X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

অনুভূতির আঘাতে পদানত ষড়যন্ত্র

হায়দার মোহাম্মদ জিতু
০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:০৯আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:০৯

ক্রিকেট খেলতে গেলে প্রাথমিকভাবে খেলার যে সরঞ্জামাদির প্রয়োজন হয় তা শহরে মিললেও গ্রামে মেলানো মুশকিল হতো। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় বল- ব্যাটের জোগাড় করা গেলেও স্ট্যাম্পের ক্ষেত্রে কখনও কখনও গাছ, পাটখড়ি, ইট এবং পাশের বাড়ি সীমানা থেকে এটা-ওটা খুলে স্ট্যাম্পের জোগাড় চলতো। কিছু অবস্থা সম্পন্ন ঘরের ছেলেরা খেলতে না পারলেও দাতার ভূমিকায় আসতেন। কেউ কেউ খেলতেও পারতেন। এই বিনিয়োগের নগদ মুনাফা হলো, সবার আগে ব্যাটিং-বোলিং পাওয়া। কখনও কখনও আউট হলেও পুনঃসুযোগ নেওয়া হতো। অর্থাৎ একধরনের নীরব স্বেচ্ছাচারীতা সহ্য করতে হতো।

বাঙালির শান্ত সাহস, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটেছে। সেকারণে গ্রামে-শহরে অবস্থাসম্পন্ন ঘরের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে পূর্বের সেই কিছুসংখ্যক ঘরের আধিপত্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে গেছে। সমতা এসেছে। এটা শুধু খেলার ক্ষেত্রে নয় বরং সর্বক্ষেত্রেই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি আবারও সেই পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ ব্যাট-বলের মালিক হওয়ার আদলে বিএনপি নির্বাচনকে নিজেদের খেয়াল খুশি মতো ফল চাইছে।

বিষয়টি শুধু চাওয়া পর্যন্ত রইলেও দেশের মানুষ সয়ে যেত। কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি নির্বিচারে মানুষ হত্যার মিশনে নেমেছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সম্পদ নষ্ট করছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চলমান রাষ্ট্রগুলো যেমন– যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ব্রিটেন, কানাডা, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ কমপক্ষে ৫৮টি দেশে ২০২৪ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ সবাই সবার অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে ব্যস্ত। একারণেই তাদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য বিএনপি-জামায়াত এমন নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খল পথ অবলম্বন করেছে।

২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে নিজ অক্ষে পথ চলতে গিয়ে উপমহাদেশীয় রাজনীতিকে বহু ষড়যন্ত্র ও রক্তপাতের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। ধর্মতত্ত্বের নামে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নামিয়ে প্রতিবেশির বুকের রক্ত লাল করানো হয়েছে। মহাত্মা গান্ধী থেকে নেতাজি এবং পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেইসব নৈরাজ্য রুখে দিয়ে এই অঞ্চলের জাত্যাভিমানের মৌলিক সুরকে আগলে এগিয়েছেন। আধিপত্যবাদের উন্মত্ত খেলা ছাপিয়ে উপমহাদেশীয় রাজনীতিকে স্থিতিশীলতার পথে নিয়েছেন, পুনঃসমৃদ্ধির পথে নিয়েছেন। যা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এবং অস্ত্রকারবারিদের জন্য অপ্রীতিকর ও চ্যালেঞ্জের। সহজ কথায়, স্থিতিশীল অবস্থা অস্ত্র বিক্রির অন্তরায়।

বিএনপি দেশের ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে এমন একটা ক্ষেত্র তৈরির পাঁয়তারা করছে। দেশে আগুন-সন্ত্রাস ও হত্যার মতো জঘন্য ষড়যন্ত্র করছে। বিশ্বমানবতা এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের এসব আগুন-সন্ত্রাস নিয়ে সোচ্চার হওয়া জরুরি। বিশ্ব বিবেককে ফিলিস্তিনের গাজা ইস্যু নিয়েও তাদের কথা বলতে হবে। শুধু ইসরায়েল, ইউক্রেন নিয়ে তৎপর থাকলে বিশ্বব্যাপী তাদের যে পক্ষপাতমূলক মানবাধিকার দর্শনের অভিযোগ তা আরও স্পষ্ট হবে। যা বিশ্বের জন্য বিব্রতকর।

সচেতন সকলকে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের বিষয়টিকেও ময়না তদন্তের আদলে দেখতে হবে। নিশ্চিত পরাজয় জেনে যে বিএনপি নির্বাচনে আসেনি তার প্রমাণ নির্বাচন নিয়ে এদের কোনও পরিকল্পনা, ইশতেহার বা মূল নেতৃত্বই নেই। তাছাড়া এই শতকে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ঘটনাই প্রথম নয়। ১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সাধারণ নির্বাচনে বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করেছিল। থাইল্যান্ড, জিবুতি, হাঙ্গেরি, স্পেন, কেনিয়া, মিসর, রাশিয়া, মেসিডোনিয়া, আলবেনিয়া, তিউনিশিয়া, ইরান, হংকং, কসোভো ও পোল্যান্ডেও নির্বাচন বয়কট করেছিল বিরোধী দল। অর্থাৎ নির্বাচন বর্জনও গণতন্ত্র ও নির্বাচনেরই অংশ। কিন্তু একে অলক্ষে রেখে দেশের নির্বাচনি আবহে বিএনপির নেতারা যে আচরণ ও ভাষা ব্যবহার করছে তা রীতিমত শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

বিএনপির সমাবেশ থেকে গান ধরা হয়, ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’! লড়াইটা ক্ষমতাকেন্দ্রিক থাকা শোভনীয়। সেটা কখনোই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে চলবে না। এই আচরণ ত্যাগ করতে হবে। বিএনপিকে ষড়যন্ত্রের গুহা থেকে বেরিয়ে রাজনৈতিক আচরণ করতে হবে। ভাসুর না ধরে জনগণের প্রয়োজনে জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে। রাতারাতি ক্ষমতায় যাবার শর্টকাট ছাড়তে হবে। মনে রাখতে হবে, সক্ষমতা কিংবা অনুকূল সময়ের বাইরে কোনও খেলায় জিততে চাইলে চরিত্রহীন বনে যেতে হয়। চরিত্রহীনদের সম্বল অসদ উপায়। বিএনপিকে এই অসৎ উপায় ছাড়তে হবে।
গ্যালারিতে বসে হাততালি কিংবা মন খারাপ করা যায়। খেলায় জিতলে হলে মাঠে নামতে হয়। বিএনপি এবারো সরাসরি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। কাজেই জয়-পরাজয় নিয়ে তাদের মাথাব্যথা থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রবাদ আছে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের আখড়া। কাজেই বিএনপি এই সময়টায় কি করে সেটাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী রাজনীতিতে  ইশতেহার, পরিকল্পনা এবং উদ্যম নিয়ে মাঠে এগিয়ে গেছে। রাজনৈতিকভাবে সব কিছুকে মোকাবিলা করছে।

বিএনপি এরকম কিছু করতে পারেনি। বরং তারা শৈশবের খেলার মাঠের আচরণ ধরে রেখেছে। আগে ব্যাটিং-বোলিং না দিলে যেমন খেলবে না বলে একপক্ষ আচরণ করত। ঠিক তেমনি নির্বাচনে তাদের জিতিয়ে না দিলে তারা নির্বাচনে আসবে না। এসব তামাশা ছাড়া কিছু নয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুকন্যা, বাঙালির আলোক অভিযাত্রি। তাঁকে ঘিরে বাংলার জনগণের আবেগ আছে, থাকবে। জনগণের প্রতিও তাঁর প্রবল আবেগ, উৎকণ্ঠা এবং কমিটমেন্ট নিহিত। এই অনুভূতি-ই তাঁকে সকল ষড়যন্ত্রকে পদানত করতে সাহস যুগিয়েছে। কাজেই বিএনপি এবং তার দোসরদের ঘরে-বাইরের ষড়যন্ত্র ধোপে টিকবে না। স্থিতিশীল রাজনৈতিক আহবান এবং ঊর্ধ্বমুখী অর্থনৈতিক অবস্থান সেই ইঙ্গিত ও সাক্ষ্য বহন করে।

লেখক: মহামান্য রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব
[email protected]

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় জয় হায়দরাবাদের 
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় জয় হায়দরাবাদের 
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ