বাংলাদেশ সামনের দিকে হাঁটবেই

আশরাফ সিদ্দিকী বিটুযে কোনও বিষয়ে নানা মত-পন্থা থাকবেই। এটাই স্বাভাবিক। পৃথিবীর আদি থেকে আজ পর্যন্ত তাই চলমান। কিন্তু পৃথিবী এগিয়েছে। আরও দ্রুত বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের কল্পনায় অধরা। তবু  সমালোচনা আছে, থাকবেই। মতপার্থক্য এক ধরনের সৌন্দর্য, যদি তার রস সুফল বয়ে আনে। তবু, সমালোচনার ঊর্ধ্বে ওঠা কঠিন। আমরা সমালোচনা সম্ভবত প্রিয় জাতি। উপদেশ দিতে পছন্দ করি। নিতে নয়। আমার কাছে মনে হয়, উপদেশ দেওয়া সবচেয়ে কঠিন। যদিও সমালোচনা আর উপদেশ এক বিষয় নয়, বিস্তর ফারাক! পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের দূরত্বের মতোই। এটা সবাই মানে যে কাজ করলে সমালোচনা হবেই। উপদেশও শুনতে হবে। সমালোচনা যদি এগিয়ে যাওয়ার পথকে মৃসণ করে, তবে সবার আগে তা গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু নিজেকে আড়াল করে অন্যকে সমালোচনা করা সমীচীন নয়। আমরা অন্যের দোষ ধরতেই বেশি ব্যস্ত। অথচ এরচেয়ে বেশি দোষে আমরা দুষ্টু। ক্রিটিক্যাল অ্যানালাইসিস থাকবেই, তবে এতে অন্যকে মাটিতে নামিয়ে ফেলার অবস্থা সৃষ্টি গ্রহণযোগ্য নয়।
সমাজ কোনও বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। সবার মিলে-মিশে বসবাস। ভিন্ন ভিন্ন মত-পথের সম্মিলন। রাষ্ট্রের নিজস্বতা আছে। আছে ঐতিহ্য, কৃষ্টি, চেতনা ও সম্প্রীতি। সমাজ সেটাকে ধারণ করে। সে বিষয়ে বিরুদ্ধাচরণ গ্রহণযোগ্য নয় বরং সমাজবিরোধিতার শামিল। আজকের বাংলাদেশ অনেক ত্যাগ ও সংগ্রামের সুফল। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে অনেক বন্ধুর পথ মাড়িয়ে এই বাংলাদেশ। আমাদের সবুজ-শ্যামল-সুনীল বাংলাদেশ। অত্যন্ত ভয়াবহ বিষয় হলো, এই বাংলাদেশ যারা চাননি, তারা আজও সক্রিয়-নানাভাবে নানারূপে। অনেকে জেনে বা না জেনে, বুঝে বা না বুঝে তাদের ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছে। আগেই বললাম, সমালোচনা থাকতেই পারে কিন্তু আমার জন্ম নিয়ে যে বিরোধিতা করবে, আমাদের স্বাধীনতার প্রশ্নে যাদের ভিন্নমত ও সরাসরি বিরোধিতা, তাদের বিষয়ে আমাদেরও শক্ত হতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ব্যত্যয় কিংবা ঘাটতির ব্যাখ্যা বিস্তৃত- সেটা কর্মপ্রয়াসের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু যারা সত্যকে প্রতিহত করলো, স্বাধীন রাষ্ট্রের বুকে ছুরি বসালো, তাদের মুখে কখনোই নীতি-আদর্শের কথা মানায় না। তাদের প্রত্যাখ্যানই শ্রেয়তর পন্থা, অথচ আমাদের অনেকেই অর্জনের বিষয়ে সন্দিহান হয়ে অপশক্তিকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রমোট করছেন।
এই ভূখণ্ডে হাজার বছর ধরে সব ধর্মের মানুষের বাস। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। আমাদের সেটা ধরে রাখতে হবে। আমাদের আছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, লালন ফকির, গৌতম বুদ্ধ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বাউল, সাধক- তারাই আমাদের সমৃদ্ধ করেছেন। প্রগতির পথে ধাবিত করেছেন। বিরোধিতাকারীরা কিন্তু গুল্মলতার মতোই পথের ধারে নিঃস্ব হয়ে পড়ে রয়েছে, সেই ইতিহাস আমাদের মননে ধরে রাখতে হবে।
আমরা যখন ছোট ছিলাম, সেই সময়ের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আগে অনেকে জুতা পরতো না, এখন জুতাহীন মানুষ পাওয়া মুশকিল। বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। উন্নয়নের ব্যাপক কর্মযজ্ঞের সুফল মানুষ উপভোগ করছে। আরও উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের জনগণ উপকৃত হবে। আমরা এখন উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। বড়ই গর্বের আর অহঙ্কারের। বিশ্ব আমাদের সুবিবেচনায় নিয়েছে। এই এগিয়ে যাওয়া ধরে রাখতে হবে। কোনও রাষ্ট্রই ব্যত্যয় বা উপসর্গহীন নয়। আমাদের কেউ কেউ নতুন নতুন উপসর্গকে দেশের ভেতরে, রাষ্ট্রের শরীরে বপন করছেন, নানান রূপে-ভঙ্গিমায়; এসব যারা বুনছেন কুফল তাদেরও সইতে হবে। তখন কিন্তু সমাজ, রাষ্ট্রের পাশাপাশি বড় ক্ষতি তাদেরও হবে। অগ্রযাত্রার সঙ্গে উপসর্গগুলো টিকতে পারেনি কোনও দিনও, ভবিষ্যতেও পারবে না। আমাদের এগিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনও পথ, পন্থা বা রানওয়ে নেই।
এতটুকু সবারই জানা, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না। আধুনিকতায় যারা অবিশ্বাসী, তাদের ইতিহাসে অবস্থান থাকেনি, থাকবেও না। আমাদের বাংলাদেশ এগিয়ে যাক, মানুষে মানুষে সৌহার্দ্যের বন্ধন দৃঢ় হোক, হতেই হবে। চেতনার বহ্নিশিখা আমাদের উদ্বুদ্ধ করবেই, সবার মঙ্গল হবে, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান বাড়বে। ভুল-ত্রুটি শুধরে চলব, এটা মানতেই হবে। কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার পথ রুদ্ধ করা যাবে না। যে আগেও আমার শত্রু ছিল, ভবিষ্যতে সে বন্ধু হওয়ার আশঙ্কা নাই বললেই চলে। তবু নিন্দুকের বান শুভকর্মের বানে হারিয়ে যাবে। আমরা যারা তরুণ তাদের এই বাংলাদেশকে চিনতে হবে, জানতে হবে, সমৃদ্ধি পথে এগিয়ে নিতে হবে। আমাদের বাংলাদেশ সামনের দিকে হাঁটবেই। শুভ কামনা!
লেখক: প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব