পুলিশ হত্যার আসামি জামায়াত নেতার কাছ থেকে সংবর্ধনা নিলেন আ.লীগের এমপি

জামাল হোসেনের হাত থেকে সংবর্ধনানির্বাচিত হওয়ার পর সংবর্ধনা নিতে গিয়ে বিতর্কে জড়ালেন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ। গত বুধবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তাকে যে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয় তার উদ্যোক্তা পুলিশ খুনের মামলার আসামি একজন জামায়াত নেতা বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বুধবারের ওই গণসংবর্ধনা সভার আয়োজক ছিলেন পোলট্রি ফিড (মুরগির খাদ্য) ব্যবসায়ী জামাল হোসেন। তবে এলাকাবাসী তাকে চেনেন জামায়াত নেতা হিসেবেই। তার পিতা আলহাজ ফরিদ উদ্দিন উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর অর্থের জোগানদাতা হিসেবেও চিহ্নিত। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করার পরপরই বামনডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুট ও ৪ পুলিশকে পিটিয়ে হত্যার যে ঘটনা ঘটে সে হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি এই জামাল হোসেন। এটিসহ মোট ১২টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অথচ সব জেনেও তার হাত থেকে নৌকাখচিত একটি ক্রেস্ট গ্রহণ করেন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা আহম্মেদ। পরে এই জামায়াত নেতাকে পাশে বসিয়ে ওই সংবর্ধনা সভায় বক্তব্য রাখেন তিনি। এরপর এই জামায়াত নেতার বাড়িতেই সদলবলে ভূরিভোজনে অংশ নেন সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা।
এ ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সুশীল সমাজের মধ্যে চলছে ব্যাপক সমালোচনা।

অনুষ্ঠানের মঞ্চে সংসদ সদস্যের পাশে জামাল হোসেন (ডানে)স্থানীয়রা আরও জানিয়েছেন, ওই মঞ্চে চার পুলিশ হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আরেক আসামি আবুল কাশেমও ছিলেন। এ অনুষ্ঠানের ব্যানারে বিশেষ অতিথি হিসেবে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম গোলাম কিবরিয়া, সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিয়ার রহমান ও পৌর মেয়র আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম লেখা থাকলেও তাদের কাউকে দেখা যায়নি।
জামাল হোসেন আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সর্বানন্দ ইউনিয়ন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আফছার আলী। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম, সমাজকর্মী মজিবর রহমান বাদশা প্রমুখ।

জামায়াতের চিহ্নিত একজন অাসামির কাছ থেকে এভাবে সরকারদলীয় সংসদ সদস্যের সংবর্ধনা নেওয়া ও দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে তার বাসায় ভূরিভোজ করায় সমালোচনা চলছে দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের মধ্যে।
কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সামাদ আজাদ তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারদলীয় সংসদ সদস্যের জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আঁতাতসহ গণসংবর্ধনা নেওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’
এ ঘটনা নিয়ে কথা বলার জন্য সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা আহম্মেদের সঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি এই সংসদ সদস্যের মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। একই বিষয়ে জানতে জামায়াত নেতা জামাল হোসেনের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিয়ার রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের চার পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আলহাজ ফরিদ উদ্দিনসহ তার দুই ছেলে জামাল হোসেন ও সাবেক ইউপি সদস্য জহুরুল ইসলাম ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। এছাড়া জামাল হোসেনের বিরুদ্ধে সুন্দরগঞ্জ থানায় নাশকতা ও বিস্ফোরক মামলাসহ ১২টিরও বেশি মামলা রয়েছে।’
ওসি আতিয়ার রহমান আরও বলেন, ‘সংসদ সদস্য লিটন হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবেও ফরিদ উদ্দিন এবং তার দুই ছেলে জামাল ও জহুরুলকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন তারা কারাগারে থাকার পর এখন জামিনে আছেন।’
প্রসঙ্গত, এর আগেও গত ২৫ এপ্রিল রামজীবন ইউনিয়নের রামজীবন হাইস্কুল মাঠে এক সংবর্ধনার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। ওই অনুষ্ঠানে জামায়াতের একাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন।

 

আরও পড়ুন-

নিয়োগ দুর্নীতি: রেলের সাবেক জিএমসহ তিনজনের ৪ বছর জেল

আগামী নির্বাচন বর্তমান সরকারের অধীনেই হবে: হানিফ

/টিআর/জেএইচ/টিএন/