এখনও খোলা আকাশের নিচে লংগদুর দুর্গতরা

লংগদুতে অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িদের বাড়িঘররাঙামাটির লংগদুতে যুবলীগ নেতা ও মোটরসাইকেল চালক নুরুল ইসলাম নয়ন হত্যাকাণ্ডের জের ধরে গত ২ জুন পাহাড়ি ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও তৈরি হয়নি তাদের ঘরবাড়ি। খোলা আকাশের নিজে অথবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে কোনোরকমে থাকছেন তারা। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দ্রুত পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও দ্রুত পুনর্বাসনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
লংগদু সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুলিন মিত্র আদু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা কখনও বলিনি যে, আমরা ত্রাণ নেবো না। সরকারের উচ্চ মহল থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। আমরাও আশ্বস্ত হয়েছি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আমাদের অবস্থা শোচনীয়। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তো কিছুই নাই। আমরা চাই, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সঠিকভাবে পুনর্বাসন করা হোক। তার আগ পর্যন্ত রেশনের ব্যবস্থা করা হোক।’
লংগদুতে পাহাড়িদের বাড়িঘরে আগুনলংগদু উপজেলা জনসংহতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনি শংকর চাকমা বলেন, ‘সরকার বারবার আশ্বস্ত করার পরও কোনও ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না। বৃষ্টির কারণে এখন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের আশ্রয় নিতে হচ্ছে নিজেদের আত্মীয়দের বাড়িতে। সবাই মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাই আমরা চাই, ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক।’ তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকদিন আগে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ক্ষতিপূরণের যে ঘোষণা দিয়েছেন তা ক্ষতি ও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আমাদের চাওয়া, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য উপযুক্ত পরিমাণে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক।’
লংগদুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আজ (১৭ জুন) পাহাড়িদের বাড়িঘরে আগুন লাগার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল। ওই দলের প্রধান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কামাল উদ্দীন তালুকদার আমাদের জানিয়েছেন, সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। আমরাও আশা করছি, শিগগিরই এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
লংগদুর যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়নউল্লেখ্য, গত ১ জুন লংগদুর যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়নকে হত্যা করে দীঘিনালা-খাগড়াছড়ি সড়কের চারমাইল এলাকায় তার মরদেহ ফেলে রাখে সন্ত্রাসীরা। পরদিন ২ জুন নয়নের মরদেহসহ শোক মিছিল নিয়ে উপজেলা মাঠে যাওয়ার সময় পাহাড়িদের বসতিতে আগুন দেওয়া হয়। এতে পাহাড়িদের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি পুড়ে যায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ওইদিন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। পরের দিন তা প্রত্যাহার করা হয়
এ ঘটনায় ৩ জুন লংগদু থানা পুলিশ বাদী হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩শ জনের নামে মামলা দায়ের করে। পরে ১১ জুন আরও ৯৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত তিন শতাধিক ব্যক্তির নামে মামলা করেন কিশোর চাকমা নামের এক ব্যক্তি।
এদিকে, শুক্রবার (৯ জুন) খাগড়াছড়ির দিঘীনালা থেকে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হলে তারা নয়ন হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেয় বলে জানায় পুলিশ। নয়নের মোটরসাইকেলটিও দিঘীনালার মাইনী নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার দুই ব্যক্তি রমেল চাকমা ও জুনেল চাকমা পুলিশকে জানিয়েছে, মোটরসাইকেল ছিনতাই করার জন্যই তারা নয়নকে হত্যা করে। তবে নয়ন হত্যাকাণ্ডের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে মোটরসাইকেলটি কোথাও নিয়ে পারেনি হত্যাকারীরা। সেটি বিক্রি করতে না পেরে তা মাইনী নদীতে ফেলে দেয় তারা।

আরও পড়ুন-

বান্দরবানে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখনও অনেক পরিবার

রাঙামাটির আশ্রয়কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানি ও শিশুখাদ্যের সংকট

/টিআর/