এই জালিয়াতি ঠেকাবে কে?

মালিকদের সঙ্গে হিসাব-নিকাশ করে সরকার সয়াবিন ও পামতেলের দর ঠিক করে দিলেও তা কোথাও কার্যকর হচ্ছে না। মহল্লার দোকানগুলোয় এখন আর বোতলজাত সয়াবিনই পাওয়া যাচ্ছে না। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে দোকানিরা বোতলের তেল ঢালছেন ড্রামে। 
যে ক্রেতার একসঙ্গে পাঁচ বা এক লিটারের বোতল কেনার সামর্থ নেই তিনি কিনছেন ২৫০ মিলিলিটার। আর সেই সুবাদেই দিনে-দুপুরে ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ে চলছে এই নৈরাজ্য। ব্যবসায়ীদের এই জালিয়াতি কে ঠেকাবে— প্রশ্ন সাধারণ মানুষের।
রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বিক্রেতাদের কাছে এখন আর বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। দু-একটি দোকানে এক লিটারের ২-৪টি বোতল দেখা গেলেও এর বেশি নেই। তবে ড্রামে খোলা সয়াবিন ও পামতেলের সরবরাহ ভালো বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

কারণ জানতে চাইলে খুচরা দোকানিরা জানালেন, এখন আর পাঁচ, তিন বা দুই লিটারের বোতল কেনার কাস্টমার নেই। সারি সারি বোতল সাজিয়ে ব্যবসা চলবে না। বোতলজাত তেলে লাভও কম। তাই খোলা তেলই বিক্রি করছি। মেপে দেওয়াটা বিরক্তিকর। কিন্তু লাভ তো ভালো।

সোমবার (৭ মার্চ) সকালে রাজধানীর মাতুয়াইলের মুসলিম নগরের মুদি ব্যবসায়ী বিপ্লবকে দেখা গেছে পাঁচ লিটারের বোতল খুলে সেই তেল ড্রামে ঢালছেন। বললেন, বোতলের গায়ে দাম লেখা থাকে বলে দাম বেশি রাখা যায় না। তাই ড্রামে ঢেলে বিক্রি করছি। কাস্টমার চাইলে তার সুবিধা অনুযায়ী ১০০ গ্রামও বিক্রি করা যায়। আবার এভাবে দামও ইচ্ছামতো রাখা যায়। এতে ব্যবসা ভালো। তিনি আরও জানান, এখন নিম্নআয়ের লোকেরা বোতল নিয়ে সয়াবিন বা পাম তেল কিনতে আসেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেকেই এখন প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ২০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। যদিও সরকার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করেছে।

রাজধানীর সোবহানবাগের রিকশাচালক সোলায়মান হক জানিয়েছেন, এখন আর বোতলের তেল কেনার সামর্থ নাই। এক লিটারের দাম ২০০ টাকা। যখন যেটুকু লাগে সেটুকু কিনি। এতে খরচ কম হয়।

উল্লেখ্য, গত ৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ায় দেশের বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৭ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এছাড়া পাঁচ লিটারের বোতলে ৩৫ টাকা এবং পাম তেলে লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। যা গত ৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার থেকে কার্যকর হয়েছে।

সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৩৬ টাকা নির্ধারিত ছিল। নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৮ টাকা এবং খোলা তেলের দাম ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আরও ১২ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘বিপণনকারী কোম্পানিগুলো সয়াবিন তেলের দাম আরও ১২ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু আমরা বলেছি, সামনে রমজান মাস। এখন তেলের দাম বাড়ানো যাবে না।’

দেশে ভোজ্যতেল বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব ছিল, বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৮০ টাকা করার। কিন্তু বৈঠকে উপস্থিত বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা এখনই দাম না বাড়ানোর সুপারিশ করেন বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, বাজারে দুই লিটার সয়াবিন তেল এখন ৪০০ টাকা দিয়েই কিনতে হচ্ছে।