ভোজ্যতেল নিয়ে দোটানায় সরকার

সয়াবিন তেল নিয়ে মোটামুটি বিব্রত অবস্থায় আছে সরকার। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশীয় আমদানিকারকদের সঙ্গে বসে দাম সমন্বয় করতে হয়। এই ‘সমন্বয়’ মানেই দাম বাড়ানো। দাম না বাড়ালে ব্যবসায়ীরা আবার ক্ষুব্ধ হয়ে সয়াবিন তেলের আমদানি কমিয়ে দিতে পারে। এতেও অস্থিরতা বাড়ার আশঙ্কা আছে। সরকার তাই সময় নিয়েছে ১৫ দিন। ৬ কিংবা ৭ ফেব্রুয়ারি আবারও বৈঠক হবে সয়াবিনের দাম সমন্বয় নিয়ে।

অপরদিকে কয়েক দফায় দাম বাড়িয়ে প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম ঠেকেছে ১৬০ টাকায়।

বেশ কিছুদিন ধরেই আমদানিকারকরা সয়াবিন তেলের দাম আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করে আসছে। বিষয়টি নিয়ে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দফায় দফায় বৈঠকও হয়েছে। সব বৈঠকেই সরকার পক্ষকে কৌশলী হতে হয়েছে। কেননা ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতেই ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।

সর্বশেষ বুধবারও (১৯ জানুয়ারি) বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসে দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা। বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। দাম না বাড়ালে আমরা লোকসানে পড়বো। তখন এলসি বন্ধ করা ছাড়া পথ থাকবে না।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘এতদিন ব্যবসায়ীরা একটু অস্বস্তি ফিল করছিল। তারা নতুন করে আর তেলের এলসি করবে কি না, সে বিষয়ে কিছুটা দ্বিধায় ছিল। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে সামনে রোজা আসছে। সব চিন্তা করে পদক্ষেপ নিতে হবে।’

আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় এই মুহূর্তে দাম কমানোর কোনও সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখনই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে না। এর জন্য কারিগরি কমিটি আছে। বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে সুপারিশ করবেন। এ ছাড়া বৈশ্বিক পরিস্থিতিও দেখতে হবে। আমাদের প্রতিবেশী ভারতও আমাদের মতো তেল আমদানি করে। তাদের স্থানীয় বাজারে মূল্য পরিস্থিতি দেখুন। তাহলেই অনেক কিছু জানতে পারবেন। আমরা এখনই কোনও সিদ্ধান্ত জানাতে চাই না।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে বাৎসরিক ভোজ্যতেলের চাহিদা ২০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন আমদানি করতে হয়। সরিষা, তিল, তিশি, সূর্যমুখী মিলিয়ে দেশে ভোজ্যতেল উৎপাদন হয় মাত্র ২ লাখ টন। আমদানি করা ১৮ লাখ টন তেলের মধ্যে সয়াবিন ও পাম তেলই প্রধান।

বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘এখন ভোজ্যতেলের যে দাম আছে, এটাই থাকবে। আগামী ১৫ দিনে এর কোনও পরিবর্তন হবে না। এরপর বৈঠক করে তেলের দাম সমন্বয় করা হবে। এটা করলে রমজানে তেলের দাম স্বাভাবিক থাকবে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা জানিয়েছেন, ‘কোম্পানি লোকসান দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করলে কোম্পানি লাটে উঠবে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারদর অনুযায়ী অনেক কম দামে তেল দিচ্ছি। এটা বেশি দিন চালানো যাবে না। তাই দাম সমন্বয়ের প্রস্তাব করেছি।’

এদিকে রাজধানীতে চলমান ডিসি সম্মেলনে আসন্ন রমজানে জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে রাখতে বাজারে কঠোর মনিটরিং নিশ্চিত করতে ডিসিদের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ডিসিদের সঙ্গে দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন বাণিজ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।