেকে আগস্টে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে নেমে এসেছে যা বিগত ১১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রবৃদ্ধির এ হার ছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং আগস্টে তা ছিল ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
এদিকে জুলাই ও আগস্টে দেশে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি কমে গেছে। শুধু লক্ষ্যমাত্রা নয়, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায়ও রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪২ হাজার ১০৬ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ১৫ হাজার ৬৯ কোটি টাকা কম। এর আগের বছর একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৪৭ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। অর্থাৎ, আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রাজস্ব আদায় ১১ শতাংশ কম হয়েছে।
রাজস্ব আয় কম হওয়ায় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ধার বা ঋণ নেওয়ার পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ৪৭ হাজার ২০৯ ধার করেছে। গত অর্থবছরের একই সময় শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকার ধার করেছিল ২৪ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ধার বেড়েছে প্রায় ৯৩ শতাংশ।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শীর্ষ রফতানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ শুরু হয়। এতে সাভারের আশুলিয়ার বড় শিল্পগোষ্ঠীর কারখানাগুলোতে গত দেড় মাস উৎপাদন ব্যাহত হয়। গাজীপুরের কিছু কারখানায় বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। তারপরও গত মাসে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি বেড়েছে। অর্থাৎ অর্থনীতির এই সূচকটি ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে।
রফতানি আয় বেড়েছে
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সেপ্টেম্বর মাসে দেশের রফতানি আয় ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়ে ৩ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এটি ছিল ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের মধ্যে রফতানি আয় ৫ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ বেড়ে ১১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১০ দশমিক ৮২ বিলিয়ন।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে তৈরি পোশাক খাত থেকে রফতানি আয় ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়ে ৯ দশমিক ২৮ বিলিয়ন হয়েছে, যা গত বছরে ছিল ৮ দশমিক ৮১ বিলিয়ন। অন্যদিকে সেপ্টেম্বর মাসে পোশাক খাত ২ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা ৬ শতাংশ বেড়েছে। ওভেন পণ্য থেকে রফতানি আয় ৮ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যেখানে নিট পণ্যের রফতানি আয় ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে কৃষিপণ্য রফতানি থেকে আয় হয়েছে ৯৭ মিলিয়ন ডলার। এখাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। প্লাস্টিক পণ্য ২৭ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা এক বছর আগের একই সময়ের ২১ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি।
এদিকে অর্থনীতির আরেকটি সূচক প্রবাসী আয়ের প্রবাহেও ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে মোট রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় ২০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় এসেছে গত মাসে এবং এতে ৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে মোট প্রবাসী আয় এসেছে ২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার বা ২৪০ কোটি ডলার। গত আগস্টে আয় এসেছিল ২২২ কোটি ডলার। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৩৩ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় গত মাসে প্রবাসীরা ৮০ শতাংশ বেশি অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, বিদায়ী সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অর্থপাচার এবং বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের চাপের মুখে পড়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। তবে সম্প্রতি প্রবাসী আয় ও রফতানি বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়ক হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অক্টোবর মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত গ্রস (মোট) রিজার্ভ দুই হাজার ৪৯৭ কোটি মার্কিন ডলার বা ২৪ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন এক হাজার ৯৮২ কোটি ডলার (১৯ দশমিক ৮২ বিলিয়ন)। আগের সপ্তাহে অর্থাৎ ২ অক্টোবর গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন এবং বিপিএম-৬ ছিল ১৯ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে রিজার্ভ সামান্য বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগের মতো ঢালাওভাবে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, চার-পাঁচটি পরিবার ব্যাংক থেকে দুই লাখ কোটি টাকা নিয়ে গেছে। এতে অর্থনীতিতে মন্দা নেমে আসতে পারত, সেটা হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করলে ছয় মাস পর শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হয়ে যাবে। এটা কোনও সমাধান হতে পারে না। এ জন্য আমাদের কিছুদিন কষ্ট করতে হবে।