ঈদেও পাহাড়ে কান্না





রাঙামাটির আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ঈদ উদযাপন। ছবি- প্রতিনিধি

রাঙামাটির আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে একদিকে যখন চলছিল প্রশাসনের উদ্যোগে ঈদের খাবার বিতরণ তখন হারিয়ে ফেলা পরিবার সদস্যদের কথা মনে করে অনেকেই নীরবে ফেলছিলেন চোখের জল। সোমবার ঈদুল ফিতরের দিনে রাঙামাটির অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। 

রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোর ঠাঁই এখন নিকটবর্তী অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে। সেখানেই আজ কেটে গেলো হতাহতদের পরিবারগুলোর ঈদ। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ঈদের খাবারের আয়োজন করা হয়। জেলায় স্মরণকালের এই ভয়াবহ পাহাড় ধসে এ পর্যন্ত ১২০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। 




আশ্রয়কেন্দ্রে জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান। ছবি- প্রতিনিধি

মা-বাবা হারানো ছয় বছরের মিম ও দেড় বছরের সুমাইয়ার চাচা কাউছার কান্না জড়িত কণ্ঠে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘অনেকেই অনেক কিছু দিচ্ছেন। কিন্তু যে ক্ষতি আমাদের হয়ে গেল তাতো আর পূরণ হওয়ার নয়। আমাদের জীবনে ঈদ মানেই কষ্ট, ঈদের আনন্দ হবে না কখনও।’

আশ্রয়কেন্দ্রে জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান। ছবি- প্রতিনিধি

চার বছরের রাকিব ও দুই বছরের ফারিয়ার মা রেখে চলে গেছেন অনেক আগেই আর বাবা মারা গেলেন মাটিচাপায়। অবুঝ দুই শিশুর ঠাঁই এখন ছোট চাচা অলি আহমদের কাছে। কেমন কাটছে ঈদ এমন প্রশ্নে কাঁদতে কাঁদতে অলি বলেন, ‘ছোট দুই অবুঝ সন্তান মাঝে মাঝেই মা বাবার শোকে কেঁদে উঠে। তাদের বুঝাতে পারি না তাদের মা-বাবা আর ফিরবে না। ওরা ঈদের আনন্দ কী তাও বোঝে না। আনন্দের ঈদ আমাদের জন্য কষ্টই বয়ে এনেছে।’

এদিকে, আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষগুলোর সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে সেখানে ছুটে গিয়েছেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান। আরও উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরীসহ আরও অনেকে।




আশ্রয়কেন্দ্রে ঈদ উদযাপন। ছবি- প্রতিনিধি

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রের সবার সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে প্রশাসনের সবাই ছুটে এসেছেন। আমরা সবার সঙ্গে বসে খাচ্ছি, গল্প করছি। এখন আমরাই ওদের স্বজন। এটা তো ঠিক, নিজ বাড়িতে থেকে ঈদের যে আনন্দ তারা উপভোগ করত, তা আশ্রয়কেন্দ্রে সম্ভব না। তবে আমরা চেষ্টা করছি তাদের পাশে থেকে ঈদের আনন্দটা ভাগাভাগি করতে। ঈদের দিন প্রতিটি কেন্দ্রেই সেমাইসহ অন্যান্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

 /টিএন/ আপ-এনআই