দ্য ইকোনমিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বন্ধু কোনও পত্রিকা নয়। বরং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সময় তারা আওয়ামী লীগ সরকারের যথেষ্ট সমালোচক ছিল। তবে তাদের মতামত ও তথ্যভিত্তিক বক্তব্য ভিন্ন হয়। মতামতের ক্ষেত্রে তারা অনেক সময় ফার রাইট অর্থাৎ উগ্র ডানপন্থা না হোক সেন্টার রাইট বা মধ্য-ডানকে সমর্থন করে। আওয়ামী লীগের মতো উদার গণতান্ত্রিক দল বা ব্রিটেনের লেবার পার্টির মতো উদার গণতান্ত্রিক দল তাদের মতামত কলামে সমর্থন পায় কম। তবে সাংবাদিকতার যে কঠোর নীতি ব্রিটেনের প্রেস্টিজিয়াস পত্রিকাগুলো মেইনটেইন করে অর্থাৎ তথ্য পবিত্র এবং মতামত ফ্রি, দ্য ইকোনমিস্টও তার বাইরে নয়। তাই তথ্য-উপাত্ত যখন তাদের কাছে প্রমাণ করেছে ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসছে, তখন তারা সেটা লিখতে দ্বিধা করেনি।
দ্য ইকোনমিস্টের এই সংখ্যায় টপ টেন গ্রোয়ার্সের লিস্ট দিয়েছে। অর্থাৎ কোন দশটি দেশ এ মুহূর্তে জিডিপিতে শীর্ষ দশে রয়েছে। বাংলাদেশ তার ভেতর দ্বিতীয় অবস্থানে। প্রথমে রয়েছে সিরিয়া ৯.৯, তারপরে বাংলাদেশ ৭.৭ ( যদিও বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে এটা ৭.৮)। এরপরে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইন্ডিয়া ৭.৬। অন্যদিকে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়ের হিসাব দিয়েছে ১ হাজার ৮শ ১০ ডলার, মুদ্রাস্ফীতি মাইনাস (-) ৪.৮। অর্থাৎ দ্য ইকোনমিস্ট দেখতে পাচ্ছে বাংলাদেশ শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় এখন অর্থনীতিতে ভালো করছে না, পৃথিবীর সেরা দশ জিডিপি অর্জনকারী দেশের ভেতর বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। তাই এমন একটি দেশের পরবর্তী নির্বাচনের ফলাফলের জন্যে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে একটি সিদ্ধান্তে যেতে তাদের কোনও কষ্ট হয়নি।
তাছাড়া সম্প্রতি ইউরোপ ও এশিয়ায় বেশ কয়েকটি নির্বাচন হয়ে গেছে। আবার পৃথিবীর বৃহত্তম পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেটিক দেশ ইন্ডিয়ার নির্বাচন সামনে। সেখানেও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনগণের মতামত একটি আকার নিচ্ছে। এছাড়া এশিয়ার আরও একটি বড় দেশ ইন্দোনেশিয়ার নির্বাচন সামনে। নির্বাচন সামনে থাইল্যান্ডের। এসব দেশের অর্থনৈতিক উপাত্ত ও মানুষের মনোভাব বিবেচনা করে নানান লেখা আসছে ইকোনমিস্টের বিভিন্ন সংখ্যায়। সেখানেও নানান বিচারের একটি সূচক হচ্ছে বাংলাদেশ। আর যে নির্বাচনগুলো হয়ে গেছে আর যেগুলো হবে সবখানেই একটা বিষয় কমন পাওয়া যাচ্ছে, এ মুহূর্তের তরুণ সম্প্রদায় ভিশনারি নেতা পছন্দ করে। কারণ, বর্তমান বিশ্ব প্রতি মুহূর্তে এগিয়ে যাওয়ার। এখানে তরুণ সম্প্রদায় সবখানে তাদের সেই নেতাকে পছন্দ করছে যিনি দেশকে, দেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে পারবেন ও দেখাচ্ছেন। এমনকি এই মুহূর্তের পৃথিবীর অন্যতম চিন্তানায়ক যুবাল নোহা হারিরিও দ্য ইকোনমিস্টের এই সংখ্যায় ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে তাকেই ভোট দিতে বলেছেন, যিনি ভিশনারি অর্থাৎ স্বপ্ন দেখেন ও দেখাতে পারেন।
বাংলাদেশে এ মুহূর্তে বাস্তব সত্য হলো যে ক’জন নির্বাচনের মাঠে নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, এরমধ্যে শেখ হাসিনাই শুধু সহজাত নেতা নন, তিনিই একমাত্র ভিশনারি নেতা। তিনি স্বপ্ন দেখাতে পারেন, স্বপ্ন দেখেন। এবং গত দশ বছরে স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে দেশকে গোটা পৃথিবীর জিডিপি উন্নয়নের সেরা দশের তালিকায় দুই নম্বরে নিয়ে এসেছেন। তার বিপরীতে খালেদা জিয়া শুধু অশিক্ষিত ও দুর্বল নেতা নন, তিনি স্বপ্ন দেখতে ও দেখাতে জানেন না। তিনি দশ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রিত্ব করেছেন কিন্তু দেশকে কিছুই দিতে পারেনি। আজ দ্য ইকোনমিস্ট যেটা বলছে, শেখ হাসিনা অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করে উৎপাদনের ধারা ঠিক রেখেছেন। এর মূলে কিন্তু বিদ্যুতে বিনিয়োগ। খালেদা জিয়ার দুই টার্মেই দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি তো দূরে থাকুক কমে গিয়েছিল। এমনকি দশ বছর বিরোধী দলে থেকেও তিনি জাতিকে বা তরুণ সম্প্রদায়কে স্বপ্ন দেখানোর মতো কোনও কর্মসূচি সামনে নিয়ে আসতে পারেননি। অন্যদিকে তার ছেলে তারেক রহমানকে যত না নেতা হিসেবে গণনায় ধরে, তার থেকে বড়মাপের গডফাদার হিসেবেই সারা পৃথিবী তাকে গণনায় নেয়। এর বাইরে বিএনপি ও জামায়াতকে রক্ষা করতে যে কামাল হোসেন তার এতদিনের সব পর্দা ফেলে দিয়ে, মুখে যে কথা বলেন তার বিপরীত অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছেন, তিনি বাস্তবে বয়সের তুলনায় একজন অতি বৃদ্ধ মানুষ। স্বপ্ন তো দূরে থাকুক, তার ভেতর কোনও ভবিষ্যৎ চিন্তা নেই। তিনি শুধু যেহেতু পাকিস্তানপন্থী একজন মানুষ তাই বাংলাদেশে পাকিস্তানের মূল স্তম্ভ খালেদা ও তারেক যখন সর্বোচ্চ বিপদে তখন তাদের রক্ষার জন্যে লাঠি ভর দিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। পথশ্রান্ত এই পথিকের সত্যি অর্থে কোনও স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা নেই। তিনি জীবনের ৩৩ বছর বয়সে একবার গাওয়া ঘি দিয়ে ভাত খেয়েছিলেন, সেই হাতই বারবার শুঁকে চলেছেন। মুখে তার একটি কথাই, সংবিধান অনুযায়ী ১৬ কোটি মানুষ দেশের মালিক। এ কথা সবাই জানেন। কতবার শুনবে। তাছাড়া ডাল রান্না করতেও সংবিধান টেনে আনলে মানুষ তখন বিরক্ত হয়। কারণ, সংবিধান অনেক ওপরের, প্রতিদিনের চাল ডালে সংবিধান আনার অর্থই হলো সংবিধানকে অবমূল্যায়ন করা। মূলত এই সংবিধান কমিটির ৩৪ জনের একজন থাকা ছাড়া ড. কামালের কোনও পরিচয় নেই। দেশের জন্যে আর কখনও কিছু করেননি তিনি। এমনকি দেশের হয়ে তেল কোম্পানির মামলাগুলো করতে গিয়েও তিনি অধিক ফিস নিয়েছেন। তাই সংবিধান ছাড়া তার বলার কিছু নেই।
অন্যদিকে শেখ হাসিনা শুরু থেকে এ জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়ে আসছেন। ২০০৯ থেকে একের পর এক স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে আসছেন। প্রতি মুহূর্তে জাতিকে নতুন নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। যার ফলে আজ সাকিব আল হাসানও বলেন, তিনি ক্রিজে গিয়ে যেমন দেশকে জিতিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখেন, শেখ হাসিনা তেমনি প্রতিমুহূর্তে দেশকে জিতিয়ে চলেছেন। বাস্তবে শেখ হাসিনাই এখন একমাত্র বাংলাদেশে ভিশনারি নেতা। তিনি নিজের কোনও স্বার্থে আগামী নির্বাচনে জনগণের কাছে ভোট চাচ্ছেন না। সাকিব আল হাসানের ভাষায় বাংলাদেশকে জিতিয়ে দেওয়ার জন্যে ভোট চাচ্ছেন। বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্যে ভোট চাচ্ছেন। অন্যদিকে বিএনপি ও কামালরা ভোট চাচ্ছেন দুর্নীতি মামলা থেকে খালেদার মুক্তির জন্যে। অর্থাৎ একদল ভোট চাচ্ছে ব্যক্তিস্বার্থে আরেক দল ভোট চাচ্ছে দেশকে, দেশের মানুষকে জিতিয়ে দেওয়ার জন্যে। অর্থাৎ শেখ হাসিনা এবার ভোট চাচ্ছেন জিডিপিতে পৃথিবীর সেরা দশের তালিকায় দুই নম্বর থেকে এক নম্বরে ওঠার জন্যে। আর এ জন্যেই দ্য ইকোনমিস্টের বক্তব্যই সঠিক হবে। ৩০ ডিসেম্বরে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগই আবার মেজরিটি নিয়ে ক্ষমতায় আসবে। কারণ, কোনও ব্যক্তির জন্যে মানুষ ভোট দেবে না। মানুষ ভোট দেবে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্যে। দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দেশ হওয়ার জন্যে। কোনও একদিন পৃথিবীর সেরা দেশ হওয়ার জন্যে।
লেখক: সাংবাদিকতায় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত