২০০৮ সালে গাইবান্ধার ফুলছড়ি ডিগ্রি কলেজের বারান্দায় চট বিছিয়ে ৫৫ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদানের মাধ্যমে ‘সেবা শিক্ষালয়ে’র যাত্রা শুরু।
সরেজমিনে দেখা যায়, এই পাঠশালায় প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সব বিষয়ে পড়ানো হয়। তবে পঞ্চম ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য শুধু গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে পড়ানো হয়। শুরু থেকে কখনও কলেজের খোলা মাঠে, কখনও বারান্দায়, আবার কখনও কলেজের ক্লাসরুমে সুবিধাবঞ্চিতদের পাঠদান করানো হয়।
আনোয়ার নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এখানে এসে পড়াশুনা করতে পেরে অনেক ভালো লাগে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পড়ানো হয়।’
রহিমা খাতুন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শুধু লেখাপড়া নয়, এখানে খেলাধুলা ও শারীরিক কসরতের ব্যবস্থাও রয়েছে। সামাজিক কাজেও আমরা অংশ নিই। এখানে লেখাপড়া করতে পেরে অনেক ভালো লাগে।’
স্থানীয় সমাজকর্মী আমিনুল হক বলেন, ‘সুরুজের এই উদ্যোগে মুগ্ধ এলাকাবাসী। তার উদ্যোগে এলাকার পরিবেশই পাল্টে গেছে।’
স্থানীয়রা জানান, আর্থিক সংকটের কারণে শাহ্ আলম সুরুজ এসএসসির পর আর পড়াশুনা করতে পারেননি। এখন ফুলছড়ি ডিগ্রি কলেজে নৈশপ্রহরী হিসেবে চাকরি করেন।
শাহ্ আলম সুরুজ বলেন, ‘আশা ছিল, নিজে লেখাপড়া শিখে একদিন বড় মানুষ হব। কিন্তু অভাব-অনটনের কারণে সে আশা পূরণ হয়নি। এরপর সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে গড়ে তুলি সেবা শিক্ষালয়।’
শাহ্ আলম সুরুজ অভিযোগের সুরে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে আসলেও স্থানীয় প্রশাসন বা সরকারিভাবে কোনও সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি। এ কারণে ‘সেবা শিক্ষালয়’-এর নিজস্ব ভবন ও অবকাঠামো নেই। মেঝেতে বসে লেখাপড়া করতে শিক্ষার্থীদের কষ্ট হয় বলে তারা জানিয়েছে। তাই সরকারি সহায়তা বা শিক্ষানুরাগীদের পৃষ্টপোষকতা পেলে ভবন নির্মাণ করা যেত। এতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা আরও ভালোভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারতো।’
এ ব্যাপারে ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ আবদুল হালিম বলেন, ‘সুরুজের পাঠশালা নিঃসন্দেহে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। তার উদ্যোগে সরকারিভাবে সহযোগিতার চেষ্টা চলছে।’
/এমএ/এসএনএইচ/