তিস্তার সেচের আওতা থেকে বাদ পড়েছে রংপুর ও দিনাজপুর

তিস্তার বাংলাদেশ অংশে ধু ধু বালুচরউজানে নেমে আসা পানি প্রবাহের ওপর ভিত্তি করে চলতি খরিপ-১ মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে এ কার্যক্রম থেকে বাদ পড়েছে রংপুর ও দিনাজপুর জেলা। চলতি বছর শুধুমাত্র ডিমলা, জলঢাকা, নীলফামারী সদর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে সেচের আওতায় রাখা হয়েছে। ফলে এই দুই জেলায় বোরো আবাদ নিয়ে সংশয়ে আছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, সম্ভাবনা জাগিয়েও বারবার থেমে থাকছে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি। চুক্তি না হওয়ায় এবারও চলতি মৌসুমে নদীর পানি কমে যাচ্ছে।

এলাকাবাসীর দাবি, উজানে গজলডোবা ব্যারেজ দিয়ে ভারত তিস্তার পানি আটকে জলবিদ্যুৎ ও সেচ পরিচালনা করছে। ফলে বাংলাদেশে পানি কমে তিস্তা বালুচরে পরিণত হয়েছে। ২০১৪ সালে বোরো মৌসুমে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ৬৫ হাজার হেক্টরে জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে। আর ২০১৫ ও ২০১৬ সালে সেচ দেওয়া হয় ১০ হাজার হেক্টর করে জমিতে। ২০১৭ সালে মাত্র ৮ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে দিনাজপুর ও রংপুরকে সেচ কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

ডিমলা উপজেলার নাউতরা ইউনিয়নের সাতজান গ্রামের কৃষক বেলাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিস্তা সেচ প্রকল্প থেকে পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় নিজস্ব সেচযন্ত্র ব্যবহার করে জমিতে বোরো আবাদ করছি। এতে খরচ বেশি হয়।’

তিস্তার বাংলাদেশ অংশে ট্রাক্টর চলছেতিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী বলেন, ‘চলতি রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে গত রবিবার থেকে সেচ দেওয়া শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সেচ দেওয়া হবে। তবে নদীর পানি কমায় ব্যারাজের কমান্ড এলাকায় সেচ দেওয়া সম্ভব হয় না।’

জানা গেছে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে তিস্তার পানি বণ্টন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। তিস্তা অববাহিকার ৫ হাজার ৪২৭টি গ্রামের মানুষ তিস্তার ওপর নির্ভরশীল। দুই দেশই তিস্তার পানির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন সময়ে নদীর ওপর ও আশপাশে অবকাঠামো তৈরি করেছে। ভারত জলবিদ্যুৎ ও সেচের কাজে তিস্তার পানি ব্যবহার করে। তবে বাংলাদেশ শুধু পরিকল্পিত সেচের জন্য তিস্তার পানি ব্যবহার করে। তবে শুষ্ক মৌসুমে ভারতের পানি প্রত্যাহারের কারণে বাংলাদেশে তিস্তার পানি কমে গেছে। ফলে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ১২টি উপজেলার কৃষি উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

আরও জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে শুষ্ক মৌসুমে বাংলদেশে তিস্তায় পানির প্রবাহ ছিল ৬ হাজার ৫শ’ কিউসেক। ২০০৬ সালে যা নেমে আসে এক হাজার ৩৪৮ কিউসেকে। ২০১৪ সালে পানির প্রবাহ দাঁড়ায় ৭শ’ কিউসেকে।

জানা গেছে, ২০০৬-০৭ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তিস্তার পানি সংকটে বাংলাদেশে ৪২ লাখ ৫৪ হাজার ২১৮ মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদন ব্যহত হয়। যার বাজারমূল্যে আটশ কোটি টাকা।

/এসএনএইচ/