ছবি শুধু ছবি নয়

রেজানুর রহমান

ছবিটার দিকে যখনই তাকাই তখনই নানা প্রশ্ন মাথায় আসে।দেশের শীর্ষ দৈনিকের প্রথম পাতায় ছবিটা ছাপা হয়েছে। রাস্তায় ট্রাফিক আইন মানার ক্ষেত্রে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে দায়িত্ব পালনরত তিন গার্ল গাইডস কর্মী একজন মোটরসাইকেল চালককে থামানোর চেষ্টা করছে। ছবি দেখেই বোঝা যায় মোটরসাইকেল চালক গার্ল গাইডস কর্মীদের পাত্তা না দিয়েই চলে যাচ্ছিলেন। মোটরসাইকেলটির পেছনের অংশ ধরে আছে একজন গার্ল গাইডস। সামনে পথ আগলে দাঁড়িয়ে আছে অন্য দুজন। বোঝাই যায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে  মোটরসাইকেলটি থামিয়েছে তারা। চালকের মাথায় হেলমেট আছে। তাহলে কেন তাকে থামানো হয়েছে? ছবির নিচে ক্যাপশন পড়ে আসল রহস্য উদ্ধার করা গেল। ক্যাপশনে লেখা ‘চালকের হেলমেট থাকলেও আরোহীর ছিল না’। চালক নিজেকে পুলিশের কর্মকর্তা পরিচয় দেন। জোর খাটিয়ে চলেও যাচ্ছিলেন। পরে জানা গেল, তার ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নেই...।

গত কয়েকদিনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের এ ধরনের অনেক ছবি দেখা গেছে রাস্তায়। ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ যদি রাস্তার আইন অমান্য করেন তাকেও শাস্তি পেতে হবে’ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে পুলিশ কর্মকর্তাদের এমন হুঁশিয়ারিমূলক বক্তব্য প্রকাশ ও প্রচারের পরও যখন আইন লঙ্ঘিত হয় তখনই মনে নানা প্রশ্ন জাগে। রাস্তার আইন যথাযথভাবে কার্যকর করার জন্য স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এই যে এতবড় একটা আন্দোলন করলো, কয়েকটা দিন রাস্তার আইন মানার ক্ষেত্রে সবাই বেশ ভদ্র হয়ে গেলেন। এখন আবার ‘যে লাউ সেই কদু’ অবস্থা। সমস্যাটা কোথায়? প্রসঙ্গ তুলতেই আমার এক বন্ধু একটা গল্প বললেন। ‘পাড়ার বাসিন্দা এক বয়স্ক ভদ্রলোক তরুণ ছেলেমেয়েদের সামনে পেলেই নানা বিষয়ে জ্ঞান দিতে ভুল করেন না। বাবারা সদা সত্য কথা বলিবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়িবে। সিনেমা দেখা হারাম। কাজেই কখনই সিনেমা হলের দিকে যাইবে না। হঠাৎ একদিন রাতে দেখা গেল ওই ব্যক্তি একটি সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে আসছেন। পাড়ার ছেলেরা তাকে ঘিরে ধরলো। জিজ্ঞেস করলো- আংকেল আপনি এটা কী করলেন? সিনেমা দেখা নাকি হারাম? ভদ্রলোক তাদের বোঝানোর চেষ্টা করে বললেন, বাবারা আমি যা বলি তোমরা সেটা করো। কিন্তু আমি যা করি তোমরা সেটা করতে যেও না।

রাস্তায় ট্রাফিক আইনের ক্ষেত্রে এই গল্পের বোধকরি কিছুটা প্রভাব আছে। তা না হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কেউ কেউ আইন মানছেন না কেন? একথা তো সত্য, আইন প্রণয়ন করলেই হবে না। আইন পালনের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকেই সবচেয়ে বেশি আন্তরিক হতে হবে। তাহলেই না সাধারণ মানুষ আইন মানার ক্ষেত্রে আগ্রহী হবে।

আবারও একটা ছোট গল্প বলি। এসএসসি পরীক্ষা আসন্ন। একটি স্কুলের পক্ষ থেকে ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে কোচিং ক্লাসের আয়োজন করা হয়েছে। দুই শিক্ষক বসবেন পাশাপাশি দুই ক্লাসে। স্কুলে নোটিশ দেওয়া হয়েছে ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন বিকেল ৫টায় কোচিং ক্লাস শুরু হবে। দেখা গেল দুই ক্লাসের একটিতে ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপক আগ্রহ। পাঁচটার আগেই সবাই ক্লাসে হাজির হয়। অন্য ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের তেমন কোনও আগ্রহ নেই। ঘটনা কী? খোঁজ নিয়ে দেখা গেল যে ক্লাসটিতে ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে তার শিক্ষক ৫টার আগেই ক্লাসে এসে বসে থাকেন। ফলে ছাত্রছাত্রীরাও ৫টার আগেই ক্লাসে হাজির হয়। অন্য ক্লাসের শিক্ষক কখনোই ৫টায় আসেন না। কখনও সাড়ে ৫টায় আবার কখনও ৬টায় আসেন তিনি। সে কারণে তার ক্লাসের ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীরা তেমন মনোযোগী নয়। অনেকেই সময় মতো ক্লাসে আসে না। এলেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না। অর্থাৎ এটাই প্রমাণিত আইন প্রণয়ন করলেই শুধু হবে না। যিনি আইনের রক্ষক তাকেও আইন মানতে হবে।

ছবির কথা বলছিলাম। এই মুহূর্তে সবার কাছে একটি ছবিই বোধকরি সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল এবং প্রেরণারও বটে। ছবিটি হলো দেশের ক্রিকেটের অন্যতম তারকা তামিম ইকবালের এক হাতে দেশের জন্য ক্রিকেট খেলা। ছবিটি যতবার দেখি ততবারই পুলকিত হই। এক হাতের কবজিতে মারাত্মক চোট পেয়েছিলেন আমাদের ক্রিকেটের রাজপুত্র তামিম ইকবাল। ফলে মাঠ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। মাঠে যখন বাংলাদেশের ব্যাটিং চলছিলো তখন তিনি হাসপাতালে। স্টেডিয়ামে ফিরে এসে দেখেন তখনও বাংলাদেশের ক্রিকেটের আরেক রাজপুত্র মুশফিকুর রহীম দুর্জয় সাহস নিয়ে বলা যায় একাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। শেষ ব্যাটসম্যান মোস্তাফিজুর আউট হওয়ার পর সবাইকে অবাক করে দিয়ে ভাঙা হাত নিয়ে ব্যাট করতে মাঠে নামেন তামিম। তার সাহসী ভূমিকার কারণে মুশফিকুর রহীম আরও বাড়তি ৩২ রান যোগ করেন বাংলাদেশের খাতায়। আহা! কী সেই লড়াই করা ছবি! যতবার দেখি ততবারই ভাবি দেশের জন্য আহা কী মায়া। আরও একটি ছবি হৃদয় ছুঁয়ে গেছে সবার। মুশফিকের চিবুক ছুঁয়ে স্নেহের পরশ বুলাচ্ছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের মূল কাণ্ডারি সবার প্রিয় ক্রিকেট কাপ্তান মাশরাফি বিন মর্তুজা। একটি পত্রিকায়  প্রকাশিত ছবিটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে ‘অধিনায়ক মাশরাফির এমন স্নেহমাখা দুষ্টুমিই বলে দিচ্ছে বাংলাদেশের বিজয় উৎসবের মধ্যমনি মুশফিকুর রহীম।’ ছবিটি দেখে আমার এক ক্রিকেট পাগল বন্ধু বললেন, মাশরাফি যে কত মহান ক্রিকেট তারকা এই একটি ছবি দেখেই তা বলে দেওয়া যায়। একই পত্রিকায়  প্রথম পাতায় তামিম ইকবালের সাথে বাংলাদেশের সাবেক কোচ হাথুরুসিংহের একটি ছবি ছাপা হয়েছে। ব্যান্ডেজ হাতে ঝুলিয়ে সাবেক কোচের সাথে কথা বলছেন তামিম। ছবি দেখেই বোঝা যায় ভাঙা হাতেও সাবেক কোচের সাথে তামিম কথা বলছেন বেশ স্বস্তির ভঙ্গিতে। কারণ, হাথুরুসিংহ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অনেকটা অসহায় করে দিয়ে চলে গিয়েছিলেন। দিন তো সব সময় একই রকম থাকে না। দিন বদলায়। তামিমের সাহসী চেহারাই বলে দিচ্ছে সে কথা।

খেলাকে ঘিরেই আরেকটি ছবির কথা বলি। ঢাকায় সাফ ফুটবলের ফাইনালের দিন দুবাইয়ে ছিল বাংলাদেশ বনাম শ্রীলংকার ক্রিকেট লড়াই। বাংলাদেশ জিতে যাওয়ায় দেশের প্রচার মাধ্যম বিশেষ করে সংবাদপত্রের পাতায় সাফ টুর্নামেন্টের খবর অনেকটাই চাপা পড়ে যায়। অথচ সাফ টুর্নামেন্টে এবার চমক দেখালো মালদ্বীপ। টুর্নামেন্টের প্রথম দিকে মালদ্বীপের পরাজয় চিত্র দেখে অনেকেই তাদের আর গোনার মধ্যেই রাখেনি। মালদ্বীপের ফুটবল কোচকে বহিষ্কার করার উড়ো খবরও বেরিয়েছিল। কিন্তু সেই মালদ্বীপই শেষ পর্যন্ত শক্তিশালী ভারত ফুটবল দলকে পরাস্ত করে সাফ-এর শিরোপা জিতে নেয়। মালদ্বীপের যে কোচের চাকরিই থাকে না সেই কোচকে মাথায় নিয়ে আনন্দ করেছে সে দেশের খেলোয়াড়রা। তার মানে একটি জয় বদলে দেয় অনেক কিছু। মালদ্বীপের কোচকে চ্যাংদোলা করে আনন্দ করার একটি ছবিই অনেক অহংকারের কথা জানান দিয়েছে। অর্থাৎ ছবিই কথা বলে- এই ছবিই তার বড় প্রমাণ।

কিন্তু অনেক ছবি আছে যা দেখে মনের ভেতরটা হাহাকার করে ওঠে। অনেক ছবি হয়ে ওঠে অসম্মানের, ব্যর্থতারও। এবার তেমনই কিছু ছবির কথা বলব, যা প্রকাশ হয়নি। কিন্তু রাতের আঁধারে এসব ছবি পরিবার ও সমাজকে করছে বিব্রত। অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন ভালো ছবির সাথে হঠাৎ খারাপ ছবির তুলনা কেন? যুক্তি একটাই, খারাপ ছবিগুলোকে পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেয়া জরুরি।

সত্যি বলতে কী, এ ধরনের বিব্রতকর ছবির মুখোমুখি হবো তা কখনও ভাবিনি। তাও আবার আমাদের এই প্রিয় রাজধানী ঢাকা শহরের রাস্তায়। শুধু প্রকাশ্য দিবালোক কথাটা লিখতে পারছি না। লিখতে হবে ঝলমলে রাতের ঢাকায় এ কেমন অশোভন দৃশ্যেরা হেঁটে বেড়ায়? দৃশ্য কি আদৌ হেঁটে বেড়ায়? নাকি দৃশ্যের মানুষেরা হাঁটে? এ তর্ক আপাতত থাকুক। আসল ঘটনা বলি। ছোট বোন আর তার মেয়েকে রাতের বাসে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য গুলশান নিকেতন থেকে উবারে করে রওনা দিয়েছি আসাদগেটের পাশেই উত্তরবঙ্গগামী একটি বাস কাউন্টারে উদ্দেশে। শনিবারের রাত। সাড়ে ৮টায়ও তেজগাঁও থেকে বিজয় সরণি অভিমুখী উড়াল সড়কের বুকের ওপর প্রচণ্ড জ্যাম শুরু হয়েছে। তাই পাকা ১৭ মিনিট উড়াল সড়কেই ঠাঁয় বসে থাকলো উবার। ভাগ্য ভালো গাড়ির বেতারযন্ত্রে দুবাইয়ে এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ধারাবিবরণী শোনার সুযোগ ছিল। গাড়ির তরুণ ড্রাইভারের মন খারাপ। শ্রীলংকার এঞ্জেলা ম্যাথুসের বোলিং বিষে বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল তার হাতের আঙুলে ব্যথা পেয়েছেন। মাঠ ছেড়ে গেছেন তিনি। মাঠ আঁকড়ে থেকে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে চলেছেন মুশফিকুর রহীম। উবারের তরুণ ড্রাইভার বারবার সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে প্রার্থনা করে চলেছে, ইয়া মাবুদ... বাংলাদেশ যেন জিতে যায়...

খেলার মাঝখানেই পৌঁছে গেলাম ওই বাস কাউন্টারে। বোন আর তার মেয়েকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে একবার উবার ডাকার কথা ভাবলাম। হঠাৎ মনে হলো অনেক দিন রাতের ঢাকায় হাঁটা হয় না। হেঁটেই কিছু দূর যাই। তারপর না হয় কোনও যানবাহনে সওয়ার হবো। গণভবনের পাশ দিয়ে বিজয় সরণি অভিমুখী সুন্দর রাস্তাটির ফুটপাত ধরে হাঁটতে থাকলাম। তখন রাত সোয়া দশটা। তুলনামূলক রাস্তায় গাড়ির চাপ কম। দিনের সেই গরম নেই। বরং ঠান্ডা বাতাস বইছে। হাঁটতে বেশ ভালোই লাগছে। ডানে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের জাতীয় সংসদ ভবন। বামে লেকের পাশেই গাছপালায় ঘেরা পার্ক। অবশ্য সেখানে পর্যাপ্ত আলো নেই। পার্কটিতে কেন পর্যাপ্ত আলো নেই ভাবতে ভাবতে চন্দ্রিমা উদ্যানের কাছে এসে থমকে দাঁড়ালাম। আবছা আলোয় কিছু মানুষের জটলা দেখা যাচ্ছে। রাস্তার পাশেই বিক্ষিপ্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে কিছু সিএনজি অটোরিকশা আর কিছু মোটরসাইকেল। একটু দূরেই দাঁড়ানো একটি পুলিশের টহল জিপ। একটু এগিয়ে যেতেই একদল নারী পুরুষের অবিন্যস্ত জটলা দেখে ভয়ে বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠলো। জটলার মানুষগুলোর ফিসফাস কথাবার্তা আর অশোভন ইঙ্গিত ও ভঙ্গিই বলে দিচ্ছে এখানে কি হতে চলেছে? পুরুষের তুলনায় মেয়েদের ডেমকেয়ার ভাব। অধিকাংশের মুখে কড়া মেকআপ। বেশভুষা অবিন্যস্ত। অপেক্ষমাণ মোটরসাইকেলে চড়ে কয়েকজন চলে গেল। ভয়ে বুকের ভেতরের কাঁপনটা এতটুকু কমেনি। বুঝে গেছি এখানে আসলে কি হচ্ছে। রাতের অন্ধকারে মেয়েদের শরীর ব্যবহারের দরদাম হচ্ছে। কিন্তু কোথায় হচ্ছে এসব? পাশেই আমাদের জাতীয় সংসদ ভবন। সে কথা ভেবেও একটু কি লজ্জা হচ্ছে না কারও? দূরে দাঁড়িয়ে আছে টহল পুলিশের গাড়ি। তারাইবা কি করছে? ভাবলাম, এখানে আর এক মুহূর্ত নয়। পাশেই অপেক্ষমাণ একটি সিএনজি অটোরিকশা চালককে বললাম, ভাই যাবেন...। সে কৌতুকপূর্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে শুধু হাসলো। তারপর নারী-পুরুষের সেই জটলার দিকে চোখ ফেরালো। মনে হলো সময়টাকে সে বেশ উপভোগ করছে।

সত্যি বলতে কী, সেখানে আর এক মুহূর্তও দাঁড়াইনি। যতদূর পারা যায় দ্রুতগতিতে হেঁটে বিজয় সরণির রাস্তায় এসে ভাবলাম এবার কোনও একটা বাহন খুঁজতে হবে। হঠাৎ মোবাইল কাজ করছে না। কাজেই উবারকে ডাকতে পারলাম না। সিএনজি অটোরিকশার জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু অটোরিকশাও নেই। অগত্যা বিজয় সরণির রাস্তা ধরে সামনের দিকে হাঁটতে থাকলাম। হঠাৎ বাম দিকে চোখ পড়তেই আবার ভয়ের পাশাপাশি বিস্ময়ের পালা শুরু হলো। বিজয় সরণির রাস্তার পাশেই দেয়াল ঘেঁষে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু নারী কাপড় দিয়ে একটা করে ঘের বানানোর চেষ্টা করছে। তাদের পাশে ঘুর ঘুর করছে কিছু পুরুষ। যাদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশি। কিছু দূর এসে দেখলাম উগ্র মেকআপ নেওয়া এক তরুণী আটসাঁট পোশাকে সাইকেল চালাচ্ছে। তার সাথে কৌতুকময় অশোভন কথাবার্তা বলছে কিছু পুরুষ। পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেন পুলিশের একজন সদস্য। কিছুই বললেন না। কৌতুহলী চোখে অসহায়ের মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছিলাম। হঠাৎ এক নারীর অশোভন শব্দবাণে চমকে উঠলাম- অয় ব্যাডা কি দেখোস? লাগবো নাকি...।

না, আর এক মুহূর্তও থাকিনি সেখানে। বাসায় ফিরে টিভিতে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ ক্রিকেটে শ্রীলংকার বিপরীতে বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় জয় দেখে ঢাকার রাতের দৃশ্যগুলো ভুলে যেতে চেষ্টা করি। কিন্তু পারি না। পরের দিন সকালে আবার ফিরে যাই সেই বিজয় সরণি ও জাতীয় সংসদ ভবনের পিছনের লেকের সেই রাস্তায়। দিনের আলোয় বোঝার উপায় নেই রাতের আলো-আঁধারি আলোয় এখানে প্রতিদিন কি কি ঘটে? নারী কীভাবে বিক্রি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল শুধু জাতীয় সংসদ ভবন ও বিজয় সরণি এলাকা নয়, রাজধানীর ফার্মগেট, দোয়েল চত্বর, পলাশী মোড়,, হাইকোর্ট, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তাসহ নগরীর অনেক ব্যস্ত এলাকায় রাতের আলো-আঁধারি পরিবেশে নারীর শরীর নিয়ে অশোভন সব কাণ্ডকারখানা চলে। ফলে রাতের ঢাকার প্রকৃত সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি অশোভন কার্যকলাপের সাথে জড়িত হচ্ছে তরুণেরা। অনিয়ন্ত্রিত যৌন সম্পর্কের ফলে এইডসসহ নানা প্রকার দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। একথা সত্য, যে নারী তার শরীর বেচে খায় ইচ্ছে করে সে এটা করে না। পরিবেশ-পরিস্থিতি তাকে এ ধরনের অবৈধ পথে যেতে বাধ্য করে। আবার অনেকে ইচ্ছে করেও নাকি এপথে পা বাড়ায়। যদিও এদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। শুধু রাজধানীর সৌন্দর্য রক্ষার জন্য বলছি না, নারীর মর্যাদা রক্ষার জন্য এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। রাতের এই অশোভন ছবিগুলোকে পরিষ্কার করা না গেলে ভালো ছবির মর্যাদা থাকবে না।

লেখক: কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, সম্পাদক- আনন্দ আলো।