কেন অস্বাভাবিক দামে বিদ্যুৎ কিনতে হয় পিডিবিকে?

দেশের একটি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছ থেকে গত অর্থবছরে ১৮১ টাকা ইউনিট দরে বিদ্যুৎ কিনেছে পিডিবি। সিরাজগঞ্জে তরল জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে প্যারামাউন্ট বিট্রাক এনার্জি লিমিটেড।

সম্প্রতি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) তাদের বাৎসরিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে কেন্দ্রটি থেকে ২ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৫৬৬ ইউনিট বিদ্যুৎ কিনেছে পিডিবি। যার মূল্য বাবদ পরিশোধ করেছে ৩৮৮ কোটি ৭০ লাখ ১৬ হাজার ৯৯৯ টাকা। অর্থাৎ, এক ইউনিটের দাম পড়েছে ১৮০ দশমিক ৬৭ টাকা।

এর আগেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্যারামাউন্টের এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয়েছিল ৯৪৪ টাকা ২১ পয়সা দরে। পিডিবি বলছে, ওই অর্থবছর কেন্দ্রটি ৩৭ লাখ ৫৬ হাজার ৮৭ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। যার জন্য পিডিবি পরিশোধ করেছে ৩৫৪ কোটি ৬৫ লাখ ৪১ হাজার ১০৫ টাকা। পরপর দুই বছরই দামি বিদ্যুৎ বিক্রির তকমা লেগেছে কেন্দ্রটির গায়ে।

প্যারামাউন্টের কেন্দ্রটি সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি তেল ডিপোর কাছে নির্মাণ করা হয়েছে। এক দশমিক ৬ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ১৩৫টি জেনারেটর আছে এতে। ডিজেলচালিত কেন্দ্রটি প্রতিদিন গড়ে উৎপাদন করতে পারে ২০০ মেগাওয়াট।

কেন এত দাম পড়ে?

প্রত্যেকটি কেন্দ্রকেই পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। যদি কোনও কারণে বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে ওই কেন্দ্রকে জরিমানা দিতে হয়। কিন্তু পিডিবি বিদ্যুৎ না নিলে জ্বালানি খরচ বাদ দিয়ে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট, অপারেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ পুরো অর্থই পরিশোধ করতে হয়। অর্থাৎ কোনও কেন্দ্র থেকে কম বিদ্যুৎ নিলে বিদ্যুতের দামও বেড়ে যায়। এক্ষেত্রেও এমনটা ঘটেছে। অনেক কেন্দ্র রয়েছে, যারা মোট উৎপাদন ক্ষমতার ২০ ভাগও উৎপাদন করে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত প্রয়োজনের বাইরে কেন্দ্র নির্মাণ করার কারণেই এ সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিটি কেন্দ্র নির্মাণের আগেই পিজিসিবি (পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি) থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। কোনও এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা কেমন, সেখানে আদৌ কেন্দ্র নির্মাণের প্রয়োজন আছে কিনা, এসবের ওপর নির্ভর করে কেন্দ্র নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়।

কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনও এলাকায় লোড কম থাকার পরও কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে কেন্দ্রগুলো চালানোর প্রয়োজনই নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপরিপক্ব পরিকল্পনাই এর জন্য দায়ী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি থেকে পিডিবি কবে বের হতে পারবে কেউ জানে না। যারা সুবিধাগুলো নিচ্ছে, তারা যতক্ষণ না নিজেরা সুবিধা নেবে না বলে ঘোষণা দিচ্ছে ততক্ষণ এ থেকে পরিত্রাণ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা এসব সুবিধা পাচ্ছে তারা এতই শক্তিশালী যে এর বাইরে যাওয়ার অবস্থা আমাদের নেই।’