বাজেট অনুমোদনের চার ঘণ্টার মধ্যে বিইআরসি ঘোষণা দেয়, ১ জুলাই থেকে গ্যাসের দাম আরো এক দফা বাড়ানো হবে। গৃহস্থালির রান্নার কাজে দুই চুলার গ্যাসের দাম মাসে ৮০০ থেকে ৯৭৫ টাকা, আর এক চুলার ৭৫০ থেকে ৯২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সিএনজি গ্যাসের দাম বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটার ৪৩ টাকা করা হয়। সব খাত মিলিয়ে গড়ে গ্যাসের দাম বাড়ে ৩২.০৮ শতাংশ। এর আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়। এবারো গ্যাসের দাম বাড়ানোর আগে নিয়মমাফিক গণশুনানি হয়েছিল। কিন্তু গণশুনানির ফল কর্তৃপক্ষ আদৌ শুনে বলে মনে হয় না। হলে অন্তত সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করতো। গ্যাসের দাম বাড়ানো নিয়ে হাইকোর্টে মামলা হয়েছে। সেই মামলার বাইরে গিয়ে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। সুতরাং সেটাও অবৈধ, বেআইনি এবং আদালত অবমাননা। তারা সংসদকে অবমাননা মানেই জনগণকে অবমাননা। এবারও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির শুরুতেই বিরোধিতা করেছে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ক্যাব। আমাদের দেশে বাজেটের পরপর সবকিছুর দাম বাড়তেই থাকে। বাজেটের কারণে যে জিনিসের দাম কমার কথা, সেটিরও বাড়তে থাকে। বাজেট পাস বা বাস্তবায়নের আগেই সেই যে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, তা কিন্তু আর কমে না। এতে করে যত দুর্ভোগ ভোগ করতে হয় সাধারণ মানুষকে। তাহলে কেন তারা প্রতিবাদ জানায় না। এর কারণ প্রতিবাদের ভাষা এখন আর হরতালে সীমাবদ্ধ নেই। বামজোট যতোই জনস্বার্থে হরতাল ডাকুক না কেন, তারা সেভাবে সাধারণ মানুষের কাছে এর উপযোগিতা পৌঁছে দিতে পারেনি। তাই সাধারণ মানুষের যে ক্ষোভ রয়েছে, সেটিকেও তারা উসকে দিতে পারেনি। কিন্তু ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা গেলো চলমান সংসদ অধিবেশনেও।
সংসদকে না জানিয়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যও। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন জোটের শরিকরা। এটি অবশ্য শুভ লক্ষণ। কৃষিমন্ত্রীও পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিয়েছেন সাধারণ মানুষ যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিষয়টি। জাতীয় পার্টি, বিএনপি সমালোচনা করেছে সংসদে। ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন তো ক্ষোভ জানিয়ে সংসদে বিধি মেনে যে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল আলোচনার জন্য তা না মানায় নালিশ জানিয়েছেন স্পিকারের কাছে। এই যে জনগণের লাভটা বুঝতে না পারা, এর প্রভাব পড়বে সরকারের জনপ্রিয়তাতে। কিন্তু সেটি বোধহয় মানতে রাজি না সরকারের অনেক মন্ত্রী। হরতালের দিন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ফের হরতাল নিয়ে রঙ্গরসিকতা করলেন। হরতালে মরিচা ধরেছে এমন মন্তব্য করে তিনি জানালেন, ভোটের রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে তারা এখন রাজনীতি করেন না। তারা রাজনীতি করেন, সঠিকভাবে, বাস্তবসম্মত, যুক্তিসঙ্গত বিষয় বিবেচনা করে, জনগণের স্বার্থে। সত্যি কি জনগণের স্বার্থ এখনও বড় হয়ে আছে ক্ষমতাসীনদের কাছে। চারদিকে গণমানুষ সম্পৃক্ত বিষয়গুলোতে যেভাবে তাদের অনাগ্রহ এবং একটি শ্রেণিকে সুবিধা দিতে যে আগ্রহ, তাতে বরং সংবাদ সম্মেলনে পাশে থাকা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানের কথাটিই যেন সাধারণ মানুষের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো বিঁধে। তার মতে, ‘তেল দেবেন কম, ভাজা খাবেন মচমচে, এটা হয় নাকি?’ আর কে না জানে, মচমচে তেলের ভাজা খেতে যে তেল কিনতে হয় তা কয়জন মানুষের সামর্থ্যে কুলোয়? বামজোটের হরতাল সফল বা বিফল সেটি বড় কথা নয়, অন্তত এই সময়ে সবকিছু সয়ে যাওয়ার মানসিকতার কালে কিছু মানুষ যে প্রতিবাদ জানালেন, সেটিই বড় কথা। সেটিই হয়তো পথ দেখাবে জনবিরোধী কোনও সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসতে।
লেখক: বার্তা সম্পাদক, সময় টেলিভিশন