বিদ্যুৎকেন্দ্রকে কয়লার পরিকল্পিত ব্যবহারের পরামর্শ

বড়পুকুরিয়া খনি বন্ধ থাকবে সাড়ে তিন মাস

বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রকে হিসাব কষে কয়লা খরচের অনুরোধ করেছে খনি কর্তৃপক্ষ। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে সাড়ে তিন মাস কয়লা পাওয়া যাবে না। গত ১ মে খনির পুরাতন ফেইজের কয়লা শেষ হয়েছে। নতুন ফেইজে স্থানান্তর করতে সাড়ে তিন মাসের মতো সময় প্রয়োজন হবে। খনি কর্তৃপক্ষের অনুরোধ না মানলে উত্তরের জনপদে ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকটের শঙ্কা তৈরি হতে পারে।

পিডিবি বলছে, বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অর্ধেক উৎপাদন করলেও প্রতিদিন তিন হাজার টন কয়লার প্রয়োজন হয়। কিন্তু খনি কর্তৃপক্ষ এই কয়লার জোগানও মাঝে মধ্যে দিতে পারে না। ফলে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণমাত্রায় চালানো যায় না।d02290966605d175e59bb284c93bc265-6143429b63499

এখন খনির দুটো ইয়ার্ডে দুই লাখ টন কয়লা রয়েছে। এই কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হিসাব কষে চালাতে খনি কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ করেছে। খনি কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বলা হচ্ছে—এখন প্রতিদিন দুই হাজার টনের বেশি কয়লা কেন্দ্রটি ব্যবহার করলেই শেষের দিকে গিয়ে বিপাকে পড়তে হবে।

কারণ হিসেবে খনি কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা হিসাব করে দেখেছি—প্রতিদিন দুই হাজার টন কয়লা ব্যবহার করলে কেন্দ্রটির ১০০ দিন যাবার কথা। কিন্তু সাড়ে তিন মাসে মোট সময় ১০৫ দিন। কোন কারণে ফেইজ পরিবর্তনের সময় বেশি প্রয়োজন হলেই কেন্দ্রটি বন্ধ রাখতে হবে। যা উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।

সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগের এক বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় আসে। সেখানে জ্বালানি সচিব মাহবুব হোসেন খনির ফেইজ পরিবর্তনের সময়সীমা সাড়ে তিন মাস থেকে ১৫ দিন কমিয়ে আনা যায় কিনা সে বিষয়ে ঠিকাদার কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করার নির্দেশ দেন।

ওই বৈঠকে জানানো হয়, সাধারণত ফেইজ পরিবর্তন করতে আড়াই মাস সময় প্রয়োজন হয়। কিন্তু এবার যন্ত্রাংশের এলসি খুলতে দেরির কারণে সাড়ে তিন মাস সময় প্রয়োজন হচ্ছে।

পিডিবি সূত্র বলছে, দেশের অন্য অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ যথেষ্ট পরিমাণ থাকলেও উত্তরাঞ্চলে তা নেই। ওই অঞ্চলে এখনও বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। ফলে অন্য এলাকা থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে গেলেও লো ভোল্টেজ সৃষ্টি হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, জ্বালানি পরিবহন অপেক্ষাকৃত জটিল হওয়ার কারণে সেখানে উদ্যোক্তারা কেন্দ্র নির্মাণ করতে খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। বড়পুকুরিয়া কেন্দ্রটি চালিয়ে বিদ্যুতের মান বজায় রাখা হয়।

এর আগে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে ফেইজ পরিবর্তন করার সময় বড়পুকুরিয়ায় বড় রকমের কয়লা চুরির বিষয় ধরা পড়ে। তখন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ রাখতে হয়েছিল। সরকার তখন কেন্দ্রটির জন্য কয়লা আমদানির চিন্তা করলেও পরিবহন ব্যবস্থা সুবিধাজনক না হওয়ার কারণে পরে সেই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি।

গত ১ মে খনির ১৩১০ ফেইজের কয়লা শেষ হয়ে যায়। এখন খনির ১৩০৬ ফেইজের কয়লা উত্তোলন করা হবে। এজন্য যন্ত্রাংশ স্থানান্তর করতে সাড়ে তিন মাসের মতো সময় প্রয়োজন হবে।

বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, গত ১ মে পুরানো ফেজের কয়লা শেষ হয়ে গেছে। এরপর নতুন ফেজ থেকে কয়লা তুলতে সম্ভাব্য সময় আমরা ধরেছি ১৫ আগস্ট। আমাদের এখানে দুইটা কোল ইয়ার্ড আছে। একটি খনির কাছে, অন্যটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে। দুই ইয়ার্ড মিলিয়ে প্রায় দুই লাখ টন কয়লা মজুত আছে। এই আড়াই মাসের গ্যাপে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কী পর্যাপ্ত মজুত আছে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন যদি দুই হাজার টন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়, তাহলে ১০০ দিন যাবার কথা। বিদ্যুৎকেন্দ্রে পরিকল্পিতভাবে কয়লা ব্যবহার করা হলে সংকট হবার কথা নয়।