মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নীতির হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার (৮ মে) অনুষ্ঠিত মুদ্রানীতি কমিটির (এমপিসি) অষ্টম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শনিবার (২৪ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। সভায় চলমান অর্থনৈতিক চিত্র, মূল্যস্ফীতির গতি-প্রকৃতি, বৈদেশিক খাতের কার্যক্রম ও আর্থিক বাজারের গতিপ্রবাহ বিশ্লেষণ করা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। এসময় উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. সাদিক আহমেদ, বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. এ. কে. এনামুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাসুদা ইয়াসমিন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. এজাজুল ইসলাম। সভার সদস্যসচিব ছিলেন মুদ্রানীতি বিভাগের পরিচালক মাহমুদ সালাহউদ্দিন নাসের।
মূল্যস্ফীতিতে কিছুটা স্বস্তি
বৈঠকে জানানো হয়, সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্য ও অখাদ্য উভয় খাতেই মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। এপ্রিল ২০২৫-এ সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমেছে, যা জুন ২০২৪-এ ছিল ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ। খাদ্যমূল্য স্ফীতি এক বছরে কমে দাড়িয়েছে ৮ শতাংশ ৬৩ শতাংশে (জুন ২০২৪-এ ছিল ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ)। তবে অখাদ্য খাতে কিছুটা ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে— এপ্রিল ২০২৫-এ এর হার ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ, যা জুন ২০২৪-এ ছিল ৯ দশমিক ১৪ শতাংশ।
সভায় বলা হয়, সরকারের গৃহীত বিভিন্ন নীতিগত পদক্ষেপ, মনসুন মৌসুমে সবজির সরবরাহ বৃদ্ধি, বৈশ্বিক পণ্যমূল্যের পতন ও ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকায় মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে হাওর অঞ্চলে বোরো ধানের ভালো ফলন মূল্যস্ফীতির ওপর আরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।
নীতির হার অপরিবর্তিত
উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও, মূল্যস্ফীতি এখনও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না নামায় মুদ্রানীতি কমিটি নীতির হার (পলিসি রেট) ১০ দশমিক ০ শতাংশেই অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে এসডিএফ (স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি) এবং এসএলএফ (স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি) হার যথাক্রমে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ ও ১১ দশমিক ৫ শতাংশেই বহাল থাকবে।
ব্যাংক খাতে সুশাসন ও রিজার্ভ বৃদ্ধির ইঙ্গিত
সভায় ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ব্যাংকিং রেজুলেশন অ্যাক্ট, ২০২৫’ চূড়ান্ত করার কথা জানায়। এই আইন কার্যকর হলে দুর্বল ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে থাকবে।
গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ওপর গুরুত্ব দেন। পাশাপাশি একটি বাজারভিত্তিক বিনিময় হার নিশ্চিত করা এবং আইএমএফের সঙ্গে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর ওপর জোর দেন।
মুদ্রানীতির কৌশল অব্যাহত থাকবে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিউপিএম (কোট্যালি প্রজেকশন মডেল) অনুযায়ী বাস্তব সুদের হার ও বিনিময় হার ভিত্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে মুদ্রানীতির বর্তমান কৌশল আরও একটি প্রান্তিকে অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
সংক্ষেপে সিদ্ধান্ত
১। নীতির হার ১০ দশমিক ০ শতাংশেই থাকবে।
২। মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে নামা পর্যন্ত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে।
৩। ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিতকরণে আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ।
৪। রিজার্ভ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে রেমিট্যান্স ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ জোরদার।