হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি উদ্ধৃতির পক্ষে যুক্তি

হায়দার মোহাম্মদ জিতুআধুনিক বাস্তববাদী নাটকের জনক হেনরিক ইবসেন তাঁর ‘এনিমি অব দ্য পিপল’ নাটকে দুই সহোদর ভাইয়ের সততা ও অনৈতিকতার বৈপরীত্যকে অঙ্কন করেছেন। যেখানে ডাক্তার চরিত্র তার সততার স্বাক্ষর হিসেবে নগরীর পানির পাইপে ঢোকা চামড়ার দূষিত অবস্থার কথা জনগণের নিকট প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে অপর ভাই মেয়র নিজের ক্ষমতা কাঠামো টিকিয়ে রাখতে ধূর্ত কৌশল গ্রহণ করেছেন। শুধু তা-ই নয়, দূষিত পাইপ বদলে ট্যাক্স বা বাড়তি অর্থ গুনতে হবে এই মর্মে তা প্রচার করেন। ফলাফল, সামান্য কিছু অর্থ বাঁচানোর তাগিদে জনগণ ডাক্তারের সততাকে প্রত্যাখ্যান করেন।

তবে এই নাটকের শেষে নাট্যকার ডাক্তারের মুখ দিয়ে একটি অনন্য সত্য প্রকাশ করিয়েছেন। আর তা হলো, সততার বহিঃপ্রকাশে একা বনে গেলেও সেটাই দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে শক্তিশালী।

ইবসেনের এই নাটকের সঙ্গে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়কালের কিছু অপ্রত্যাশিত মিল পাওয়া যায়। যদিও এক্ষেত্রে রাষ্ট্র ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর হাতে ছিল, তবু ক্ষমতা কাঠামোর বিস্তৃতি ও গভীরতাকে কাজে লাগিয়ে ষড়যন্ত্রের নীল নকশা আঁকতে পেরেছিল দুর্বৃত্তরা। স্বাধীনতা পরবর্তীতে সময়ে জনগণের অভাববোধকে উসকে দিয়েছিল। যা সত্যের অপ্রতিরোধ্য বন্যায় আজ প্রস্ফুটিত হয়েছে যে তৎকালীন সাধু মুখোশধারীরাই ইতিহাসের প্রকৃত চাঁড়াল ও চণ্ডাল।

এরাই বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সম্পদ বঙ্গবন্ধুকে দেশ-জনগণ থেকে নির্বাসনে পাঠাতে তৎপরতা চালিয়েছিল। কিন্তু সময়ের স্রোত ও কৃতজ্ঞতাবোধের আয়নায় প্রমাণিত যে বঙ্গবন্ধুই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। এর পক্ষে প্রাসঙ্গিক যুক্তি হলো, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু প্রমুখ  স্বাধীনতার জন্যে লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু বাঙালি হিসেবে একক বঙ্গবন্ধুই সেই অধিকার আদায় করতে পেরেছেন। বাঙালির ভাত ও ভোটের অধিকারে স্বাধীন-সার্বভৌম মানচিত্রের অধিকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।

আর এটি সম্ভব হয়েছে তাঁর লড়াকু মানস ও বাঙালির প্রশ্নে আপসহীন নীতির কারণে। যা স্বাধীনতার পরপর ১৯৭২ সালে সাংবাদিক ডেভিড ফস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও উঠে এসেছে। তিনি জানিয়েছেন, যথার্থ নেতৃত্ব আসে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। কেউ আকস্মিকভাবে একদিনে নেতা হতে পারে না। তাঁকে মানুষের জন্যে উৎসর্গ করতে হয়। নেতার আদর্শ থাকতে হবে, নীতি থাকতে হবে। এসব গুণ যার আছে সেই নেতা হতে পারে।

সফলতার পূর্ব ধাপ চেষ্টা করা। সে হিসেবে কালে কালে বাঙালির জন্য যেসব সংগ্রামী মানুষজন চেষ্টা করে গেছেন তাঁদের প্রতি বিশ্ব বাঙালির শ্রদ্ধা আছে এবং থাকবে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই সবার বঙ্গবন্ধুর সফলতাকে স্বীকার করে নিতে হবে। তবে লজ্জার বিষয় হলো, এই অমোঘ সত্যটিকে এখনও অনেকেই ইনিয়ে বিনিয়ে এড়িয়ে চলতে চান। ষড়যন্ত্রের খাতিরে, ক্ষমতার খাতিরে।

এমন নিম্নগামী চিন্তাকারীদের জন্য তুরস্কের উত্তর-পশ্চিম শহরের ইনেগোলের বেহান মুতলুর গল্পটি প্রাসঙ্গিক। মাতাল মুতলুর মদ গিলতে জঙ্গলে গিয়ে জীর্ণ ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। ওদিকে তার স্ত্রী স্বামীকে খুঁজতে থানায় যান। যথারীতি পুলিশ তাকে খুঁজতে খুঁজতে সেই জঙ্গলের কাছে উপস্থিত হয়। আধো ভাঙা ঘুমে পুলিশকে খুঁজতে দেখে মুতলুরও তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। কিছুক্ষণ পর সে বুঝতে পারে পুলিশ তাকেই খুঁজছে। শেষে সে জানায় সেই-ই মুতলুর। কিন্তু পুলিশের তা বিশ্বাস হয় না। পরে তার একজন বন্ধুকে এসে তাকে শনাক্ত করেন।

বাঙালির রাজনৈতিক জীবনেও এমন মুতলুরের আগমন ঘটেছে। যারা পাড় মাতালের মতো বঙ্গবন্ধুকে নির্বাসিত করতে চেয়েছিল। শেষটায় দেখা গেছে, তাদেরই অন্যদের এসে সত্যায়ন করতে হয়েছে। অর্থাৎ বিদেশি বন্ধু নামক অংশকে ব্যবহার করতে হয়েছে। বর্তমান বাংলাদেশ এখন বাঙালির শান্ত সাহস শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এমন উচ্চতায় পৌঁছেছে যে কোনও বাইরের শক্তি এখানে মুখ্য নয়। বরং সহযোগিতা ভাবসম্পন্ন কৃতজ্ঞতাবোধ এ দেশের ভবিষ্যৎ সারথী হওয়ার অঙ্গীকারনামা। এবং সেটা অবশ্যই বঙ্গবন্ধুকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও বাঙালির মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করবার মাধ্যমে।

লেখক: প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।

haiderjitu.du@gmail.com