দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের অধিকাংশ দেশই মনে করছে, ভারতের তুলনায় চীনা বিনিয়োগ ততটা আগ্রাসী নয়। চীন অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না ভেবেও তারা আশ্বস্ত থাকেন। কিন্তু মালদ্বীপের সঙ্গে সম্পাদিত এফটিপি এ অঞ্চলে চীনের উদ্দেশ্য ঘিরে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে।
৭ ডিসেম্বরে দেওয়া যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়ে যে, চীনা প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ব্যবস্থা নেবে মালদ্বীপ সরকার। অন্যদিকে, নিজ দেশের নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে মালদ্বীপে বিনিয়োগের জন্য উদ্বুদ্ধ করবে চীন। পাশাপাশি মালদ্বীপের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সহায়তা করবে তারা।
এ চুক্তির ফলে মাছ ছাড়াও মালদ্বীপের আরও প্রায় ৪০০ পণ্য চীনে প্রবেশের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। আর সীমিত শুল্কে মালদ্বীপে শিল্পপণ্য রফতানি করতে পারবে চীন। মালদ্বীপের শিল্পবিকাশ সেক্ষেত্রে চিরতরে রুদ্ধ হওয়ার শঙ্কা দেখছেন অনেকেই। আর মাছসহ মালদ্বীপের স্থানীয় পণ্যের বাজারেও চীনের পরোক্ষ বিনিয়োগ ঘটছে, ঘটবে। ফলে শুল্ক সুবিধা উভয় দিক থেকেই চীনারা ভোগ করবে।
প্রেসিডেন্ট ইয়ামিন নিজ ক্ষমতা দৃঢ় করতে এবং ভারতীয় প্রতিরোধ মোকাবিলায় এই চুক্তি করে চীনকে পাশে পেতে চাইছেন। তাছাড়া ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিরোধীদের মানবাধিকার প্রচারণার মোকাবেলা করতে হলে ইয়ামিনকে বৃহদাকৃতির কিছু উন্নয়ন প্রকল্প বা 'মেগাপ্রজেক্ট' সামনে নিয়ে আসতে হতো। কিন্তু ইয়ামিন যা করেছেন, তার ফল কী হবে?
যৌথ বিবৃতিতে মালদ্বীপ সরকার তার সকল পর্যায়ে এবং সকল বিভাগেই চীনের সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়ে সম্মতির কথা জানিয়েছে। এতে মালদ্বীপ সরকারের সকল পর্যায়ে চীনের প্রভাব আরও বেড়ে যাবে।
এমন সর্বগ্রাসী চুক্তি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। মালদ্বীপের জনগণের ওপর এটা এক বিরাট আঘাত, আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য ভয়াবহ এক অশনি সংকেত। চীন কি তাহলে দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে 'নয়া-উপনিবেশ' কায়েমে অগ্রসর? সম্প্রতি জিম্বাবুয়ের ক্ষমতা পরিবর্তনের পেছনেও চীনের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
লেখক: লেখক ও সাংবাদিক।