দেশের জাতীয় ব্যয়ের একটি বড় অংশ ঋণ পরিশোধে ব্যয় হচ্ছে উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেছেন, মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। একই সঙ্গে তিনি লজিস্টিক সাপোর্ট এবং শ্রমের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বহুগুণ বাড়ানো সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন।
বুধবার (২৫ জুন) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে ‘অটোমোবাইল পলিসি ফর গ্রিন গ্রোথ অ্যান্ড কম্পিটিটিভ ইকোনমি’ শীর্ষক কর্মশালা ও সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “জাতীয় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামকগুলোর মধ্যে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাত রয়েছে। এসব খাতের প্রাথমিক এনাবলার হচ্ছে লজিস্টিক সাপোর্ট। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ইউটিলিটি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস এবং শ্রমশক্তির উৎপাদন ক্ষমতা।” তিনি জানান, “আমাদের দেশে লজিস্টিক খরচ উন্নত বিশ্বের চেয়েও বেশি। অথচ এটি অর্থনীতির জন্য একটি মৌলিক ভিত্তি।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে দেশের লজিস্টিক চাহিদা বছরে ৪১ বিলিয়ন কিলোমিটার টন, যা ২০৪০ সালের মধ্যে বেড়ে দাঁড়াবে ৩০০ বিলিয়ন কিলোমিটার টনে।” এই প্রেক্ষাপটে তিনি নদীনির্ভর গুদামজাতকরণ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন এবং বলেন, “দেশে ২০০টির বেশি নদী থাকা সত্ত্বেও সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না।”
বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, “আমাদের ১৭/১৮ কোটি জনসংখ্যা রয়েছে, যদিও খনিজ সম্পদ তেমন নেই। তবে রয়েছে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড—একটি ভাইব্রেন্ট ও প্রোডাক্টিভ জনগোষ্ঠী। এই শ্রমশক্তিকে দক্ষভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশের অর্থনীতি আরও এগিয়ে যাবে।”
তিনি জানান, “দেশে ভোগ্যপণ্যের বাজার প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলারের সমান, আর বছরে প্রায় ১০ কোটি টন খাদ্য আমদানি করা হয়। কিন্তু আমাদের কাছে এখনও জিডিপির সঠিক আকার সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা নেই। এ ধরনের তথ্য ঘাটতি নীতি প্রণয়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।”
শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, “গত ১৬ বছরে দেশের অর্থনীতিতে যে ‘ক্রিমিনালাইজেশন’ ঘটেছে, তা থেকে উত্তরণে পলিসি ডাইভারশন প্রয়োজন। এজন্য নিয়ামকগুলোকে সুনির্দিষ্ট করতে হবে এবং প্রাসঙ্গিক নীতি নিতে হবে।”
অটোমোবাইল খাত সম্পর্কে তিনি বলেন, “অটোমোবাইল খাত আমাদের অর্থনীতিতে এখনও একটি ছোট অংশ, উৎপাদন কার্যক্রম নেই বললেই চলে। অথচ এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত।” গাড়ি কেনার সময় শুধু ‘লিটারে কত কিলোমিটার যাবে’ প্রশ্ন করলেই হবে না, বরং এটি কীভাবে অর্থনীতির বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে অবদান রাখতে পারে তা ভাবতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আবদুল হক, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী, উত্তরা মোটরসের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহমান।
ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন এবং সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।