ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণকাজ কতদূর?

সরকারের প্রথম ১০০ দিনের কর্মসূচিতে পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জ্বালানি বিভাগকে বলেছে— এ সময়ের মধ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ প্রকল্পের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করা হবে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এরই মধ্যে এই কাজে গতি এসেছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২০১০ সাল থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ২০১৭ সালে ফ্রান্সের কোম্পানি টেকনিপের সঙ্গে বিপিসি একটি চুক্তি সইও করে। কিন্তু এরপরও গত ছয় বছরে প্রকল্পটির দৃশ্যমান কোনও উন্নয়ন ঘটেনি। সরকার বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছে— প্রকল্পটির জন্য বৈদেশিক ঋণ না পাওয়ার কারণে এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি কোম্পানি বাংলাদেশের তেল পরিশোধনাগার নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে। তবে ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিটটি আকারে ছোট হওয়ায় তারা নির্মাণকাজে আগ্রহ দেখায়নি।

বছরে এখন ইস্টার্ন রিফাইনারির তেল পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন। নির্মাণাধীন নতুন ইউনিটের ক্ষমতা হবে ৩০ লাখ টন। অর্থাৎ নতুন ইউনিটের নির্মাণ কাজ শেষ হলে দেশের তেল পরিশোধন ক্ষমতা দাঁড়াবে মোট ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে।

জ্বালানি বিভাগের তথ্যমতে, দেশে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা ৬০ লাখ মেট্রিক টন। তবে সেচে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সঙ্গে বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রচলন হওয়ায় দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ার বদলে কমতে শুরু করেছে। একইসঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেলের ব্যবহার কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে তেলের চাহিদা আরও কমতে পারে।

অপরদিকে সরকার জ্বালনি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় করছে। ফলে দাম ওঠানামা করবে।

একইসঙ্গে বেসরকারি কোম্পানিকে তেল পরিশোধন এবং বাজারজাত করতে অনুমোদন দেওয়ার জন্য নীতিমালা তৈরি করেছে। এতে করে  দেশে জ্বালানি তেলের বাজারে সরকারের একক আধিপত্য থাকবে না বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

ইস্টার্ন রিফাইনারি (ছবি: সংগৃহীত)

ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. লোকমান জানান, প্রকল্পটির ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির সঙ্গে সরকার বেসরকারি কোম্পানি এস আলমকে যুক্ত করার বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, ইআরএল-এর দ্বিতীয় ইউনিট হবে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে। এস আলম গ্রুপ এবং ইআরএল এখানে যৌথভাবে বিনিয়োগ করবে। দেশীয় জ্বালানি কোম্পানির সঙ্গে বেসরকারি খাতের কোনও প্রতিষ্ঠানের এটি প্রথম অংশগ্রহণ। দেশীয় কোম্পানির সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ও এর মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসছে। এধরনের প্রকল্প নির্মাণে মূলধনী যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হয়। সাম্প্রতিক সময়ে নানামুখী সংকটের কারণে যা সংস্থান করা খানিকটা কঠিন বলেই বিবেচনা করা হচ্ছে।

ইআরএলের সূত্র বলছে, গত প্রায় এক দশক ধরে এই প্রকল্পে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু দাতা সংস্থা প্রকল্পটির বিষয়ে খুব আগ্রহ দেখায়নি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে—বিশ্বে জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তন আসছে। এ ধরনের একটি পরিশোধনগার সাধারণত ৫০ বছর বা তারও বেশি সময় সচল থাকে।

স্বাধীনতার আগে ইআরএল-এর প্রথম ইউনিট নির্মাণ করা হয়। সেটি এখনও তেল পরিশোধন করছে। কিন্তু আগামী ৫০ বছরে ডিজেল, পেট্রোল এবং অকটেনের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি থাকবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান রয়েছেন বিজ্ঞানীরা। নবায়নযোগ্য জ্বালানির দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটছে। ক্রমান্বয়ে এসব জ্বালানি সস্তাও হচ্ছে।