সরেজমিন নিখোঁজের তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, র্যাবের দেওয়া তালিকায় ১৫৮ নম্বরে থাকা শায়েস্তা খান রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেছেন। তার বাবা আব্দুল মনসুর খান এখনও সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন।
রংপুর নগরীর ভগি বালাপাড়ায় অবস্থিত তাদের বাড়িতে গিয়ে শায়েস্তা খানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি এক বন্ধুর সঙ্গে বোনের বাড়ি ঢাকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। বাসায় কাউকে না বলে যাওয়ার কারণে তার বাবা কোতোয়ালি থানায় জিডি করেন। এর ৪/৫ দিন পর তিনি বাড়িতে চলে আসার পর বিষয়টি কোতোয়ালি থানায় জানানো হয়। এ ব্যাপারে শায়েস্তা খানের বাবা সেনা সদস্য সবুর খান জানান, তার ছেলে বাড়িতে চলে আসার পর পুলিশকে জানানো হয়েছে। তারও ৬ মাস পর তার ছেলেকে নিখোঁজ দেখানো হচ্ছে বলে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। সবুর খান বলেন, ‘এ ব্যাপারে পুলিশ তখনই পদক্ষেপ নিলে তাদের এ অবস্থার মধ্যে পড়তে হতো না।’
তালিকায় ১৫৭ নম্বরে থাকা রংপুরের সদর উপজেলার পালিচড়া গ্রামের আবু মিয়ার ছেলে শামিম মিয়ার সন্ধানে তার বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি ব্যক্তিগত কাজে বাইরে গেছেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। তবে তিনি নিখোঁজ নন, নিজের বাড়িতেই অবস্থান করছেন বলে জানান তারা।
র্যাবের তালিকায় ১৬০ নম্বরে থাকা সেনা সদস্য শফিউল আলমের ছেলে সাঈদ হোসেন রংপুরেই তার বাবা-মার সঙ্গে অবস্থান করছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
অন্যদিকে, তালিকার ১৬১ নম্বরে থাকা সাব্বির আহাম্মেদ আনন্দ নগরীর ডিসির মোড় এলাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম আলহাজ আশরাফ উদ্দিন। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই বাড়িটি একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রকে ভাড়া দিয়ে তারা চুয়াডাঙ্গায় চলে গেছেন। বাসার ভাড়াটিয়া মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আনন্দ এমনিতেই মানসিক রোগী বলে তিনি শুনেছেন। গত বছর এই বাসায় থাকাকালে কাউকে না বলে বাসা থেকে বের হয়ে যান আনন্দ। অনেক খোঁজাখুজির পর তাকে ৪/৫ দিন পর খুঁজে বের করেন তার স্বজনরা। এ ঘটনায় গত বছর ৯ নভেম্বর কোতোয়ালি থানায় জিডি করেন তার বাবা। তবে মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তিনি নিশ্চিত যে, আনন্দ তার বাবা-মার সঙ্গে চুয়াডাঙ্গায় তার নানার বাড়িতেই আছে।
তালিকায় ১৬২ নম্বরে থাকা নগরীর মাহিগঞ্জ কলাবাড়ি গ্রামের ওসমান আলীর ছেলে রেজাউল করিমের নাম নিখোঁজ তালিকায় থাকলেও, তিনি নিখোঁজ নয়। তিনি প্রকৃত পক্ষে মানসিক রোগী। মাঝে মাঝেই তিনি বাসা থেকে বের হয়ে যান। গত বছর বেশ কিছুদিন তাকে খুঁজে পাওয়া না যাওয়ায় তার পরিবার থানায় একটি জিডি দায়ের করে। তিনি এখন বাসাতেই থাকেন বলে জানা গেছে। পুলিশও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
তালিকায় ১৬৩ নম্বরে থাকা নগরীর মনোহরপুর পশ্চিমপাড়া মহল্লার মাহবুবুর রহমানের ছেলে ইকবাল হোসেনও নিখোঁজ নন। তিনি গত বছরের ২৪ নভেম্বর থেকে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একটি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় আটক রয়েছেন। মামলা নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা নম্বর ৫২০/১৫ইং। এ ব্যাপারে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি কারাগারে আটক আছেন। তার স্বজনরা জানান, তিনি ঢাকায় রড মিস্ত্রির কাজ করতেন। গত বছর ঢাকা থেকে রংপুরে আসার কথা বলে তিনি নিখোঁজ হন। তার কোনও সন্ধান না পাওয়ায় তার পরিবার কোতয়ালী থানায় একটি জিডি করে। কিন্তু পরে তারা জানতে পারেন, রংপুরের দামোদরপুর গ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তিনি ওই মেয়েকে রংপুর শহরে নিয়ে এসে বিয়ে করে। বিষয়টি ওই মেয়ের পরিবার মেনে না নেওয়ায় তারা পুলিশকে দিয়ে ইকবালকে গ্রেফতার করিয়ে তার নামে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করে। এরপর বিগত ৮ মাস ধরে তিনি কারাগারে আটক রয়েছেন। নিখোঁজ তালিকায় নাম দেখে তারাও হতবাক হয়েছেন।
তালিকায় ১৬৫ নম্বরে থাকা নগরীর পার্বতীপুর মহল্লার আল আমিনের ছেলে নজরুল ইসলাম নামের এক যুবক নিখোঁজ রয়েছে বলে তালিকায় থাকলেও ওই গ্রামে গিয়ে নজরুল ইসলাম নামে কাউকেই পাওয়া যায়নি।
সার্বিক বিষয় সম্পর্কে কোতোয়ালি থানার ওসি এবিএম জাহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রংপুরে যে ৯ জন নিখোঁজ থাকার কথা বলা হয়েছে তাদের স্বজনদের পক্ষে কোতয়ালী থানাতেই জিডি হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৯ জনের মধ্যে ৬ জনই বাসায় আছেন। একজন মানসিক রোগী ও একজন কারাগারে আটক আছেন। অপরজনের কোন হদিস মেলেনি। ওই নামে কোনও যুবক নেই বলে জানা গেছে।
/এসএ/