টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী খান পরিবারের পতন!


টাঙ্গাইলের এমপি রানা ও তার তিন ভাইটাঙ্গাইলের রাজনীতিতে বরাবরই প্রভাব ছিলো খান পরিবারের। কিন্তু ২০১৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ হত্যাকাণ্ডের পর কোণঠাসা হয়ে পড়ে পরিবারটি। ২০১৪ সালে খান পরিবারের সদস্যদের দুই দেহরক্ষী গ্রেফতার হলে বেরিয়ে আসে ফারুক হত্যাকাণ্ডের নানা তথ্য।

আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে ওই দুই দেহরক্ষী  বলেন, খান পরিবারের সদস্য, টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা  ও  তার তিন ভাইয়ের নির্দেশে ফারুককে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই  খান পরিবারের চার ভাইসহ তাদের সহযোগীরা পলাতক। নিহত ফারুকের স্ত্রী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাহার আহমেদের নেতৃত্বে খান পরিবারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। আর এরপরই পতন শুরু হয় খান পরিবারের বিশাল ‘সাম্রাজ্যে’র।

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) আমানুর রহমান খান রানা ও তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র শহিদুর রহমান খান মুক্তি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা ও ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকনকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খানের সভাপতিত্বে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

একসময় এমপি রানা ও তার তিন ভাই টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখল ও উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছিলো। পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র ও সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে টাঙ্গাইলবাসীকে জিম্মি করে রেখেছিলো।

২০১২ সালে ঘাটাইল আসনের উপনির্বাচনে রানা জয়ী হওয়ার পর থেকেই পুরো জেলায় আধিপত্য বিস্তার করে। শুরু হয় তার ত্রাসের রাজত্ব।  টাঙ্গাইল জেলার সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতো এমপি রানা ও তার তিন ভাই।

তবে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যার পর তাদের পতন শুরু হয়।

ঘাটাইলে বেশ কয়েকবার এমপি রানার  সমর্থকরা মাঠে নামার চেষ্টা করেছিলো। তবে  রানা ও তার তিন ভাই দল থেকে বহিষ্কারের পর  তারা এখন বেকায়দায়।

এমপি রানার সমর্থক হিসাবে পরিচিত ঘাটাইল উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান সামু বলেন, ‘আমরা এখন কোণঠাসা অবস্থায় আছি বলতে পারেন। আমাকে কোনও অনুষ্ঠানে যোগদান করতে দেওয়া হয় না। আমরা কোনও মিটিং করতে গেলে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এমপি রানার জামিন হলে আমাদের কার্যক্রম নির্ধারণ করবো। এর আগে কিছু বোঝা যাচ্ছে না।’

ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম লেবু বলেন, ‘রানা পলাতক হওয়ার পর থেকে তার কর্মী- সমর্থকরা ঘাটাইলে কোনও সভা সমাবেশ করতে পারেনি। রানাকে দল থেকে বহিষ্কারের পর তাদের কোনও কর্মসূচিও নেই।’

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম বলেন, ‘সারা জেলায় রানা ও তার ভাইয়েরা অনেক অপকর্ম করেছে। তাই মানুষ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ফারুক হত্যা মামলায় রানাদের নাম যুক্ত হওয়ার পর থেকেই জেলায় তাদের কোনও অবস্থান নেই।’  

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে শহরের কলেজপাড়া এলাকায় নিজ বাসার কাছ থেকে ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর ফারুকের স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

২০১৪ সালের ১১ আগস্ট হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শহরের বেবিস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় দেহরক্ষী আনিসুল ইসলাম রাজাকে। একই অভিযোগে ২৪ আগস্ট মোহাম্মদ আলী নামে আরেক দেহরক্ষীকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন দুজনই।

/এআর/এএআর/