পেট্রোল বোমায় ৬ বাসযাত্রী হত্যা: সাক্ষীর অভাবে থমকে আছে বিচার

 

পেট্রোল বোমায় পুড়ে যাওয়া নাইট কোচআজ ১৪ জানুয়ারি, রংপুরের মিঠাপুকুরে যাত্রীবাহী নাইট কোচে পেট্রোল বোমা মেরে ছয় বাসযাত্রী হত্যা ঘটনার দ্বিতীয় বার্ষিকী। ২০১৫ সালের এই দিনে জামায়াত-শিবিরের দুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটিয়েছিল বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। দু’বছর অতিবাহিত হলেও এখনও চাঞ্চল্যকর এ মামলার অনেক আসামিকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।  সাক্ষীর অভাবে  মামলার বিচারও থমকে আছে।

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের উলিপুর থেকে খলিল পরিবহনের একটি নাইটকোচ যাত্রীদের নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিল। রাত প্রায় ১ টার দিকে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বাতাসন এলাকায় পৌঁছালে জামায়াত-শিবিরের দুর্বৃত্তরা বাসটি লক্ষ্য করে  কয়েকটি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। এতে বাসের ভেতরে আগুন ধরে যায় এবং  জীবন্ত দগ্ধ হয়ে এক শিশুসহ ছয় জন নিহত হন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন আরও ২৫ যাত্রী।

এ ঘটনায় মিঠাপুকুর থানায় ৮৭ জনের নাম উল্লেখ করে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়। তদন্ত শেষে পুলিশ ১৩২ জন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। মামলায় এ পর্যন্ত পুলিশ ৬৯ জনকে গ্রেফতার করলেও এখনও ৬৩ জন আসামি পলাতক আছে। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি। মামলাটি বর্তমানে রংপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এ বিচার চলছে।

পেট্রোল বোমায় পুড়ে যাওয়া নাইট কোচএখনও পর্যন্ত ৩২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হলেও  মামলার মূল সাক্ষী অগ্নিদগ্ধ ও নিহতদের স্বজনরা কেউ সাক্ষী দেননি। পুলিশও সাক্ষী হাজির করতে কোনও ভূমিকাই পালন করছে না। ফলে মামলার বিচার শেষ হচ্ছে না, এ অভিযোগ সরকার পক্ষের আইনজীবীদের।

অন্যদিকে, মানববাধিকার কর্মী ও রাজনীতিবিদদের অভিযোগ-  সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে না পারা পুলিশের চরম অবহেলা। এ নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য কমরেড শাহাদত হোসেন জানান, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটিতে ১৩২ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করা হলেও মামলার বাদী মিঠাপুকুর থানার তৎকালীন এসআই আব্দুল আজিজ আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় তাদের সবার নাম বলতে পারেননি। মামলার বেশিরভাগ আসামিকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

মানবাধিকার সংগঠক হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের রংপুর জেলার আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী এমএ বাশার বলেন, “বিচার বিভাগে  প্রচলিত আছে ‘জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড’। এক্ষেত্রে কাদের গাফলতি আর দায়িত্বহীনতা আছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। দুবছর অতিবাহিত হয়ে গেল এখনও বিচারই শেষ হলো না।” অবিলম্বে সাক্ষীদের আদালতে হাজির করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিচার শেষ করার পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও দাবি জানান তিনি।

 রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল জানান, মিঠাপুকুরে জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসীরা যে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়ে ছয়জন মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছিল, তাদের বিচার এখনও শেষ না হওয়ায় আমরা ক্ষুব্ধ। এই চাঞ্চল্যকর মামলার বিচার গোটা রংপুরের মানুষ দেখতে চায়।

পেট্রোল বোমায় পুড়ে যাওয়া নাইট কোচমামলা পরিচালনাকারী সরকারপক্ষের আইনজীবী (পিপি) আব্দুল মালেকও জানান, মামলার প্রধান সাক্ষীরাই এখনও সাক্ষী দেয়নি। মামলার ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ৩২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। বাকি সাক্ষীরা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অগ্নিদগ্ধ ও নিহতের স্বজন। এদের বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বিভিন্নস্থানে। তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হলে দ্রুততম সময়ে বিচার শেষ করা সম্ভব হবে।

মিঠাপুকুর থানার ওসি হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘মামলার প্রধান আসামিদের অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

পুলিশের  রংপুর রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুখ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সব মামলায় সাক্ষীদের হাজির করার জন্য আলাদা সেল গঠন করা হয়েছে। তবে রংপুরে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার মামলার সাক্ষীদের কেন আদালতে হাজির করা হচ্ছে না, সেটি খতিয়ে দেখা হবে। সেই সঙ্গে দায়িত্বে কেউ  অবহেলা করলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

/এমও/ এপিএইচ/আপ-এসএনএইচ/