X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

শুধু পথই হারায়নি, হেঁটে চলেছে ভুল পথে

আশরাফ সিদ্দিকী বিটু
২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:১১আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:১১

দফা-দাবি থেকে হরতাল-অবরোধ, হরতাল-অবরোধ থেকে অসহযোগ, সঙ্গে অবরোধও। বলা যায় দফা-দাবি-অবরোধ-হরতাল-এই চক্রাকারে ঘুরছে তারা। তারা কারা তা সবারই জানা।
 
বলে রাখা ভালো, তাদের মিত্রদের সংখ্যা নিয়ে নানা কথা, শুরুতে ছিল ৩৪/৩৫টি নামসর্বস্ব দল, এবার তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬৩/৬৪ দলের জোট; যাদের অধিকাংশের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নেই। এমনকি জামায়াতেরও এখন নিবন্ধন নেই। যেমন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত মহাজোট ঠেকাতে অতীতে বিএনপি-জামায়াত ২০ দলীয় জোট করেছিল জোটে দল বা সমর্থন বেশি দেখাতে। একই মানসিকতা থেকে ২০ দলীয় জোটকে বড় দেখাতে ৬৩/৬৪ দলীয় জোট। এ জোটের অধিকাংশ দলের নামই জাতি জানে না।
 
বিএনপি নেতারা বলেছিল, ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে দেশ চলবে খালেদা জিয়ার কথায়, চলেনি। ব্যর্থতা!

এরপর টেকব্যাক স্লোগান- তাও চলেনি।

বিপ্লবী (!) নেতা চাঁদ প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিলো– এতে বিএনপিতে টানাপড়েন। ভেতরে বাইরে সমালোচনা। এটাও ব্যর্থ।

যুগপৎ আন্দোলনে তাদের তথাকথিত জোটের মাঝে কিছুদিন অস্থিরতা চললো- যুগপৎ হলো না। যদিও এখন বিএনপি কর্মসূচি ঘোষণা দিলে তার একটু পর জামায়াত একইরকম কর্মসূচি দেয়, তারপর নামসর্বস্ব দলগুলো সেখানে তাল মিলায়।

জামায়াতকে নিয়ে প্রথম দিকে কিছু আল্ট্রা-বাম অনুযোগ করলেও এখন জামায়াতকে তারা মেনে নিয়েছে। এতে আবারও এই দেশের রাজনীতিতে নীতি-আদর্শের তল্পিবাহক তথাকথিত বামদের চরিত্র নতুনভাবে পরিষ্কার হয়ে প্রকাশ পেলো সবার সামনে। সমতা-ন্যায্যতা-সমাজতন্ত্র এগুলো তাদের মুখের বুলি, কাজকর্মে ৩৬০ ডিগ্রি উল্টো তারা।

এখন সরকার ঠেকাতে, নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াত-অনিবন্ধিত নামসর্বস্ব কিছু দল-কর্মীহীন মিডিয়া সর্বস্ব কিছু উগ্র-বাম সব এক সারিতে। চলছে ঠেকানোর খেলা। এই ঠেকানোর খেলাতে তারাই ঠকছেন। মুখে হুমকি, ভেতরে আসলে হতাশা।

আসলো ২৮ অক্টোবর। এ তারিখ ঘিরে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সমমনাদের উচ্ছ্বাস। কর্মীরা ভেবেছিল সেদিনই সরকারের পতন হয়ে যাচ্ছে। তারা নয়াপল্টন থেকে যেন নির্বাচন ছাড়াই ক্ষমতায় চলে যাবে। লন্ডনের বার্তায় নয়াপল্টনে উৎসব! যেন ক্ষমতায় বসে যাচ্ছিল ২৮ তারিখ। হায় তাদের কর্মী, হায় তাদের কর্মসূচি! সব ময়দান ছেড়ে ঘরবাড়ি নিলো, আছে তারা হাইড-আউটসে।

ঘোর হয়তো কেটেছে কর্মী-সমর্থকদের, তবে পদ টেকানোর জন্য হরতাল-অবরোধে চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে।

পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করলো, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর করলো, পুলিশ হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুর। যেন গণেশ উল্টে নিজের ভুল চক্রে পড়ে নিজেরাই পরাভূত। নেতার ভুল বার্তায় নয়াপল্টন ছেড়ে এখন ঘুপচি ঘরে কর্মীদের অবস্থান।

হামলা সহিংসতা করলে মামলা জেল হবে স্বাভাবিক নিয়ম। যানবাহনে আগুন দিতে গিয়ে হাতেনাতে বিএনপির কর্মীরা আটক হচ্ছে, আগুনসন্ত্রাস তো কোন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নমুনা হতে পারে না।

হরতাল অবরোধের ঘোষণা দিয়ে নেতারা ডুব দিয়েছে, যেন সবাই শীতনিদ্রায়। হরতাল অবরোধেও সর্বত্র প্রাণচাঞ্চল্য, রাস্তায় যানজট। মহাসড়কে যানজট। তাহলে ফল দাঁড়ালো যে হরতাল অবরোধ দিয়েও তারা ব্যর্থ। জনগণ সঙ্গে নেই, কর্মীরাও ডুব।

বেশ কয়েক দিন তাদের নেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে আন্দোলনের অপচেষ্টা। অথচ ওনার চিকিৎসা চলছে তার পরিবারের ইচ্ছায়, আইনত বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই জেনেও হুমকি-ধমকি। এখনও চিকিৎসা নিয়ে নীরব; অভিযোগ যে শুধু বলার জন্য বলা ছিল, তা সবাই বুঝে নিয়েছে।

আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হলো নাশকতা। লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হলো রেলকে। ট্রেনে আগুন দেওয়া  হলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর তৎপরতায় বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে নাশকতাকারীদের পরিচয়।

মায়ের কোলে নিষ্পাপ শিশু ছিল ট্রেনে। মা ও শিশু দুজনে একত্রে পুড়ে অঙ্গার। পাশবিক, বর্বরোচিত!

এটা তো পরিষ্কার অবরোধ হরতালের কর্মসূচি না দিলে এমন অঙ্গার হওয়ার দৃশ্য জাতিকে দেখতে হতো না।

আগুনসন্ত্রাস, তাদের বিদেশি বন্ধু-প্রভুরাও (!) অবাক ও বিস্মিত। প্রভুরা যেন বিবেকের তাড়নায় চোখ বুজে গেলো। আর চোখ তো বুজতেই হয়, কারণ হত্যা সন্ত্রাসকে কেউ সমর্থন দেবে না। এখানেও জুটলো ব্যর্থতার ফলক।

বিএনপি নেতারা ভারতবিরোধী মনোভাবের নতুন সংস্করণ বাজারে ছেড়েছেন।

ময়মনসিংহ অঞ্চলে একটা কথা আছে ‘দিলে বালা না দিয়ে বেড়া ভাইঙ্গালা।’ একে একে বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্রদের সমালোচনা করে সেই বেড়া এখন ভাঙছে বিএনপি-জামায়াত।

নিজেদের ভাড়া করা লোক দিয়ে বিদেশে বিতর্কিত প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হচ্ছিল।  সময় মতো সঠিক উত্তর জুটলো। মানুষ দেখলো সত্য সঠিক পথেই হাঁটছে।

‘জনগণ জনগণ’ বলে ফেনা তুলে এখন চলছে অসহযোগের নামে জনগণকেই নবরূপে হেনস্তা করা। কেউ তো অসহযোগ মানছে না। মানবেও না। অসহযোগও নতুন ব্যর্থ কর্মসূচি।

গলা ফাটালেই কথা কানে তুলে না মানুষজন। কারণ, জনগণের ক্ষতি করে জনগণের সরকার বানাবেন বলে গলা ফাটালে কেউ পক্ষে থাকবে না। এটা খুব স্বাভাবিক।

নিজেরা ব্যর্থ হয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত সুশীল বুদ্ধিজীবীদের (!) দিয়ে বিবৃতি দেওয়াবেন, তা ধোপে টিকেনি। সংসদ ভাঙার কোনও যৌক্তিক কারণ বাস্তবে নেই। বিবৃতিতে তো সবার আগে জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করার আহ্বান জানানো উচিত ছিল। তা বিবৃতিতে নেই- এমন আরও কিছু অসঙ্গতি বিবৃতিকে হালকা করে দিয়েছে। এ এক নিষ্ফলা বিবৃতি।

কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের বিখ্যাত একটা উক্তি হলো, ‘পথিক তুমি পথ হারাইয়াছো।’ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তারা শুধু পথই হারায়নি, হাঁটছে ভুল পথে।

এখন তো শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা।  


লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
এবার এক লাফে স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ৬ হাজার টাকার বেশি
এবার এক লাফে স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ৬ হাজার টাকার বেশি
হাসান আজিজুল হক সাহিত্য পদক পেলেন ৬ গুণীজন
হাসান আজিজুল হক সাহিত্য পদক পেলেন ৬ গুণীজন
ঢাকার জ্যাম আর গরম নিয়ে প্রেমের গান!
ঢাকার জ্যাম আর গরম নিয়ে প্রেমের গান!
মানবিক গুণাবলি অর্জন ছাড়া শিক্ষা মূল্যহীন: আতিকুল ইসলাম
মানবিক গুণাবলি অর্জন ছাড়া শিক্ষা মূল্যহীন: আতিকুল ইসলাম
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ