নির্বাচনের আগে ও পরে ড. কামালের নিরাপত্তা

স্বদেশ রায়ঘটনা প্রবাহ যেদিকে এগিয়েছে তাতে এ মুহূর্তে জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে ড. কামাল হোসেনের কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কারণ, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করছে এটা এখন সময়ের বিষয় মাত্র। দেশের জনমত সেটা বলে দিচ্ছে। যার ফলে নির্বাচনের ভেতর দিয়ে আওয়ামী লীগকে হঠানোর যে আশা জামায়াত ও বিএনপি করেছিল সেটা তাদের শেষ হয়ে গেছে। তারেক রহমানের দেশে ফেরার আশাও শেষ। ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পরে, বিশেষ করে ড. কামালের কথাবার্তা শুনে তারেক রহমান এতটাই আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন যে, তিনি লন্ডনে তার ইনকাম ট্যাক্স  ল’ইয়ার মামুন রহমানকে বলেছিলেন, নির্বাচনের পরে তিনি আর মামুন রহমান একসঙ্গে দেশে ফিরবেন। এখন তারেক রহমান দেখতে পাচ্ছেন তার সে আশা বাস্তবে দুরাশায় পরিণত হয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবে তারেক রহমান তার শেষ পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছেন।
এই নির্বাচন ঘিরে তারেক রহমান কয়েকটি স্তরের পরিকল্পনা তৈরি করে নেমেছিলেন। যদিও বলা হচ্ছে বা জানা যাচ্ছে এগুলো তারেক রহমানের পরিকল্পনা, বাস্তবে এগুলো সবই আইএসআই ’র পরিকল্পনা। তাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথমে ছিল নির্বাচন। তারা মনে করেছিল আওয়ামী লীগ দশ বছর ক্ষমতায় আছে তাই স্বাভাবিকভাবে তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দুই, তারা বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্ব দেখে মনে করেছিল আওয়ামী লীগ অন্তকোন্দলে জর্জরিত। নির্বাচনে নামার পরেই তাদের সে আশা ভঙ্গ হয়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের উন্নয়নে খুশি। সর্বোপরি খুশি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। এবং জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার বিপরীতে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। শুধু এখানেই শেষ নয়, শেখ হাসিনার এই জনপ্রিয়তা প্রায় সত্তর ভাগের কাছাকাছি। আর ভোটের রাজনীতিতে গিয়ে এই জনপ্রিয়তা আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় রূপান্তরিত হচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের দলীয় কোন্দল নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলে বিএনপি জামায়াত যে হিসাব করেছিল সেটাও ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ে যাই থাকুক না কেন, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করতে হবে নির্বাচনের ভেতর দিয়ে এ প্রশ্নে সকলে তারা এক।

তাই নির্বাচনের ভেতর দিয়ে আওয়ামী লীগকে হঠানোর পরিকল্পনা জামায়াত-বিএনপির শেষ হয়ে গেছে। এরপরে তাদের পরিকল্পনা ছিল নির্বাচনের ভেতর দিয়ে তাদের পক্ষে একটা মোটামুটি জোয়ার সৃষ্টি করে, মানুষ জাগিয়ে তুলে নির্বাচনের দিন একটা পর্যায়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে সারা দেশে রাজপথে মানুষ নামানো। এর পাশাপাশি তারা মনে করেছিল নির্বাচনের আগে ঢাকায় তারা যে মূল জনসভাটি করবে সেখানে তারা অবস্থান নেবে গণজাগরণ মঞ্চের স্টাইলে। তাদের দাবি হবে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে এ অবস্থান। এই অবস্থান বর্তমান রেখে ভোটের দিন দুপুরের দিকে ভোট থেকে সরে এসে সারা দেশে স্থানীয় পর্যায়ে তাদের মানুষকে অবস্থান নেওয়ানো। অর্থাৎ গণজাগরণ মঞ্চ যেমন সারাদেশে হয়েছিল তারাও তেমনি সারাদেশে এই কাজ করবে। পাশাপাশি ৫ মে’র হেফাজত স্টাইলে নেমে যাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জামায়াতের কর্মীরা তাদের সহিংসতা নিয়ে। এভাবে ভোটের দিনেই দেশকে চরম নৈরাজ্যকর অবস্থায় নিয়ে যেতে চেয়েছিল জামায়াত -বিএনপি। বাস্তবে এটাও তারেক রহমান ও আইএসআই-এর পরিকল্পনা। তাদের এ দ্বিতীয় পরিকল্পনাও ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, তারা নির্বাচনের প্রচারের মাধ্যমে সারা দেশে ন্যূনতম মানুষ নামাতে পারেনি। অন্যদিকে হয়তো ঢাকায় তাদের এই অশুভ উদ্দেশ্য জানতে পেরে সরকার তাদের জনসভা করার অনুমতি দেয়নি।

তাই এখন তাদের হাতে আছে তৃতীয় পরিকল্পনা। তাদের এই পরিকল্পনা হলো ড. কামালকে হত্যা করে দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাওয়া এবং আন্তর্জাতিকভাবে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। এ পরিকল্পনা থেকে তারা এখনও সরে আসেনি। তারা নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিনে এবং নির্বাচনের পরে সপ্তাহ খানের ভেতর ড. কামালকে হত্যা করতে পারে। তবে তাদের পরিকল্পনায় রয়েছে নির্বাচনের একদিন আগে, নির্বাচনের দিন বা পরের দিন ড. কামালকে হত্যা করা। এ কাজে তারা বেশ কয়েক ধরনের প্রশিক্ষিত হত্যাকারী এমনকি হিউম্যান বোম পর্যন্ত ব্যবস্থা করেছে। এবং এখান থেকে তারেক রহমান ও আইএসআই এখনও পিছিয়ে আসেনি।

এ কারণে এই মুহূর্তে সরকারের উচিত হবে অবিলম্বে ড. কামালের কয়েক স্তরবিশিষ্ট বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। তার চলাচল সীমিত করা। তার সঙ্গে জামায়াত বিএনপির লোকেরা যাতে হরহামেশা ও বিনা তল্লাশি ছাড়া দেখা করতে না পারে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। মূলত ড. কামালের নিরাপত্তা এখন কঠোরভাবে সরকারের হাতে নিয়ে নেওয়া উচিত। তা না হলে তারেক রহমান ও আইএসআই ‘র নেতৃত্বে আরেকটি ২১ আগস্টের থেকে বড় ঘটনা ঘটানো হতে পারে। এবং শুধু যে ড. কামাল হোসেনকে হত্যা করা হবে তা নয়,তার সঙ্গে যাতে আরও কিছু ঐক্যফ্রন্টের ও বিএনপির নেতা নিহত হয় সেভাবেই হামলা চালানোর পরিকল্পনা তাদের। সে কারণে এখন থেকে সরকারের উচিত হবে না ড. কামালের কোনও রাজনৈতিক প্রোগ্রাম করতে দেওয়া বা ড. কামালেরও উচিত হবে না কোনও প্রোগ্রাম করা। কারণ, জামায়াত ও জঙ্গিদের যে হিউম্যান বোম আছে তা জামায়াত বিএনপি আমলে গাজীপুরের আদালতে হামলার ভেতর দিয়ে দেখা গিয়েছিল। আর হিউম্যান বোমকে ঠেকানো প্রায় দুঃসাধ্য বলা যায়। তাছাড়া তারেক রহমানের একুশে আগস্ট করার অভিজ্ঞতা আছে। এর পাশাপাশি সরকারের খেয়াল রাখা প্রয়োজন ড. কামালের বাসস্থান নিরাপদ কিনা? কারণ, তার বাসস্থান দোতলা। চারপাশে হাইরাইজ বিল্ডিং। যেকোনও হাউরাজই বিল্ডিং থেকে তার বাসায় হামলা চালানো সম্ভব। সব মিলে সরকারের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে অবিলম্বে ড. কামালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। তা না হলে যেকোনও মুহূর্তে তাকে হত্যা করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে তারেক রহমান ও আইএসআই । মনে রাখা দরকার আইএসআই  এবং তারেক রহমান এখন মরিয়া। এই একমাত্র অস্ত্রই এখন তাদের হাতে আছে।

লেখক: সাংবাদিকতায় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত