কাগজে ছাপা পত্রিকার পর রেডিও, টেলিভিশন ও অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো সংবাদ ও তথ্য পরিবেশনের নতুন যুগ সৃষ্টি করেছে। যিনি লেখাপড়া জানেন না বা চোখে দেখেন না, তার জন্যও এখন আর তথ্য বা খবর পাওয়া কঠিন নয়। তাই সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল– সব মিলিয়ে এখন সংবাদমাধ্যম; যা সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে তথ্যের আওতায় আনতে পেরেছে।
তথ্য যেহেতু শক্তি, তাই একটি গোষ্ঠী সবসময়ই চায় তথ্য গোপন করতে। তারা চায়, তথ্য কুক্ষিগত করে রাখতে। সাধারণ মানুষকে তথ্য থেকে দূরে রাখা গেলে তাদের অন্ধকারে রেখে অনেক কিছু হাসিল করতে পারে ক্ষমতালোভী গোষ্ঠী। এর মধ্য দিয়ে তারা সাধারণ মানুষকে অধিকারবঞ্চিত রেখে নিজেদের আখের গোছাতে পারে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে– সব তথ্যই কি শক্তি? আপাতদৃষ্টিতে তা মনে হতে পারে। কারণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তৃতি যেমন তথ্যকে সহজলভ্য করেছে, তেমনি যারা এই মাধ্যম ব্যবহার করেন, তাদের সবাই তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতা পেয়েছেন। তথ্যের প্রকাশ ঘটে টেকস্ট, ফটোগ্রাফ, অডিও, ভিডিও’র মাধ্যমে। আমরা মাঝেমধ্যেই দেখি, অনেক তথ্য যা নিয়ে তুমুল কথা হয়, কিন্তু পরে গুজব হিসেবে প্রমাণিত হয়। গুজব আসলে গুজবই। হয়তো সাময়িক সে প্রভাব বিস্তার করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে না। আর এই গুজব নানা অশান্তিরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সঠিক তথ্যকেই শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফেক নিউজ যেমন নিউজ নয়, তেমনি গুজব আসলে কোনও তথ্য নয়।
বাংলা ট্রিবিউন প্রকাশের প্রথম দিন থেকেই সম্পাদক হিসেবে তথ্যের যথার্থতার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছি। সম্পাদকীয় নীতিও সেভাবেই ঠিক করেছি। আমরা বলি, ভুল খবর দেওয়ার চেয়ে কোনও খবর না দেওয়া অনেক ভালো। তাই অনলাইনে আগে খবর দেওয়ার তথাকথিত প্রতিযোগিতায় আমরা নেই। আমরা আছি সঠিক খবর, ঠিক সময়ে ও অল্প কথায় দেওয়ার চেষ্টায়।
সব তথ্য পরিবেশন করা যাবে কিনা, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। তাই তথ্য নিশ্চিত হলেই তা সবসময় খবর হয় না। কতগুলো গেটকিপারের প্রশ্নের জবাবের উত্তরের ওপরই নির্ভর করে খবরটি প্রকাশ করা হবে কিনা। এরমধ্যে দুটি জরুরি প্রশ্ন হলো– ফেয়ার ও নেসেসিটি। কারও ব্যক্তিগত তথ্যের পাঠক থাকতে পারে, কিন্তু সেটা ফেয়ার নাও হতে পারে। আবার অনেক সঠিক তথ্য নেসেসারির মানদণ্ডে উত্তীর্ণ নাও হতে পারে।
বাংলা ট্রিবিউন চায় আরও পাঠকপ্রিয় ও জনপ্রিয় হতে। কিন্তু সেটা তথ্যের শুদ্ধতা ও যথার্থতার মধ্য দিয়ে। আমি মনে করি, সঠিক তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে হয়তো পাঠকপ্রিয় হতে সময় লাগে। কিন্তু একবার যদি কোনও সংবাদমাধ্যম তার তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে তাকে আর আটকানো সম্ভব নয়। চটকদার সাময়িক আর গ্রহণযোগ্যতা স্থায়ী। বাংলা ট্রিবিউন সেই স্থায়ী পাঠকপ্রিয়তার জায়গায় যেতে চায়।
আর এর মাধ্যমে আমরা পাঠকে সঠিক তথ্য দিতে চাই। সাধারণের ক্ষমতায়নের যে অস্ত্র সঠিক তথ্য, তা নিশ্চিত করে আমরা তাদের উন্নয়নের রোডম্যাপে সক্রিয় করতে চাই। চাই, সাধারণের অধিকার তথ্যকে সাধারণের জন্য মুক্ত করে দিতে।
লেখক: সম্পাদক, বাংলা ট্রিবিউন