‘ইয়াস’ আঘাত হানার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উদ্যোগ

ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় উপকূলীয় ১৮টি সমিতিকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। একইসঙ্গে দুর্যোগ মোকাবিলায় দক্ষিণ পশ্চিমের জেলাগুলোতে বিশেষ কমিটি গঠন করেছে বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানি ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। দুটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘ইয়াস’ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত হতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে ‘ইয়াস’ বয়ে যাওয়ার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায়।

গতবছর ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পরপর এই দুই বিতরণ কোম্পানির প্রায় ১ কোটি গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল। অধিকাংশ জায়গাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও কিছু কিছু এলাকায় স্বাভাবিক করতে কয়েকদিন লেগে যায়। একইসঙ্গে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল।

আরইবির সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন)  আমজাদ হোসেন বলেন, আরইবি প্রতিবারই ঝড়ের সময় উদ্যোগ নিয়ে থাকে। আমাদের পরিকল্পনা তিনভাগে বিভক্ত। ঝড়ের আগে,  ঝড়ের সময় এবং ঝড়ের পরের কাজ। ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ক্ষতি কমিয়ে আনা যায় শুধু সাবধানতা অবলম্বন করে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় বিদ্যুতের খুঁটির।  তাই আমরা বাড়তি খুঁটি পাঠাচ্ছি উপকূলীয় জেলাগুলোতে।  বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে গাছ ভেঙে রাস্তা বন্ধ হলে দ্রুত রেসকিউ করা যায় না। খুলনার ওয়্যারহাউজ থেকে অন্যান্য যন্ত্রপাতিও পাঠানো হচ্ছে। প্রত্যেকটি পিবিএস এ আলাদা আলাদা টিম গঠন করা হয়েছে। তিনি জানান, এসব কাজের মধ্যে আমাদের করোনা সংক্রমণের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হচ্ছে। সেজন্য আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কাজ করার নিদেশ দিয়েছি।

আরইবি জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন এলাকাগুলো হিসেবে করে ফরিদপুর, কুমিল্লা, কক্সবাজার, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলাসহ মোট ১৮টি পিবিএসকে ৫২১০টি কাঠের খুঁটি পাঠানো হয়েছে। খুঁটি ছাড়াও বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট যেসব যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার ভয় আছে যেমন, বিদ্যুতের তার, ট্রান্সফরমার, ইন্সুলেটর ইত্যাদির একটি তালিকা করে বাড়তি মজুত রাখতে পিবিএসগুলোকে নিদেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এসব মালামাল যাতে সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় যায় পৌঁছে সেজন্য আলাদা কন্ট্রোল রুম করেছে আরইবি। এছাড়া ঝড়ের পর কত ক্ষতি হলো, কোন কোন এলাকা এখনও বিদ্যুৎ পায়নি তা জানতে আলাদা মনিটরিং টিম একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তারা ২৪ ঘণ্টা কাজ করবে। এছাড়া আরইবির ৮০ টি পিবিএস এর আলাদা আলাদা কন্ট্রোল রুমে ফোন দিয়েও গ্রাহকরা তাদের সমস্যা জানাতে পারবে

পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব)  রতন কুমার দেবনাথ বলেন, গতবছরের ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময়ে যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল তা এবারও নেওয়া হয়েছে। আমাদের অধীনের জেলাগুলোর মধ্যে আছে, সাতক্ষীরা,  মোংলা, বাগেরহাট, পিরোজপুর,  বরগুনা, ভোলাসহ সব জায়গায় আমরা বাড়তি যন্ত্রাংশ পাঠিয়ে দিয়েছি। এছাড়া কিছু এলাকায় জনবলও বাড়ানো হয়েছে। তিনি জানায়, রাস্তায় গাছ পড়ে গাড়ি যেতে অসুবিধা হল যাতে তাৎক্ষণিক সহায়তা পাওয়া যায় সেজন্য আমরা স্থানীয় প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি। কেন্দ্রীয় ভাবে একটি এবং প্রতিটি সার্কেলে আমরা কমিটি গঠন করেছি।

ওজোপাডিকো জানায়, তারা এই ঝড় মোকাবিলায় চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে প্রধান করে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি প্রতিটি জোনাল সার্কেলে গঠিত কমিটির সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। ঝড় হলে তারা ২৪ ঘন্টা কাজে নিয়োজিত থাকবে।

এর বাইরে ইয়াসের প্রভাব পড়তে এমন উপকূলীয় এলাকায় কিছু বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (পিডিবি)। তারাও সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় জরুরি নির্দেশনা জারি করেছে।