জঙ্গিদের পাতা ছাঁটছি, শেকড় কতটা?

তুষার আবদুল্লাহ‘হিট স্ট্রং টুয়েন্টি-২৭’-এর উষ্ণতায় আছে দেশ। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার মূল পরিকল্পনাকারী তামিম চৌধুরীসহ তিনজন নিহত হয়েছে। কানাডা প্রবাসী তামিম চৌধুরীকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। শনিবার নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় একটি তিনতলা ভবনকে ঘিরে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিট এই অভিযান চালায়। সঙ্গে ছিল সোয়াত।
বলা হচ্ছে, এই বাড়িটিতে তামিম চৌধুরী ও জঙ্গিরা অবস্থান নিয়েছে জেনেই অভিযান পরিচালনা করা হয়। চল্লিশ মিনিটের অভিযানে দুই পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়েছে প্রচুর। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, কল্যাণপুরে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নেওয়া অভিযানের চেয়েও এবার বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। যার ফলে জঙ্গিদের দিক থেকে প্রচুর গুলি ও গ্রেনেড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটলেও, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা হতাহত হননি। অভিযান শেষে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘তামিম চৌধুরীর চ্যাপ্টার শেষ, অন্যরাও গ্রেফতার হবে।’
একথা বলা পর উপস্থিত সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার কারণে, জঙ্গি হামলার পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অজানা রয়ে গেল নাকি? তামিম চৌধুরীর চেয়েও ওপরের ধাপে থাকা কোনও পরিকল্পনা আড়ালে রয়ে গেল কিনা? এসব প্রশ্নের উত্তর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খু্ব একটা স্বাচ্ছন্দ্যে দিতে পারেননি। তিনি তথ্য অজানা রয়ে যাওয়া বা আরও পরিকল্পনাকারীর নাম জানতে না পারাকে আমলে নিতে না চেয়ে বললেন, গোয়ান্দাদের কাছে সব তথ্য আছে। এতে কোনও সমস্যা হবে না।
আমরা এর কিছু সময় পরেই কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ইউনিটের একজন কর্মকর্তাকে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতে দেখি। তিনি স্পষ্টভাবে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে স্বীকার করলেন, এই অভিযানের অতৃপ্তির কথা। ওই কর্মকর্তা বললেন, যদি তামিম চৌধুরীসহ অন্যদের জীবিত আটক করা যেত তাহলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেত। তামিম চৌধুরীর ওপরের ধাপে আরও কোনও পরিকল্পনাকারী আছে কিনা, যে তামিম চৌধুরীদের পরিচালনা করত, তার নামটিও হয়তো প্রকাশ্যে আসতো। ওই কর্মকর্তা দাবি করেন, তাদের লক্ষ্য ছিল জীবিত অবস্থায় সব জঙ্গিকে আটক করার, কিন্তু সেটা করতে না পারায় তিনি শতভাগ সফল মনে করছেন না অভিযানটিকে।

সন্দেহভাজন তিন জঙ্গি নিহত হওয়ার পর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সব কর্তারাই বলছেন, সব জঙ্গিকেই নির্মূল করা হবে। যারা পলাতক তাদের ধরতেও তৎপর আছে নিরাপত্তা বাহিনী। জঙ্গিবাদের সঙ্গে সরাসরি জড়িত সন্ত্রাসী এবং তাদের পেছনে থেকে যারা কলকাঠি নাড়ছেন, তাদের কিভাবে আটক করা হবে, তারা কোথায় আছে, এই বিষয়গুলো পুরোপুরি গোয়ান্দো বিভাগ, সর্বোপরি নিরাপত্তাবাহিনীর এখতিয়ারের বিষয়। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের নাক গলানোর প্রয়োজন নেই।
তবে যে প্রয়োজনটি আছে তা হলো, এ নিয়ে জনগণের ভাবনার বিষয়ে তাদের অবহিত করা। জনগণ বলতে চায়, নির্মূল প্রক্রিয়া বলতে শুধু যাদেরকে মাঠে-ময়দানে পাওয়া যাচ্ছে সৈনিক হিসেবে তাদের নয়। মাঠে অনেক কমান্ডারকেও পাওয়া যাচ্ছে, তাদের নির্মূল করেই স্বস্তির হাসি দিলে চলবে না। মেতে থাকা যাবে না এই সাফল্য এবং গৌরবে। যদি জঙ্গিবাদের সঙ্গে যে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদের সংযুক্তি রয়েছে, তা থেকে দেশকে যদি মুক্ত করা না যায়, তাহলে আমরা কেবল নির্মূল অভিযানের দর্শক হয়েই থাকব। হতে থাকব জঙ্গিবাদে আক্রান্ত।
আন্তর্জাতিক সংযুক্তির সুতোতে কাঁচি রাখতে গেলেই, পাওয়া যাবে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের স্থানীয় লিডারদের। হয়তো গোয়ান্দা বিভাগের কাছে সেই তথ্যও আছে। কিন্তু তথ্য সংগ্রহ করছি কতটা, আর সেই তথ্যমতো শেকড় উৎপাটন করা যাচ্ছে কতটুকু, তা এখন সাধারণের জানার আগ্রহের বিষয়। প্রশ্ন, আমরা পাতা ছেঁটে ফেলছি ঠিক, কিন্তু শেকড় নিরাপদ থেকে যাচ্ছে না তো?

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

আরও খবর: গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীসহ তিন জঙ্গি নিহত (ভিডিও)