বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে

বিদেশে ভ্রমণ, চিকিৎসা ও শিক্ষাসহ নানা প্রয়োজনে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে খরচ বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়ার মতো দেশে। অথচ একসময় শীর্ষ অবস্থানে থাকা প্রতিবেশী দেশ ভারত এখন তালিকার ৬ নম্বরে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত ‘ক্রেডিট কার্ড লেনদেন প্রতিবেদন (এপ্রিল ২০২৫)’ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশিদের বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪৬৮ কোটি টাকায়। যা আগের মাস মার্চের (৩৬১ কোটি) তুলনায় প্রায় ২৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেশি। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি ১৪৫ কোটি টাকা কম। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে এই ব্যয় ছিল ৫০৬ কোটি টাকা।

ভারত নয়, এখন শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র

ক্রেডিট কার্ড খরচের দিক থেকে এখন শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এপ্রিল মাসে দেশটিতে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে ৬৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর আগে মার্চে এই খরচ ছিল ৫৭ কোটি ৪০ লাখ এবং ফেব্রুয়ারিতে ৫২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে থাইল্যান্ড, যেখানে এপ্রিল মাসে খরচ হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা। এরপর রয়েছে সিঙ্গাপুর (৪৫ কোটি ৬০ লাখ), যুক্তরাজ্য (৪৩ কোটি ৩০ লাখ) ও মালয়েশিয়া (৪৩ কোটি টাকা)।

অন্যদিকে, ভারতে এপ্রিলে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড খরচ কমে এসেছে মাত্র ৩১ কোটি টাকায়, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ কম। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে এ খরচ ছিল ৯৮ কোটি টাকা।

ভিসা জটিলতা ও কূটনৈতিক টানাপড়েন প্রধান কারণ

বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিবর্তনের মূল কারণ ভিসা জটিলতা এবং ভারতের প্রতি নির্ভরতা কমে যাওয়া। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘‘ব্যবসা, চিকিৎসা, সন্তানদের পড়াশোনা ইত্যাদি নানা কারণে আগে বাংলাদেশিরা নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশে বেশি ভ্রমণ করতেন। এখন তাদের গন্তব্য ও ব্যয় ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য দেশে। এটি একটি স্বাভাবিক পরিবর্তন।’’

তবে বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, কূটনৈতিক অস্থিরতাও এখানে বড় প্রভাব রেখেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে ভারত বাংলাদেশিদের জন্য পর্যটক ভিসা বন্ধ রেখেছে। এ ছাড়া ভারত হয়ে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশি পণ্য পরিবহনের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ফলে বহু বাংলাদেশি, যারা প্রতিবছর কলকাতা, দার্জিলিং, সিকিম বা দিল্লিতে যেতেন, এখন সেই সুযোগ হারাচ্ছেন।

দেশে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন কমেছে

বিদেশে ব্যয় বাড়লেও দেশে ক্রেডিট কার্ড লেনদেন কমেছে। মার্চে যেখানে মোট লেনদেন ছিল ৩ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা, এপ্রিলে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৬ কোটি টাকায়— অর্থাৎ প্রায় ১৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশে ১১টি খাতে সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার হয়ে থাকে, যার মধ্যে রয়েছে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, ইউটিলিটি বিল, খুচরা কেনাকাটা, নগদ উত্তোলন, ফার্মেসি, অর্থ স্থানান্তর, পরিবহন, ব্যবসায়িক ও সরকারি সেবার বিল পরিশোধ। এসব খাতের বেশিরভাগেই এপ্রিল মাসে খরচ কমেছে।

কার্ডের ধরণ অনুযায়ী ব্যবহার

বর্তমানে দেশে এবং বিদেশে ক্রেডিট কার্ড লেনদেনের ৭৫ শতাংশ সম্পন্ন হচ্ছে ভিসা কার্ডের মাধ্যমে। এরপর রয়েছে মাস্টারকার্ড (১৫ শতাংশ) এবং অ্যামেক্স (৯ শতাংশ)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৬২টি তফসিলি ব্যাংক ও ৩৫টি এনবিএফআই’র মধ্যে ৫৬টি ব্যাংক ও মাত্র একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের জন্য ক্রেডিট কার্ড সেবা দিচ্ছে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতেই প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ভবিষ্যতে এ প্রবণতা আরও বাড়তে পারে, যদি ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক না হয়। পাশাপাশি বিশ্বে বাংলাদেশি অভিবাসী, শিক্ষার্থী ও পর্যটকদের গন্তব্য বৈচিত্র্যময় হওয়ায় ক্রেডিট কার্ডের বৈদেশিক লেনদেন ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে।