হঠাৎ আলোচনায় কয়লানীতি

হঠাৎ কয়লানীতি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে সরকার। বিশ্ববাজারে কয়লার দাম বৃদ্ধির প্রভাব বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জ্বালানি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তবে এখনও এ বিষয়ে কেউ সরাসরি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছেন না।

জ্বালানি বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের কয়লা খনিগুলোর অবস্থান উত্তরের জেলাগুলোতে। দেশের বেশিরভাগ ধানও উৎপাদিত হয় এসব এলাকায়। জনবহুল এই এলাকার বিপুল পরিমাণ ফসলী জমি নষ্ট করে সরকার কয়লা তোলার পক্ষে ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববাজারে জ্বালানির উচ্চদরের কারণে সরকার বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছে। তিনি বলেন, কয়লানীতি নিয়ে কাজ হচ্ছে বলে সরকার এখনই কয়লা তুলবে বিষয়টি এমন নয়। সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, যাতে দেশ ও মানুষের কল্যাণ হয়।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে কয়লানীতি চূড়ান্ত করার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এজন্য ‘কয়লানীতি ২০০৮’ সালের খসড়াটি নিয়ে জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (অপারেশন) মো. আব্দুল খালেক মল্লিকের সভাপতিত্বে কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে খসড়া প্রণয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন নীতিটি চূড়ান্ত করা হবে।

সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগের বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হলে জ্বালানি বিভাগের সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার কয়লানীতির খসড়াটি দ্রুত চূড়ান্ত করার নির্দেশনা দেন।

সূত্র বলছে, ফুলবাড়ি বিক্ষোভের পর সরকার কয়লা উৎপাদন থেকে সরে আসে। দেশের একমাত্র খনি বড়পুকুরিয়া থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিং করে কয়লা তোলা হচ্ছে। কিন্তু এতে মাত্র মজুত কয়লার ১০ ভাগ উঠছে। বাকি ৯০ ভাগ মাটির নিচে থেকে যাচ্ছে।

এখন দেশে যে গ্যাসের প্রমাণিত মজুত রয়েছে তা দিয়ে আর মাত্র ১০ বছর চলবে। এরপর দেশে নতুন গ্যাসের মজুত চিহ্নিত করা সম্ভব না হলে সব জ্বালানি দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হবে। সরকারের পক্ষে নিত্যদিনের সব জ্বালানি আমদানি প্রায় অসম্ভব। কেবল জ্বালানি আমদানিতে সরকার সব বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করলে অন্য ব্যয় নির্বাহ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব বিষয় মাথায় রেখে সরকার নিজস্ব জ্বালানি অনুসন্ধানে জোর দিতে যাচ্ছে।

জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, এখন দেশের বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা, রামপাল, তালতলি (বরগুনা) আমদানি করা কয়লা দিয়ে চলছে। এরপর এসএস পাওয়ার এবং মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা প্রয়োজন হবে। সরকার কেন্দ্রগুলোকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি দিয়ে থাকে। কাজেই এক্ষেত্রে ডলার সংস্থানের দায় সরকারের ওপর বর্তায়। সরকার যদি দেশীয় উৎস থেকে কয়লা সরবরাহ করতে পারতো তাহলে বিপুল পরিমাণ ডলারের প্রয়োজন হতো না।

সূত্র বলছে, নীতি চূড়ান্ত হওয়ার পরও কয়লা তোলার বিষয়ে অনেক কাজ বাকি থেকে যাবে। আদৌ কয়লা উত্তোলন সাশ্রয়ী হবে কিনা তা বিবেচনা করতে হবে। কারণ, দেশের কয়লা খনিগুলোতে বেশিরভাগ কয়লা ৮০০ থেকে এক হাজার মিটার গভীরে রয়েছে।
দেশে এখন পর্যন্ত পাঁচটি কয়লা খনি আবিষ্কার হয়েছে। যা দিয়ে প্রতিদিন ১০ হাজার মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে ৫০ বছর কেন্দ্রগুলো চালানো সম্ভব হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।