একই এলাকায় দীর্ঘদিন চাকরি নয়

অবৈধভাবে গ্যাসের বেচাকেনা ঠেকাতে একই এলাকায় দীর্ঘদিন চাকরির সুযোগ বন্ধ করা হচ্ছে। বিতরণ কোম্পানির যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী একই এলাকায় বছরের পর বছর ধরে চাকরি করছেন তাদের তাৎক্ষণিকভাবে বদলির আদেশ দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। জ্বালানি বিভাগের এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান এই আদেশ দেন।

জানতে চাইলে তিতাসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা এর আগেও এ ধরনের কর্মীদের বাছাই করে বদলি করেছি। কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার তারা নানাভাবে আগের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করে।’

প্রসঙ্গত, তিতাস ২০১৯ সালের জুলাই মাসে তিন শতাধিক এমন কর্মীকে বদলি করে।

জ্বালানি বিভাগ এর আগে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তাদের বদলির আদেশ দেয়। তিতাস গত বছর এই গণবদলি করে। কিন্তু অন্য বিতরণ কোম্পানিতেও একই কাজ চলার পরেও তারা দীর্ঘ দিন একই কর্মী নির্দিষ্ট বিতরণ এলাকায় রাখে। ফলে এক শ্রেণির গ্রাহকের সঙ্গে একটি দুষ্ট চক্র গড়ে তোলে এসব কর্মীরা।

বিতরণ কোম্পানি’র কর্মকর্তারা জানান, প্রত্যেকটি বিতরণ এলাকায় পাইপলাইন দেখভালের জন্য তাদের নির্দিষ্ট লোক রয়েছে। ফলে কোথাও পাইপলাইন সম্প্রসারণ হলে তার খবর সহজেই পাওয়ার কথা। কিন্তু বিতরণ কোম্পানির জানাশোনার বাইরে এসব পাইপলাইন এবং অবৈধ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য নয়। এসব অবৈধ কাজের সঙ্গে তাদের নিজেদের কর্মীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। একই এলাকায় একই মানুষ দীর্ঘ দিন কাজ করাতে এসব খুব সহজেই করা সম্ভব হচ্ছে। নিয়মিত এদের বদলি করলে কিছুটা হলেও এসব বন্ধ হবে। কিন্তু বিতরণ কোম্পানির কোথাও কোথাও কোনও কোনও কর্মী ৮/১০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, অবৈধ গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন করার পর আবার দেখা যায় সেটি জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। বিতরণ কোম্পানির লোকের সহায়তা ছাড়া এটি করা সম্ভব নয়। এজন্য জ্বালানি বিভাগ কঠোর হয়েছে। তারা মনে করছে, এসব কর্মীদের নিয়মিত বদলি করা হলে সিন্ডিকেট গড়ে উঠতে পারবে না।

জানতে চাইলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মো নুরুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই প্রক্রিয়া এমনিতে আমরা চলমান রেখেছি। দুই থেকে আড়াই বছর হলেই আমরা বদলির আদেশ দিচ্ছি। যাতে করে একই জায়গায় দীর্ঘদিন থেকে কোনও সিন্ডিকেট গড়ে তুলতে না পারে সেজন্য এটা করা হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছিল তাতে বলা হয়, তিতাসে একই এলাকায় দীর্ঘদিন কাজ করাতে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ওই প্রতিবেদনের একই এলাকায় দীর্ঘদিন কর্মচারীদের না রাখার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু যে কর্মকর্তারাই এর জন্য দায়ী তা নয়, ক্ষেত্র বিশেষে কর্মচারীরাও এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। সঙ্গত কারণে নিয়মিত বদলি শুধু কর্মকর্তাদের নয় কর্মচারীদেরও করা উচিত।

এ প্রসঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীদের বিষয়ে অনেক সময় আমরা চাপে পড়ি। বদলি করার পর আবার তারা স্বপদে বহাল হয়। এইক্ষেত্রে সিবিএ এর একটা প্রভাব আছে। যেটা আমরা একেবারে অগ্রাহ্য করতে পারি না।‘