অভিযান শুরুর পর সোয়াত সদস্যদের লক্ষ্য করে আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় সোয়াতের দুই সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদেরকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সোয়াতের একজন সদস্য জানিয়েছেন, জঙ্গিরা শেষ মুহূর্তে গ্রেনেড নিয়ে সোয়াতের সদস্যদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করে। এ সময় বিকট শব্দে গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। গ্রেনেডগুলো অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল।
ঘটনাস্থলে থাকা বাংলা ট্রিবিউন প্রতিনিধি জানান, ৬টার দিকে অবস্থান নিয়ে বাড়িটির দিকে অগ্রসর হওয়া শুরু করেন সোয়াত সদস্যরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই গুলি-পাল্টাগুলির শব্দ শোনা যায়। ব্যাপক গোলাগুলির মধ্যেই বিকট শব্দে একটা বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর সাড়ে ৬টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তিন সদস্যকে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
এর আগে বুধবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সোয়াত টিম। ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও সঙ্গে সঙ্গে অভিযান শুরু না করে অ্যাসেসমেন্ট করেন সোয়াত কর্মকর্তারা। রাত দুইটার দিকে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের এডিসি ছানোয়ার হোসেন বলেছিলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল অ্যাসেসমেন্ট করছি। কোনদিকে পজিশন নেওয়া যায় সেগুলো পরখ করে দেখছি। এরপরই অভিযান চালানো হবে।’
আরেক সোয়াত কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, জঙ্গি আস্তানাটির পজিশনটা খুব ক্রিটিক্যাল। সামনের দিক দিয়ে আগালে জঙ্গিদের মুখোমুখি পড়তে হয়। এছাড়া আলো-আঁধারি থাকার কারণে ভালো করে দেখাও যাচ্ছে না। ফলে ভালো করে পরখ না করে অভিযান চালানো হবে না।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, একই সঙ্গে ওই ভবনের অন্য বাসিন্দাদের কিভাবে নিরাপদে বের করে আনা যায় তার প্রচেষ্টা চলছে। তা না হলে সাধারণ মানুষের কেউ ক্যাজুয়ালিটির শিকার হতে পারেন। জঙ্গি আস্তানার পাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগযাযোগ করে পরিস্থিতি সম্পর্কে আঁচ করার চেষ্টা চলছে।
সীতাকুণ্ডের প্রেমতলার ‘ছায়ানীড়’ নামের দোতলা বাড়িটি বুধবার (১৫ মার্চ) দুপুর ৩টা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘিরে রাখে। পুলিশ জানিয়েছে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া তিন জঙ্গি জেএমবির সদস্য। ঘটনাস্থলে র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি সিএমপির সোয়াত টিম ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট উপস্থিত রয়েছে। রাত পৌনে একটার দিকে তিনটি গাড়িতে করে ঢাকা থেকে রওনা দেওয়া সোয়াত টিমের কয়েকজন সদস্য পৌঁছান ঘটনাস্থলে। এরপরই পুলিশ আশপাশের সবগুলো বাড়ির বাতির নিভিয়ে দেওয়ার নির্দেশ। এছাড়া পুরো এলাকাটি সিল করে দেওয়া হয়।
এর আগে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, পুলিশ ঢাকা থেকে সোয়াত টিমের অপেক্ষায় আছে। সোয়াত টিম পৌঁছানোর পর সমন্বিত অভিযান পরিচালনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি জানান, জঙ্গি আস্তানায় আটকা পড়া মানুষদের উদ্ধারের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অভিযানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম ও ঢাকার সোয়াত টিম এ বিষয়ে পরিকল্পনা করছে।
পুলিশ জানিয়েছে, দোতলা জঙ্গি আস্তানায় ৩টি ফ্ল্যাটে তিন পরিবারের অন্তত ২০ মানুষ আটকা পড়েছেন। ডিআইজি বলেছেন, ‘ওই বাড়িতে আরও তিনটি পরিবার রয়েছে। তাদের এখনও বের করতে পারিনি বাড়ি থেকে। আমরা বাড়িটিকে ঘিরে রেখেছি। অন্য পরিবারগুলোকে বের করার চেষ্টা চলছে।’ তবে এসব পরিবারকে জঙ্গিরা জিম্মি করে রেখেছে কিনা তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে সীতাকুণ্ডে আরেকটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে দুই জঙ্গিকে আটক করেছে পুলিশ। পৌরসভার আমিরাবাদ এলাকায় নামারবাজারে ‘সাধনকুটির’ নামের একটি বাড়ি থেকে জসিম ও আরজিনা নামের এই দুই জঙ্গিকে আটক করা হয়।তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়েছে। এখান থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি জানিয়েছেন, দুটি জঙ্গি আস্তানার মধ্যে সংযোগ থাকতে পারে।
এ সম্পর্কিত আরও খবর-
- কয়েকটি পরিবারকে জিম্মি করেছে জঙ্গিরা
- জঙ্গি আস্তানা থেকে থেমে থেমে গুলির শব্দ আসছে
- জঙ্গিরা ‘সাধনকুটির’ বাড়িটি ভাড়া নেয় ২৭ ফেব্রুয়ারি
- সীতাকুণ্ডে আটক নারীর কোমরে ছিল আত্মঘাতী ভেস্ট
- সীতাকুণ্ডে দুটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান: আটক ২, অবরুদ্ধ ৩
/এনএল/এএ/