বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ‘রিস্ক বেসড সুপারভিশন (আরবিএস) পদ্ধতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে রবিবার (২৫ মে) রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে একটি দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন (ডিওএস)।
কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ এবং শীর্ষ ব্যবস্থাপনাকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হলে কৌশলগত চিন্তাভাবনা ও ঝুঁকি মূল্যায়নের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’
তিনি জানান, ব্যাংকিং খাতে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার আনতে একটি সমন্বিত রোডম্যাপ অনুযায়ী বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। গভর্নর আরও বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংক এখন থেকে ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ নীতির পরিবর্তে ‘ওয়াচ অ্যান্ড অ্যাক্ট’ নীতি অনুসরণ করবে— যার মাধ্যমে সম্ভাব্য ঝুঁকি শনাক্ত করে আগেভাগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন ডেপুটি গভর্নর। তারা হলেন—ড. মো. হাবিবুর রহমান, মো. জাকির হোসেন চৌধুরী ও ড. মো. কবির আহাম্মদ।
ডিওএস-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি গভর্নর মো. জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আরবিএস পদ্ধতি একটি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, যা কেবল প্রযুক্তিগত নয়। বরং মানসিক প্রস্তুতিরও বিষয়।’ তথ্যের স্বচ্ছতা ও যথার্থতার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করা হবে।”
ড. মো. কবির আহাম্মদ তার বক্তব্যে ১৯৯৭ সালের এশিয়ান সংকটের উদাহরণ টেনে সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং বলেন, ‘সুপারভিশনের আধুনিক হাতিয়ার হিসেবে আরবিএস কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।’
অপরদিকে ড. হাবিবুর রহমান মুদ্রানীতিতে গৃহীত সাম্প্রতিক পরিবর্তন, বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া উদ্যোগসমূহ তুলে ধরেন।
কর্মশালায় ‘রিস্ক বেসড সুপারভিশন: অ্যান ওভারভিউ অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল শীর্ষক একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রব। প্রেজেন্টেশনটি নিয়ে আলোচনা করেন গভর্নরের উপদেষ্টা সাবেথ ইবনে সিদ্দিকী ও আহসান উল্লাহ।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা তাদের বক্তব্যে আরবিএসকে সময়োপযোগী উদ্যোগ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, তথ্য ব্যবস্থাপনায় স্বয়ংক্রিয় কেন্দ্রীয় তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে, যা বাস্তবায়নে ব্যাংক খাতের সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি।
স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম এবং কর্মশালার সমাপ্তি বক্তব্য ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ডিওএস-এর পরিচালক আ.ন.ম. মঈনুল কবীর।
উল্লেখ্য, ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে দেশে প্রচলিত তদারকি ব্যবস্থার পরিবর্তে ঝুঁকিনির্ভর তদারকি বা আরবিএস পদ্ধতি চালুর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নানা প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে আজকের এই কর্মশালা আয়োজন করা হয়, যেখানে সব তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন।