দেশীয় প্রসাধনী শিল্পের রফতানি সম্ভাবনা বাড়াতে নীতিগত সহায়তা চান উদ্যোক্তারা

দেশীয় প্রসাধনী ও ত্বক পরিচর্যাকারী পণ্য শিল্পের টেকসই উন্নয়ন এবং রফতানিমুখী খাতে রূপান্তরের লক্ষ্যে কঠোর নীতিগত দিকনির্দেশনার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা। তাদের অভিযোগ, ভেজাল পণ্য, শুল্ক ফাঁকি, মূল্য কম দেখানো এবং অসাধু আমদানিকারকদের দৌরাত্ম্যে দেশীয় শিল্প খাত হুমকির মুখে পড়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাজধানীর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অব বাংলাদেশের (এএসবিএমইবি) আয়োজিত ‘কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার শিল্প খাতের রফতানি সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে এ দাবি জানান বক্তারা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলিম আখতার। তিনি বলেন, “ভোজ্যতেল, কসমেটিকস ও খাদ্যপণ্যে প্রতিনিয়ত মানের (কোয়ালিটি) প্রতারণা হচ্ছে। একদিন যাকে জরিমানা করা হয়, পরদিনই সে একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এই বাস্তবতা বদলাতে না পারলে শুধু জরিমানা দিয়ে কিছু হবে না।”

সেমিনারে এএসবিএমইবি’র সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দীন জানান, ভেজাল ও নিম্নমানের প্রসাধনী ব্যবহারে ভোক্তারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। পুরনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ বিদেশি পণ্য দেশে এনে নতুন করে স্টিকার লাগিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।

সংগঠনের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কালার কসমেটিকস খাতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। তবে প্রকৃত আমদানির পরিমাণ ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি হওয়ার কথা ছিল। ফলে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি হয়েছে বলে দাবি করা হয়। এদিকে গত অর্থবছরে আমদানিকারকরা সরকারকে রাজস্ব দিয়েছে মাত্র ১৭ কোটি টাকা, যেখানে দেশীয় একটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান একাই ১০০ কোটির বেশি রাজস্ব দিয়েছে।

সেমিনারে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের সহসভাপতি এম এস সিদ্দিকী বলেন, “দেশি ব্র্যান্ড পণ্য বাজারে এলেই আমরা দামাদামি করি, অথচ বিদেশি পণ্যে যত দামই হোক আপত্তি করি না। বেশিরভাগ কসমেটিকস পণ্যের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আনতে হয়, যার ওপর উচ্চ শুল্ক এখনও বহাল আছে। এই শুল্ক কমিয়ে দেশি উৎপাদন উৎসাহিত করতে হবে। একইসঙ্গে বিদেশি প্রস্তুত পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে অবৈধ আমদানি বন্ধ করতে হবে।”

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক ইসহাকুল হোসেন বলেন, “বিদেশে সরকার পণ্যের মান নির্ধারণ করে দেয়, আর বাংলাদেশে ব্যবসায়ীরাই সব কিছু করেন। সরকার শুধু কর আদায় করে। আমদানিনির্ভর বাজেটের পরিবর্তে দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় সরকারকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।”

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন— চিত্রনায়ক মামনুন হাসান ইমন, ত্বক বিশেষজ্ঞ শারমিনা হক, এসএমই ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আলী জামান প্রমুখ।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সরকার যদি এখনই কঠোর নীতিমালা ও কার্যকর নজরদারির ব্যবস্থা না নেয়, তবে দেশীয় প্রসাধনী শিল্প চিরতরে আমদানিনির্ভর হয়ে পড়বে। রফতানি সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অব্যবস্থাপনা ও অনৈতিক প্রতিযোগিতার কারণে পিছিয়ে পড়ছে একটি সম্ভাবনাময় খাত।