১৯ বছর পর শিবনগর কাঁপলো গুলি-বোমার শব্দে

চাঁপাইনবাবগঞ্জে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামবাসী সবশেষ বোমার শব্দ শুনেছিলেন ১৯৯৮ সালে। সীমান্তবর্তী উপজেলা হলেও এরপর অনেক বছরে বোমা কিংবা গুলির শব্দ শোনেননি তারা।  কিন্তু সন্দেহভাজন জঙ্গি আবুর কারণে দীর্ঘ ১৯ বছর পর আবারও বোমা ও গুলির শব্দ শুনতে হলো তাদের।

জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে শিবনগর এলাকায় বুধবার ভোর থেকে একটি বাড়ি ঘিরে রাখে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। এ খবর রাষ্ট্র হয়ে গেলে আশপাশ থেকে ঘটনা দেখতে ছুটে আসতে শুরু করে কৌতুহলী মানুষ। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া পাহারা ও ১৪৪ ধারা জারির কারণে ঘিরে রাখা বাড়ি থেকে অনেক দূরে  আমবাগানে বসে থাকেন তারা। সেখান থেকেই তারা বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর শুনতে পায় কিছুক্ষণ পর পর গুলি আর বোমা বিস্ফোরণের শব্দ। প্রতিটি শব্দে তাদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা ঝড়ে পড়ে, কী হচ্ছে সেখানে?

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবনগরের জঙ্গি আস্তানা

শিবগঞ্জ উপজেলার চৌদ্দ মাথা এলাকার আশির আলী বলেন, ‘এর আগে ৯৮’ সালে  মাদ্রাসা শিক্ষক মতিউর রহমানের বাড়িতে একবার বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছিলাম। আর এখন আবুর কারণে আবারও বোমার শব্দ শুনছি।’

কী হয়েছিল তখন জানতে চাইলে এ প্রতিনিধিকে তিনি জানান, ‘মাদ্রাসা শিক্ষক মতিউর রহমান গোপনে বোমা ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা করতেন। সেসময় দুর্ঘটনাবশত তার বাড়িতে একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়।’   আর আবু সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সকাল-সন্ধ্যা তাকে আমরা দেখি। তবে সে আমাদের সঙ্গে কথা বলতো কম। তবে মাঝে মধ্যে তার কাছে এলাকার বাইরের লোকজনের আনাগোনা ছিল। কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলতো আমার খালাতো, ফুফাতো ভাই, কখনও বলতো আমার বন্ধু এসেছে। এ নিয়ে আমরাও তেমন গুরুত্ব দিতাম না।’

ত্রিমোহনী চাতরা বাজার এলাকার রহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এমন দল করছে আবু, যে জীবন দিতে পিছপা হচ্ছে না। এটা আবার কোন দল- যে দল মানুষকে মৃত্যুর মুখে নিয়ে যায়।’

শিবনগরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান

আব্বাস বাজার এলাকার দুরুল হুদা বলেন, ‘আমি এই ধরনের অভিযান এর আগে সরাসরি দেখিনি। তাই কাজ বাদ দিয়ে এখানে এসেছি। আমার মতো অনেকেই এখানে এসেছে। তবে আবুর কারণে শিবগঞ্জের দুর্নাম হয়ে গেল।’

আবুর প্রতিবেশী এক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তার স্বভাব-চরিত্র ভালো ছিল। কিন্তু রোজা, ঈদ সে একদিন আগে করতো। আবুর বউ তো এমনভাবে চলাফেরা করতো যে রাস্তায় তার সামনে কে আছে তা বলতে পারতো না। খুব পর্দা করে চলতো।’

জঙ্গি আস্তানা থেকে দ্রুত বেরিয়ে যায় অ্যাম্বুলেন্সটি

উল্লেখ্য, বুধবার সারাদিন জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জোর শিবগঞ্জ উপজেলাধীন শিবনগর এলাকার একটি বাড়ি ঘিরে রাখে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। আবু মিয়া ও তার পরিবার ঘটনাস্থলের ভেতরে ছিল বলে দাবি করেন তারা।এরপর কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) সোয়াট টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছলে সন্ধ্যা সোয়া আবুর মা ও চাচির মাধ্যমে শেষবারের মতো তাকে আত্মসমর্পণের আহ্বান ও তার স্ত্রী ও সন্তানকে বের করে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এতে তারা সাড়া না দেওয়ায় ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাড়িটি লক্ষ্য করে প্রথমে একটানা ও পরে থেমে থেমে গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে মারে সোয়াট টিম। ‘ঈগল হান্ট’ নামের এই অভিযান ওই রাতে অভিযান অসমাপ্ত রাখার পর পরদিন বৃহস্পতিবার আবারও সেখানে গুলি ছোড়ে সোয়াট টিমের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার বিকালে সোয়াটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ অভিযানে চার জঙ্গি নিহত হয়েছে এবং আহতাবস্থায় আবুর স্ত্রী ও সন্তানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আজ শুক্রবার নিহত জঙ্গিদের মরদেহ উদ্ধার এবং গুলি ও বিস্ফোরকের সন্ধানে বাড়িটিতে সোয়াটের তল্লাশি চালানোর কথা রয়েছে।

/বিএল/টিএন/