চায়ের মূল্য বৃদ্ধি ও শুল্ক বন্ধের কথা জানালেন বাণিজ্য উপদেষ্টা

দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে চা রফতানি বাড়াতে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এছাড়া চায়ের উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে বিক্রি মূল্য বাড়ানো এবং চা শিল্পে শুল্ক বন্ধ করার কথা জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা।  

বুধবার (২১ মে) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পঞ্চম জাতীয় চা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।

উপদেষ্টা বলেন, চা শিল্পকে শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও সমানভাবে তুলে ধরতে কাজ করতে হবে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের কাছ থেকে শ্রেষ্ঠ ক্যাটাগরির সনদ নিচ্ছেন কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ইনাম আহমেদ, ছবি: নাসিরুল ইসলাম

চা শিল্পে কর বন্ধ চান বাণিজ্য উপদেষ্টা

চা শিল্পে শুল্ক বন্ধ করার কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘চা শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনাকে আমাদের কাজে লাগাতে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। চা শিল্পে বিভিন্ন রকম শুল্ক ও কর অব্যবস্থাপনা আছে, আমরা সেটি বন্ধ করতে চাই। এ শিল্পে ডিসিপ্লিন আনতে চাই—যাতে এর মাধ্যমে বাজারে পণ্যমূল্যে স্থিতিশীলতা আসে এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়।’

চায়ের বিক্রি মূল্য বাড়াতে হবে

চায়ের উৎপাদন খরচ কমিয়ে বিক্রি মূল্য বাড়াতে চান বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘চা শিল্পের জন্য যত জমি নিয়োজিত আছে, তার একটা উপযুক্ত ব্যবহার দরকার। এর অন্যান্য ব্যবহার—সেটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি হোক, অথবা পর্যটনকেন্দ্র হোক, সেদিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে। তবে মূল লক্ষ্য হচ্ছে চা থেকেই চায়ের বাগানের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য চা শ্রমিক, মালিক সবার সম্মিলিত চেষ্টা দরকার। চায়ের উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে বিক্রি মূল্য বাড়াতে হবে। বিক্রি বাড়াতে হলে চা পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও আকর্ষণীয় করতে হবে।’

বেলুন উড়িয়ে চা দিবসের উদ্বোধন করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, ছবি: নাসিরুল ইসলামবাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের কাছ থেকে শুনতে পাচ্ছি— চায়ের উপযুক্ত মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। এখানে বসেই ছোট্ট একটা হিসাব করে দেখলাম, যদি ৯ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপন্ন হয়, বাজারের যে মূল্যমানে বিক্রি হয়—তাতে খসড়াভাবে ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকার চা বাজারে বিক্রি হয়। একই সময়ে যদি স্ট্রিট ভ্যালুতে কনভার্ট করি, তাহলে মিনিমাম ডাবল থেকে ত্রিপল একটি মূল্যমান দাঁড়াবে। আমরা যদি এটার একটা সুষম বণ্টন করতে পারি, তাহলে চা শিল্পের যে দুষ্ট চক্রের মধ্যে পড়ে যাচ্ছি— সেখান থেকে জাতীয় সম্পদ চা শিল্প রক্ষার উপায় খুঁজে বের করতে পারবো।’

পুরস্কার প্রদান

অনুষ্ঠানে দেশের চা শিল্পে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আট ক্যাটাগরিতে ‘জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৫’ প্রদান করা হয়। এছাড়া জাতীয় চা দিবস উপলক্ষে এ বছর সর্বোচ্চ চা উৎপাদনকারী কারখানা ক্যাটাগরিতে দুটি বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির হাতে সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেন।

এ বছর ‘বৈচিত্র্যময় চা’ বাজারজাত এবং ‘দৃষ্টিনন্দন ও মানসম্পন্ন চা’ মোড়কে শ্রেষ্ঠ হিসেবে দুটি পুরস্কার পেয়েছে কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট লিমিটেড। বাণিজ্য উপদেষ্টার হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ইনাম আহমেদ।

চা দিবস উপক্ষে মেলায় কাজী অ্যান্ড কাজী টি’র স্টল, ছবি: নাসিরুল ইসলামএর আগে বেলুন উড়িয়ে পঞ্চম জাতীয় চা দিবসের কর্মসূচি উদ্বোধন করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। পরে তিনি চা মেলায় বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন।

শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শাহ মইনুদ্দিন হাসান, বাংলাদেশীয় চা সংসদের সভাপতি কামরান টি রহমান, জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৪ বিজয়ী চা শ্রমিক জেসমিন আক্তার এবং চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নৃপেন পাল।

আরও পড়ুন:

দুটি শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেলো কাজী অ্যান্ড কাজী টি