এক পরিপত্রের রেশ শেয়ার বাজারে

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একটি পরিপত্রকে কেন্দ্র করে ঊর্ধ্বমুখী থাকা শেয়ার বাজার নিম্নমুখী প্রবণতায় ফিরেছে। গত সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি কমেছে মূল্যসূচকও।

টানা চার সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকা এই বাজারে হঠাৎ ছন্দপতন ঘটে এনবিআরের একটি পরিপত্র জারির পর। ‘মূলধনি আয় বা ক্যাপিটাল গেইন করযোগ্য আয় হিসেবে পরিগণিত হবে’, এমন একটি পরিপত্র

গত বুধবার বিকাল থেকেই শেয়ার বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বৃহস্পতিবারও তাদের সেই বিভ্রান্তি ও দুশ্চিন্তা দেখা যায়। এর ফলে এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এক হাজার ২৪৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়, যা আগের দিনের চেয়ে ৬৪ কোটি টাকা কম। তবে বৃহস্পতিবার দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ২৮ পয়েন্ট বাড়ে।

বাজারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আগের টানা চার সপ্তাহের উত্থানে বাজার মূলধন ১৯ হাজার কোটি টাকার ওপরে বাড়লেও গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন আড়াই হাজার কোটি টাকা কমে গেছে।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবারের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার ১২৬ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ২ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা।

তথ্য বলছে,  বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। দেখা যাচ্ছে,  সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৯৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৩টির। আর ১০৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এদিকে এতে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৪৫ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ৫১ দশমিক ৪১ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে বেড়েছিল ১৫৩ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট। আর তার আগের দুই সপ্তাহে বেড়েছিল ১১৩ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট এবং ৯২ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট। এদিকে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহে কমেছে ২৯ দশমিক ৮২ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ৭০ দশমিক ৫২ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে বেড়েছিল ৩৮ দশমিক ৩১ পয়েন্ট। আর তার আগের দুই সপ্তাহে বেড়েছিল ৪৭ দশমিক ৩০ পয়েন্ট এবং ২৫ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট।

গত সপ্তাহে কমেছে ইসলামি শরিয়াহভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও। গত সপ্তাহে এই সূচকটি কমেছে ১১ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ৩২ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে বেড়েছিল ১৮ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট। আর তার আগের দুই সপ্তাহে বেড়েছিল ২৪ দশমিক ২৩ পয়েন্ট  এবং ২০ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবকটি সূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণও। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪১৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ১ হাজার ৮১৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৪০১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৭ হাজার ৮২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৯ হাজার ৯১ কোটি ২২ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ২ হজার ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

বাজারের তথ্য বলছে, গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে এই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯১১ কোটি ৬০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ।