বয়স্কভাতা থেকে ইউনিয়ন কর কেটে নিলেন চেয়ারম্যান!

বয়স্কভাতাভোগী নারীসাত শতাধিক নারী-পুরুষের বয়স্কভাতা থেকে ইউনিয়ন কর বাবদ টাকা কেটে নিয়েছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান। ভুক্তভোগীদের প্রত্যেকের কাছ থেকে পঞ্চাশ টাকা করে কেটে নেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর চেয়ারম্যান তা স্বীকারও করেছেন। চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন বলেন, ‘ইউনিয়ন কর বাবদ পঞ্চাশ টাকা করে কেটে নেওয়া হয়েছে।’
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গত ৮ জুন ওই ইউনিয়নের বয়স্ক নারী-পুরুষদের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের বয়স্কভাতার এক হাজার ৫০০ টাকা দেওয়ার সময় প্রত্যেকের কাছ থেকে চকিদার ফি বাবদ পঞ্চাশ টাকা করে কেটে নেওয়া হয়। এই টাকা কেটে নেওয়ার ঘটনায় হতদরিদ্র বয়স্ক নারী-পুরুষরা ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
তাদের অভিযোগ, কয়েক মাস পর বয়স্কভাতার টাকা দেওয়া হলেও চকিদারের বেতন দেওয়ার কথা বলে চেয়ারম্যান প্রত্যেকের কাছ থেকে পঞ্চাশ টাকা করে কেটে নিয়েছেন।
আমেনা বেওয়া তার ভাতা উঠিয়ে নেওয়ার পর বলেন, ‘আমি বিধবা মানুষ। কাজ করবার পারি না। সরকার যে বয়স্কভাতা দেয়, তাহে দিয়া কোনও রকমে খায়া বাঁচি আছি। সেই টাকারও যদি চেয়ারম্যান কাটি নেয়, তাইলে হামাক ভাতা দিয়া কি লাভ।’
আমেনা বেওয়া জানান, যাতায়াত বাবদ খরচ হয়েছে পঞ্চাশ টাকা, চেয়ারম্যান চকিদারের ফি বাবদ কেটে নিয়েছেন পঞ্চাশ টাকা। এখন তার কাছে এক হাজার ৪০০ টাকা রয়েছে। এই টাকা দিয়েই তাকে পরবর্তী ভাতা না পাওয়া পর্যন্ত চলতে হবে।
কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের মমেনা বেগম, একই গ্রামের তৌছির আলী ও নাজেমুদ্দি বলেন, 'আমরা ভাতা নিবার যায়া দেখি হামার টাকা থাকি ৫০ টাকা করি কম দিবার লাগছে। আমরা আপত্তি জানাইলে চেয়ারম্যান কয় চৌকিদারের বেতন দেওয়ার জন্য টাকা কাটা হইছে।’

কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন বয়স্কভাতা থেকে পঞ্চাশ টাকা করে কেটে নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ইউনিয়ন কর বাবদ এ টাকা নেওয়া হয়েছে। তবে তা বয়স্কভাতা থেকে নয়, চকিদাররা প্রত্যেকের বাড়িতে গিয়ে নিয়ে এসেছেন।’

এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. এমদাদুল হক প্রামাণিক বলেন, ‘বয়স্কভাতা থেকে কোনও টাকা কেটে নেওয়ার এখতিয়ার চেয়ারম্যানের নেই। এটা করা হলে তা অত্যন্ত অমানবিক ও নিয়ম বহির্ভুত কাজ হয়েছে।’

এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবেন্দ্রনাথ উরাঁও এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে দেখবো কী হয়েছে।’

/এমএ/এসএমএ/