X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুজোর আগে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’দের সামলান

শান্তনু চৌধুরী
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:৪৩আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:৪৩

বছর ঘুরে আবারও এলো শারদীয় দুর্গা উৎসব। পুজো আসার আগে সবসময় একটা পুজো পুজো গন্ধ এসে ভরে ওঠে মন। কিন্তু এবার কেন জানি সেই আনন্দ লাগছে না। কেন লাগছে না? কারণ, উৎসবের আনন্দ ঢেকে দিচ্ছে উদযাপনের শঙ্কা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে সেই শঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে তারা বলছে, ‘এ বছরও সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ এ কথা বলা যাচ্ছে না’।

প্রকৃতপক্ষে এই শঙ্কাগুলো কেন তৈরি হয়। উৎসব যদি পুলিশের পাহারায় করতে হয় তবে সেটা আর উদযাপন থাকে না। পরিণত হয় স্রেফ আনুষ্ঠানিকতায়। সেটা ঈদ, পূজা, বড়দিন বা বুদ্ধ পূর্ণিমা যাই হোক না কেন। নিরাপদে যদি কোনও উৎসব উদযাপন করা না যায় তাহলে বুঝতে হবে সেখানে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা বা দুর্বলতা রয়েছে। এবং দুর্গাপুজোকে ঘিরে সেই আশঙ্কা যে অমূলক নয় সেটা ইতোমধ্যে দেখা গেছে।

গেলো ১৫ দিনের হিসাব যদি দেখা যায়, সাত-আটটি পূজামণ্ডপে হামলা হয়েছে, মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনা হয়েছে। এসব খবর স্বাভাবিকভাবে চেপে রাখা হয়, কারণ এতে আরও দুর্ঘটনা ছড়ানোর শঙ্কা থাকে। ডিএমপি কমিশনার ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগরের পূজামণ্ডপে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে ঘটতে না পারে, সেজন্য পুলিশ সদস্যদের পূজার সময় সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিশনার আরও জানিয়েছেন, ‘এ বছর পূজামণ্ডপে আনসার সদস্য স্থায়ীভাবে নিয়োজিত থাকবে। পাশাপাশি পুলিশও পূজার সময় মণ্ডপে অবস্থান করে দায়িত্ব পালন করবে’। তবে এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২১ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ‘আজানের সময় কিংবা নামাজের সময় মসজিদের ঠিক কাছে থাকা মণ্ডপগুলো যেন সংযতভাবে পূজা-অর্চনা করে থাকে। বাদ্যযন্ত্র সে সময়ের জন্য মানে কিছুক্ষণ বন্ধ রাখে এবং সে জন্য যেন তারা সচেষ্ট থাকেন’।

এটা যে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যুগ যুগ ধরে মেনে চলছেন তা হয়তো মন্ত্রণালয়ের জানা নেই। কারণ, সনাতন ধর্ম সহিষ্ণু এবং অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই গালি দিলে বা মূর্তি ভাঙলেই ধর্ম ‘নষ্ট হয়ে’ যায় না। কিন্তু দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নে বড়সড় ধাক্কা লাগে বৈকি! মনে হয় আগে কী সুন্দর দিন কাটাতাম।

গেলো বছর সারা দেশে মূর্তি ভাঙচুর বা মণ্ডপ ভাঙচুরের ঘটনায় একটা বিষয় সামনে এসেছে, যাদের গ্রেফতার বা আটক করা হয়েছে তারা অনেকেই ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’। স্থানীয়দের ভাষায় ‘পাগল’। এরাই নানান অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য দায়ী, যদিও পেছনের কুশীলবদের চিহ্নিত করা যায়নি। এসব ঘটনার কোনও বিচার হয়নি, কিংবা বিচারের অগ্রগতিও খুব একটা দেখা যায় না। কাজেই মন্ত্রণালয় বা রাষ্ট্র যতই নিরাপত্তা দিক না কেন, এই ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’দের সামলাতে না পারলে পূজা উদযাপন কখনও সুন্দর হবে না। ভয় ও শঙ্কা নিয়েই কাটবে উৎসব। তাই উৎসবের আগে এসব ‘পাগল’ সামলানো জরুরি। কিন্তু মুশকিল হলো তাদের ধরবে কে? প্রশাসনও এমন মানসিকতার ঊর্ধ্বে নয়। যেটা আমরা বুঝেছিলাম রামুর ঘটনায়। যেখানে এক পুলিশ সদস্য বলেছিলেন, ‘গায়ে পুলিশের পোশাক না থাকলে আপনাদের সঙ্গে আমিও হামলায় অংশ নিতাম’।

জন্মাষ্টমীর দিন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘এই মাটিতে আপনাদের সমান অধিকার।  আমার যতটুকু অধিকার, আপনাদেরও সেই অধিকার। এভাবে সকলেরই সমান অধিকার আছে। কাজেই এখানে আপনারা কখনোই নিজেদের সংখ্যালঘু বা ওই রকম মনে করবেন কেন?’

তিনি আরও বলেছিলেন, ‘মনে করবেন আপনারা এই দেশেরই নাগরিক। সমানভাবে নাগরিক অধিকার আপনারা ভোগ করবেন এবং আমরা সেভাবেই আপনাদের দেখতে চাই। কখনও নিজের ভেতর ওই হীনম্মন্যতা নিয়ে আসবেন না বা নিজেদের আলাদা কিছু ভাববেন না’।

কথাগুলো অবশ্যই শ্রুতিমধুর, কিন্তু বাস্তবতা দেখা যায় ভিন্ন। ‘সবাই আইনের চোখে সমান’– সংবিধানে এই কথা লেখা থাকলেও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে। সেই থেকে সমস্যা শুরু হলো। এর সমাধান হলো ৭২-এর সংবিধানে পুরোপুরি ফিরে যাওয়া।

পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া তথ্যমতে, সারা দেশে এবার ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে নির্দেশনা দিয়েছে সব মণ্ডপে এত নির্দেশনা মেনে চলা সম্ভব নয়। যদিও স্থানীয়দের মানসিকতা পরিবর্তন হয়। যদি না সংখ্যালঘুদের মানসিকতার পরিবর্তন হয়। বাংলাদেশকে জানতে হবে সারা বিশ্বে এখন পশ্চাৎপদতা থেকে মুক্ত হতে সংগ্রাম চলছে। অথচ এশিয়া অঞ্চলে সেটা যেন আরও বেড়েছে। বিশেষ করে তালেবানরা আফগান দখলের পর উগ্রবাদের আস্ফালন যেন আরও বেড়েছে। তাই দেশীয় ‘পাগলদে’র দ্রুত চিকিৎসা দরকার। তা না হলে যেকোনও উৎসব স্রেফ পালন হবে, উদযাপন নয়।

লেখক: সাংবাদিক ও সাহিত্যিক  

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন
ইউএনআরডব্লিউএ-তে ফের অর্থায়নের পরিকল্পনা জাপানের
ইউএনআরডব্লিউএ-তে ফের অর্থায়নের পরিকল্পনা জাপানের
লিবিয়ায় জিম্মি চট্টগ্রামের ৪ যুবক, পাঠানো হচ্ছে নির্যাতনের ভিডিও
লিবিয়ায় জিম্মি চট্টগ্রামের ৪ যুবক, পাঠানো হচ্ছে নির্যাতনের ভিডিও
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ