শেবাচিম হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের শতাধিক ব্যাগ জব্দ

শেবাচিম হাসপাতালবরিশালে শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের শতাধিক ব্যাগ জব্দ করা হয়েছে। এ অভিযানের খবর পেলে ওই প্রতিনিধিরা আগেই শেবাচিম হাসপাতাল ত্যাগ করে। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত হাসপাতাল পরিচালকের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়।
জানা গেছে, শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করার জন্য ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া আছে। এই সময়ের বাইরেও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এসব প্রতিনিধিরা হাসপাতালে অবস্থান করেন। তারা চিকিৎসকদের নিজ নিজ কোম্পানির ওষুধ লেখার জন্য অনুরোধ করে থাকেন। চিকিৎসকদের লেখা ব্যবস্থাপত্র নিয়েও টানা-হেঁচড়া করেন তারা। এতে চিকিৎসক ও রোগীরা ভোগান্তিতে পড়েন।
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার হাসপাতালে বহিঃবিভাগ ও ওয়ার্ডগুলোতে অভিযান চালানো হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ডা. এস এম সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে বুধবার বেলা ১১টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে এই অভিযান চালানো হয়। এসময় বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ প্রতিনিধিদের শতাধিক ব্যাগ জব্দ করা হয়।
হাসপাতালের পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওষুধ কোম্পানিদের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে এর আগেও অভিযান চালানো হয়েছে। তখন প্রায় ৫০টি ব্যাগ জব্দ করা হয়েছি। এবারে জব্দ করা হয়েছে শতাধিক ব্যাগ। অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে প্রতিনিধিরা আগেই পালিয়ে যায়।’
সিরাজুল ইসলাম জানান, পরে প্রতিনিধিরা মুচলেকা দিয়ে ব্যাগ ছাড়িয়ে নিয়ে গেছেন। ভবিষ্যতেও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
অভিযান চালানোর কারণ প্রসঙ্গে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাসপাতালে চিকিৎসকদের ভিজিট করার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কোনও সময় না মেনে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাসপাতালে ভিড় জমায়। এতে রোগী ও চিকিৎসক— সবাইকেই ভোগান্তিতে পড়তে হয়।’
ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য প্রসঙ্গে শেবাচিম হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোদাচ্ছের আলী কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগ দখল করে রাখে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। রোগী দেখার সময় চিকিৎসকদের কাছে গিয়ে নিজ নিজ কোম্পানির ওষুধ লেখার জন্য তারা অনুনয়-বিনুনয় করেন। অনেক অনেক ক্ষেত্রে তারা ওষুধ লেখার জন্য তারা চিকিৎসকদের উপঢৌকনও দিয়ে থাকে।’
মোদাচ্ছের আলী আরও বলেন, ‘শুধু তাই নয়, রোগী চিকিৎসকের চেম্বার থেকে ফেরার পথে চিকিৎসকের লিখে দেওয়া ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানি করে কোম্পানির লোকেরা। তাদের কোম্পানির ওষুধ লিখেছে কিনা তা দেখার জন্য।’ অনেক সময় প্রতিনিধিরা নিজেদের কলম দিয়ে ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ পরিবর্তন করে নিজেদের কোম্পানির ওষুধ লিখে দিয়ে থাকেন বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন-

বাড়িতে ফিরলেও আতঙ্ক কাটেনি রসরাজের

বরিশালে উচ্ছেদ অভিযানে সংঘর্ষ, পুলিশের গুলি

/টিআর/