ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া উপজেলার ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী পদ্মবিল সেজেছে শরতের অপরূপ রূপে। পদ্ম বিলের নয়নাভিরাম দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমীদের মুগ্ধ করছে। প্রত্যন্ত এলাকা হলেও পদ্ম ফুলের শোভা দেখতে নিতে প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিলের তীরে ভিড় করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
স্থানীয় বাসিন্দা ইউনুছ মিয়া জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে আখাউড়া উপজেলার ত্রিপুরা সীমান্ত ঘেঁষা ঘাগুটিয়া পদ্মবিল। সিমান্তের পশ্চিমপাড় বাংলাদেশের আখাউড়া-কসবা আর পূর্ব প্রান্তে উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আমতলী থানার মাধবপুর গ্রাম। এরই মাঝ খানে পদ্ম বিল।
তিনি বলেন, শত একর বিল জুড়ে জলে ভাসছে পদ্ম। কেউ আসেন সৌন্দর্য উপভোগ করতে কেউবা আসছেন ছবি তুলতে। আবার অনেকে ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে গিয়ে তুলে আনছেন পদ্ম। এ যেন এক অন্যরকম উন্মাদনা পেয়ে বসেছে।
প্রকৃতিপ্রেমীদের একজন সোমাইয়া আক্তার রিতু। তিনি বলেন, কোন ক্রমেই প্রকৃতির নয়নাভিরাম দৃশ্য যেন মলিন এবং শ্রীহীন না হয়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মনিয়ন্দ ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মো. আব্দুল্লাহ্ জানান ২০১৪ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার গবেষকেরা এই পদ্ম বিল থেকে ফুলের মূল নিয়ে অন্যস্থানে প্রজননের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পরিবেশ অনকূলে না থাকায় সেই ফুলের প্রজনন শেষ পর্যন্ত হয়নি বলে জানতে পেরেছি।
শিশু-কিশোরেরা ডিঙি নৌকায় করে ফুল তুলে আনছে। ফুটন্ত ফুলের ভেতর থাকা ফল খায় শিশুরা। আবার এই ফুল চার থেকে পাঁচ টাকায় বিক্রিও করে তারা। প্রতিদিন প্রায় ৪০০-৫০০ ফুল তোলে শিশুরা।
পদ্ম প্রেমী আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা বলেন, ‘দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে মন সময় পেলেই পদ্ম বিলের পাড়ে ঘুরে আসি।’
আখাউড়ার শ্রীশ্রী রাধামাধব আখড়ার পুরোহিত বিমল চক্রবর্তী বলেন, ‘দেবী দুর্গার পূজা শুরু হয় ষষ্ঠীতে বোধনের মাধ্যমে। অষ্টমী তিথিতে ১০৮টি জলপদ্ম দিয়ে দেবীর পূজা অর্চনা করা হয়। পদ্মে দেবী দুর্গা, লক্ষী-নারায়ণসহ অন্য দেবদেবীরাও তুষ্ট হন।’
পদ্ম সর্ম্পকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারী মহিলা কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. আরিফুর রহমান বলেন, হিন্দু পুরানের তথ্য অনুযায়ী হিমালয়ের পাদদেশ ইন্দু এবং ইন্দু চীন অঞ্চলে পদ্মের সম্ভাব্য উৎপত্তি স্থল। আদ্র এবং গরম আবহাওয়াতে বদ্ধ জলাশয়ে এই পদ্ম জন্মাতে পারে। কাঁদা মাটি শুকিয়ে গেলেও পদ্মের বিজ থেকে বহু বছর পর অংকুর হয়ে গাছ জন্মাতে পারে। দেখতে জল শপলার মতো হলেও উদ্ভিদ তাত্বিক ভাবে পুরো ভিন্ন।
তিনি বলেন, এক সময় বাংলাদেশের বিল-ঝিলে প্রচুর পরিমাণ শাপলা শালুক,পদ্ম ফুল ফুটত। মাঝ খানে তা কমে গিয়েছিল। মানুষের সচেতনতার কারণে তা আবারো নতুন করে তা ফিরে আসছে। পরিবেশের দিক থেকেও পদ্ম বিল গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখে বলে জানান উদ্ভিদবিদ মো. আরিফুর রহমান।
এ ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন ইকবাল বলেন, পদ্ম বিলের সৌন্দর্য ধরে রাখার পাশাপাশি দর্শনীয় স্থান হিসেবে ঘোষণা করা জন্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
প্রতিবছর ১২০ একর বিস্তীর্ণ পদ্মবিলে আষাঢ় মাসে থেকে পদ্ম ফোটা শুরু হয় একটানা কার্তিক মাস পর্যন্ত পুরো ৫ মাস পদ্ম ফুলে রঙিন থাকে পুরো পদ্ম বিল।
/এইচকে/এসটি/